পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড সন্ধ্যার পর অঙ্গনে এক বিস্তৃত চন্দ্ৰাতপ তলে লণ্ঠনাদির আলোতে অর্থপ্রদর্শিত হইল। তদীয় রায় সেই রাশীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার অপর পার্শ্বে দণ্ডয়মান হইয়া, তাহাকে দেখিতে পাইতেছেন কিনা, জননীকে জিজ্ঞাসিলে। মা বলিলেন, “বাপ, আমার সাধ মিটিয়াছে, টাকা আর দেখিতে চাহি না, এদিকে আস, তোমার চাদমুখ দেখিব।” হুকমত রায়ের জমিদারী বহু বিস্তৃত ছিল, অপর মহাল ব্যতীতই, (উত্তর শ্রীহট্ট, করিমগঞ্জ ও দক্ষিণ শ্রীহট্টের) ষোলটি পরগণায় নিজ নামীয় ১৩টি, পিতৃ নামীয় ৯টি এবং জ্যেষ্ঠতাত নামীয় ২টি, এই ২৪টি তালুক তাহাদের প্রভুত্বের নিদর্শন স্বরূপ অদ্যাপি তাহাদের নামে আখ্যাত হইতেছে ॥১০ স্বনামধন্য ব্যক্তিদের নামেও তালুকের নামকরণ হইয়াছিল, ইহার বহু উদাহরণ পাওয়া যায়। পরবর্তী কথা হুকমত রায়ের একমাত্র পুত্রের নাম লবকৃষ্ণ রায়। সাহেব রায়ের পুত্র দুইজন ছিলেন, তাহাদের নাম শরৎচন্দ্র ও গৌরচন্দ্র। এ সংসারে কিছুই স্থায়ী নহে, প্রাণপাত পূৰ্ব্বক লোকে যে ধন অৰ্জ্জন করে, তাহারও ঐ অবস্থা। কিন্তু এই অস্থায়ী ধনের সদ্ব্যবহারে সৎকাৰ্য্য সম্পাদিত হইলে, তাহাতে যে কেবল পরোপকার ও দাতার কীৰ্ত্তিমাত্র ঘোষিত হয় তাহা নহে, ঐ কাৰ্য্যটি সুদূরকাল ব্যবধানে উদাহরণরূপে দণ্ডায়মান হইয়া পরবর্তীকে প্রোৎসাহিত ও জনহিতে নিয়োজিত করিয়া থাকে। ঐশ্বৰ্য্যের ক্ষণস্থায়িত্বের দৃষ্টান্ত হুকমত রায়ের মৃত্যুর পরেই তদ্বংশীয়গণ বিলক্ষণরূপ হৃদয়ঙ্গম করিতে সমর্থ হন । লবকৃষ্ণের কোন পুত্র সন্তান ছিল না, সম্পত্তি সংরক্ষণের বুদ্ধিও ছিল না; এরূপ অবস্থায় যাহা ঘটে, তাহাই হইল; বহু সম্পত্তি প্রকাশ্য নীলামে হস্তচু্যত হইয়া পড়িল। হস্তচু্যত এ সম্পত্তির উদ্ধারার্থ বৃথা বহু সম্পত্তি প্রকাশ্য নীলামে হস্তচু্যত হইয়া পড়িল। হস্তচু্যত ঐ সম্পত্তির উদ্ধারার্থ বৃথা বাহুল্য ব্যয়ে নগদ বিত্ত নষ্ট হইয়া গেল। ধনীর সন্তান এইরূপ দীনদশায় হঠাৎ পতিত হইয়া পৈতৃক বাসস্থান পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক বড়লিখাস্থিত কাছারীতে আগমন পূৰ্ব্বক ইহাকেই বাসবাটিরূপে পরিগণিত করিলেন । মনোভঙ্গে লবকিশোরের মৃত্যু হইল, গৌরচরণেরও মৃত্যু ঘটিল; শরচ্চন্দ্র ম্ৰিয়মাণ হইয়া মানভাবে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। অতঃপর মৃতাবশিষ্ট শরচ্চন্দ্রকে গবর্ণমেন্ট পাটওয়ারি পদ প্রদান করেন; ইহাতে এই ধনী সন্তানের ভরণ-পোষণের যৎকিঞ্চিৎ সাহায্য হইত। পাটওয়ারিগণ পুরকায়স্থ পদবি ধারণের অধিকারী ছিলেন, পূৰ্ব্বেও বলা গিয়াছে। ১০. এই তালুকগুলির নাম, নম্বর এবং যে যে পরগণায় উহা অবস্থিত, তাহার কথা নিম্নে লিখিত হইলঃ ১. জোড়ারায় নামীয় তালুক-পং ইটা, নং ৪২৯; পং ঢাকাউত্তর, নং ১৫৭ ৷ ২. দুর্লভদাস নামীয় তালুক-পং ছোটলিখা, নং ১১৮; পং বড়লিখা, নং ৪৫; পং ফুরকাবাদ, নং ২৪২; পং ঢাকাদক্ষিণ, নং ৪২৭ এবং ৪৮৯; পং মোহাম্মদপুর, নং ২২; পং চাপঘাট, নং ১৮২; পং পঞ্চখণ্ড, নং ৫২৫; পং পলডর নং ১ । ৩. হুকমতরায় নামীয় তালুক-পং বড়লিখা, নং ৩৩; পং ইয়াকুব নগর, নং ২১; পং দুবাগ, নং ১: পং চাপঘাট, নং ১৫৯১, ১৫৫৫, ১৫৫৯; পং-কুশিয়ার কুর, নং ৩০৯, পং এগারশতী, নং ২১১ এবং ২৩৫; পং ডেওয়াদি, নং ২০৯; পং ঢাকাদক্ষিণ, নং ৩৯৫ এবং ৪৭১; পং নারাপিং, নং ১০৯; মোট ২৪টি । এতন্মধ্যে পং ফুরকাবাদের "তাং দুৰ্ল্লভদাস" নিষ্কর তালুক ।