পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড জোড়ারায় ও দুল্লভদাস জোড়ারায় ও দুৰ্ল্লভদাস পিতৃ অর্জিত সামান্য অর্থই প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। উদ্যোগী পুরুষ কি না করিতে পারে? উদ্যোগী পুরুষের দ্বারে লক্ষ্মী বাধা থাকেন, ইহারা তাহার উদাহরণ এ জিলায় সুন্দর রূপেই দেখাইয়া গিয়াছেন। সামান্য অর্থ লইয়া সততার সহিত ব্যবসায় আরম্ভ করিয়া, জোড়ারায় ধন উপাৰ্জ্জন করিতে লাগিলেন। বণিগৃত্তি অবলম্বনে অচিরকাল মধ্যেই শ্রীহট্টের মধ্যে তিনি বিখ্যাত ধনী বলিয়া পরিগণিত হইলেন। তিনি ধনের সদ্ব্যবহার করিতেন, তাহার দাতৃত্বে সৰ্ব্বসাধারণ যেমন উপকৃত হইত, রাজশক্তিও তেমনি নানা বিষয়ে তাহার সহায়তা গ্রহণ না করিয়া পারিতেন না। এমন কি, মুর্শিদাবাদের নবাব তাহার যোগ্যতাদৃষ্টে এবং তদত্ত দুপ্রাপ্য উপহার রাজি প্রাপ্ত হইয়া, তাহাকে শ্রীহট্টের নবাবি প্রদান করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে।৩ বৃহত্তম পলওয়ার নৌকাযোগে দূরবত্তী প্রদেশে বাণিজ্য ব্যপদেশে তাহাকে ভ্রমণ করিতে হইত, তাহার ঐশ্বৰ্য্য ও বাণিজ্য সম্বন্ধে গ্রাম্যগীত এখনও এ অঞ্চলে শুনিতে পাওয়া যায় ৪ ইহার পুত্র রাধাকৃষ্ণ রায় নিঃসন্তান মৃত্যুমুখে পতিত হন; সুতরাং জোড়ারায়ের বংশ নাই। দুৰ্ল্লভদাস অজ্জিত ধনের দ্বারা প্রভূত ভূসম্পত্তি ক্রয় করেন এবং শ্রীহট্টের অন্যতম প্রধান ভূম্যধিকারী রূপে গণ্য হন। একদা কোন মহালের রাজস্ব দান কালে, দেওয়ান মাণিক চাদের সুকৌশলে সেই মহাল তাহার হস্তচু্যত হইয়া পড়িয়াছিল, এবং তজ্জন্য উভয়ের মধ্যে এক বৃহৎ মোকদ্দমা উপস্থিত হইয়াছিল বলিয়া জানা যায় ৫ পলডর, বড়লিখা, রাতাবাড়ী, ভাঙ্গা, গোলাবাড়ী প্রভৃতি স্থানে তাহার ভিন্ন ভিন্ন বহুতর কাছারী ছিল: তন্মধ্যে বড়লিখাতেই তিনি অধিক সময় বাস করিতেন বলিয়া ইহা তাহার আবাসস্থান রূপে পরিগণিত হইয়াছিল। এই বাড়ীর সম্মুখবত্তী দীর্ঘিকা অদ্যাপি দুৰ্ল্লভদাসের নাম ঘোষণা করিতেছে। তদ্ব্যতীত তাহার কৃত দুবাঘ প্রভৃতি স্থানের প্রাচীন দীঘীগুলি এখনও "দুলভ দাসী দীঘী" নামে খ্যাত আছে। ঢাকাদক্ষিণস্থ ঠাকুরবাড়ীর সন্নিকটবৰ্ত্তী কাকিছড়ার উপরিস্থিত জীর্ণ দশাপ্রাপ্ত সেতুটিও তাহার কৃত এবং "দুলভ দাসী পুল" নামে খ্যাত। তিনি ভিন্ন ভিন্ন কাছারীতে দেবতা স্থাপন করিয়া স্বীয় ধৰ্ম্মনিষ্ঠার পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন। একবার অতি আড়ম্বরের সহিত তিনি শ্রীহট্টের বিশিষ্ট ও বিখ্যাত নৌকাপূজা সম্পাদন করেন। এই নৌকা পূজায় তিনি সুবর্ণ নিৰ্ম্মিত দশ সহস্র বিল্বপত্র দ্বারা দেবীর অচ্চনা করিয়াছিলেন। এই স্বর্ণ বি-দল ব্যতীত উপস্থিত বহু সংখ্যক ব্রাহ্মণের প্রত্যেককেই স্বর্ণ উপবীত প্রদান করা হয়।৬ ঢাকাদক্ষিণের শ্ৰীমহাপ্ৰভু বিগ্রহকে তিনি প্রভুত উপহারের সহিত প্রতিবৎসর স্বর্ণ-উপবীত ও স্বর্ণ নিৰ্ম্মিত মোহন মালা নিয়মিত রূপে প্রদান o. (3Tại TRI Gị RHIfI *fr#RIIfR=FI, Röf#{3ị “A short History of the Purkaistha Family" FITTE FISICEI ffRS SITTE- “He was noted for hig public spirit and magnanimity and received the little of Nawab." ৪. “ধন্যি জোড়াবায়, বৈঠার আগে ঘুঙ্গুর দিয়া, পলওয়ার দৌড়ায় ।" -ইতি সারিগণ । ৫. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ৫ম খণ্ড ১ম অধ্যায়ের এক ফুট নোটে উদ্ধৃত একখানা ইংরেজী রিপোর্টে এই মোকদ্দমার উল্লেখ আছে, তাহা এতদুপলক্ষে দ্রষ্টব্য। ৬. দুৰ্ল্লভদাসের এ সমস্ত পুণ্যজনক কাৰ্য্যমূলে “কুলের প্রদীপদুলভদাস” ইতি বাক্যের উৎপত্তি হয়। এ অঞ্চলে কোন বংশের মধ্যে কেহ বিখ্যাত হইলে সে “কুলের প্রদীপ দুলভদাস” হইয়া মণিয়া এখনও গ্রাম্য লোকে ললিয়া থাকে । স্থল বিশেষে অন্য ভাবাথেও ইহার ব্যবহার হইয়া থাকে, কোন দোষীর দোষের প্রতিবাদ লা প্রতীকার না হইলেও বলা হয় যে, তিনি “কুলের প্রদীপ দুলভদস” না কি?