পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড কারণে ভগীরথ এইস্থান ত্যাগ করিয়া বাহাদুর পুরের টুকগ্রামে চলিয়া যান। ভগীরথের নামে তথায় একটি তালুক আছে। ভগীরথের চতুর্থ পুত্রের নাম ব্ৰজমোহন, তৎপুত্র শ্রীযুক্ত রূপচরণ রাউৎ মহাশয়ের পুত্র শ্রীযুক্ত দ্বারকানাথ রাউৎ এই বিবরণটি প্রদান করিয়াছেন। ছোটলিখার আদিত্য বং শ্রীহট্টে আগমন ছোটলিখার আদিত্যগণ কৌশিক গোত্রীয়। প্রায় তিনশত বৎসর পূৰ্ব্বে মিহির বংশীয় হররাম অযোধ্যা প্রদেশে বাস করিতেন। তিনি ধনবান ব্যক্তি ছিলেন এবং কোন কারণে তত্রত্য নবাব কর্তৃক অত্যাচারিত হইয়া স্ববংশীয় কয়েকজন আত্মীয় এবং পুরোহিত নিশাপতি সহ তদেশ ত্যাগ করতঃ তিনি এতদ্দেশে আগমন করেন। তিনি প্রথমতঃ নদীয়াতে উপস্থিত হন। এইস্থানে তাহার এক আত্মীয় পীড়িত হইয়া পড়িলে তত্ৰত্য সুখময় সেন নামক জনৈক বৈদ্য দ্বারা তাহার চিকিৎসা করাইয়া ছিলেন। আত্মীয় আরোগ্য লাভ করিলে, সুখময় বিশেষরূপে পুরস্কৃত হন। নদীয়াতে তিনি বিপদাপন্ন হইয়া পড়ায়, এ স্থানে অবস্থিতি করা সুবিধাজনক মনে করিলেন না এবং অন্যত্র যাইতে ইচ্ছা করিলেন। চিকিৎসক বলিয়া সুখময় সঙ্গে থাকিলে বিদেশে ব্যাধির ভয় বহুপরিমাণে বিদূরিত হইবে বলিয়া তিনি ইহাকে সঙ্গে লইতে ইচ্ছা করিলেন ও তাহাকে প্রলোভিত করিতে লাগিলেন। সুখময়ের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না, হররামের মনুরোধে ও তাহার সহৃদয়তায় মুগ্ধ হইয়া তিনি তদীয় অনুষঙ্গী হইতে সম্মত হইলেন । এই সময় তথায় আকবরশাহ নামক জনৈক ফকিরের সঙ্গে ইহাদের দেখা হইল; আগন্তুকগণের অবস্থা ও অভিপ্রায় অবগত হইয়া আকবরশাহ তাহাদিগকে আশ্বাস দিয়া তাহার অনুসরণ করিতে বলিলেন । আশ্বাসে উৎসাহিত হইয়া তাহারা সেই তেজস্বী ফকিরের সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। ফকির তাহাদিগকে লইয়া কিছুদিন পর্য্যটনের পর শ্রীহট্ট জিলায় উপস্থিত হইলেন। শ্রীহট্টের তরফ মোসলমানগণের কাছে “বার আউলিয়ার মুলুক” বলিয়া খ্যাত । আকবর লইয়া তরফে আসিলেন, হররাম সদলে তরফের হাসারগাও নামক স্থানে অবস্থিতি । কিন্তু তথায় তিনি অধিক দিন থাকলেন না। ফকিরের নির্দেশমতে নিজ পুরোহিতাদি সহ তথা হইতে "লিখা” নামক স্থানে চলিয়া আসিলেন। তাহার অনুসঙ্গী আত্মীয়গণ এবার তাহার অনুসরণ করিলেন না, তাহারা সেই স্থানেই অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। ইহারাই হাসার গায়ের আদিত্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং হররাম স্বয়ং ছোটলিখার আদিত্য বংশের আদিপুরুষ। যখন হররাম পুরোহিত ও চিকিৎসক সহ ছোটলিখায় আগমন করেন, তখন এদেশ জঙ্গলাকীর্ণ ছিল; ভদ্রলোক মধ্যে দাম বংশীয়গণ তথায় বাস করিতেন। যে কিছু আবাদি ভূম্যাদি তাহাদেরই অধিকৃত ছিল। প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রাণবধের ষড়যন্ত্র হররামের অর্থবল অল্প ছিল না, ফকিরের পরামর্শে তিনি সেই অর্থে জঙ্গল আবাদ করাইয়া তাহা অধিকার করিয়া লইতে লাগিলেন। প্রথমে এই বিষয়ে কাহারও বিশেষ লক্ষ্য হয় নাই, পরে দামবংশীয়গণ দেখিতে পাইলেন যে, হররাম বিস্তীর্ণ ভূভাগ আয়ত্ত করিয়া লইয়াছেন। তখন তাহাদের ঈর্ষা উপজাত হইল, কিন্তু ইহার কোন প্রতীকার করিতে পারিলেন না। তাহারা ফকির-সংরক্ষিত হররামের কোনরূপ ক্ষতি করিতে না পারিয়া, উভয়কে বধ করিতে ষড়যন্ত্র