পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : বড়লিখার পুরকায়স্থ কথা এবং প্রতাপগড়ের বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৭৭ “দাখিল" করেন। ৫৫নং তালুকটিও এইরূপই শ্রীহট্টের “বাবু মুরারি চাদ" ক্রয় করতঃ খারিজ দাখিল করেন। কিন্তু ঐ তালুকটি পরে তাহা হইতে চৌধুরীরা ক্রয় করিয়া আনেন। তদবধি এই তালুকাত “খারিজ দাখিল” নামে খ্যাত হয়। পূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে, “মৌজাওয়ারি” কাগজে “সোয়াই নীলাম" ইত্যাদি লিখিত হইয়াছিল। “সোয়াই” (বাদে) শব্দ থাকায় জানা যায় যে সেই কাগজে যে পরিমিত ভূমির উল্লেখ আছে, তাহা "নীলাম ও খাস ও খারিজ দাখিল" সংজ্ঞক উপরোক্ত ৭টি সুবৃহৎ তালুকের অন্তর্গত নহে। এবং "নজর আন্দাজ" অর্থাৎ দৃষ্টির সাহায্যে আনুমানিকরুপে উহার ভূ-পরিমাণ লিখিত হইয়াছে। م প্রতাপগড়ে এতদবশিষ্ট যে দশসনা ভূমি ছিল, ইহার পরে হালাবাদি জরিপান্তে তৎসমস্ত সম্পত্তিও চৌধুরীদের করায়ত্ত হয়। প্রতাপগড়ের পূৰ্ব্ব ভূম্যধিকারিগণ দক্ষিণ দিশ্বত্তী কুকি সৰ্দ্দারদিগকে বাৎসরিক একটা “নজর” দিতেন। এই সময়ে সেই প্রথামতে ইহাদিগকেও কুকি সর্দারদের "নজর" যুগাইতে হইত। পরে ঘটনা ক্রমে এই বাৎসরিক নজর প্রেরণ বন্ধ হয় । কুকিরাজের নজর গ্রহণ একদা চৌধুরীরা তাহাদের জনৈক মোহরের দ্বারা নজর প্রেরণ করেন: নজরের দ্রব্যমধ্যে কয়েকটা কুকুর, কয়েক সের শুষ্ক মৎস্য ও চিনি, অৰ্দ্ধমণ পরিমিত লবণ এবং কয়েক সের সাদা তামাকই প্রধান ছিল । দ্বিভাষী সহ মোহরের নজর উপস্থিত করিলে, রাজা ও রাণী “পুঞ্জির” (পাড়ার) লোকদিগকে "ণ" বাদ্যে আহবান করিয়া, উভয়ে একাসনে উপবেশন পূৰ্ব্বক উপহার গ্রহণ করিলেন। রাজা ও রাণী লবণ মাত্র রাখিয়া অপর দ্রব্য বিলাইয়া দিলেন। কুকিগণ উৎকট উল্লম্ফন নৃত্যে চিনি মুখে লইয়া ফুৎকার সহকারে তাহা একে অন্যের উপর ফেলিতে লাগিল! চিনির এই সদ্ব্যবহার দৃষ্টে মোহরেরটি বিস্মিত না হইলেও, তাহদের উন্মত্ত উল্লম্ফন হুঙ্কারে আতঙ্কিত হইয়াছিল। তাহার পর ইন্দুর ও বৃহৎ ভেক ইত্যাদির বিচিত্র "সিধা” পাইলে, মোহরের রন্ধনের উপলক্ষে পলাইয়া আসিয়াছিল । ইহা হইতে উলঙ্গ লুশাইদের বিচিত্র ব্যবহারের বর্ণনা শুনিয়া ও সিধার সংবাদ পাইয়া পরবর্ষে কেহই উপহার লইয়া যাইতে স্বীকৃত হয় নাই। এইরূপে উপহার দেওয়া বন্ধ হইলে, কুকিগণ ক্ষেপিয়া তৎপ্রতিশোধ মানসে ১২৩৩ সালে প্রতাপগড়ের কয়েকটি কাঠুরিয়াকে পৰ্ব্বত মধ্যে নিহত করে। ইহাই কুকিদের শ্রীহট্ট জিলায় সৰ্ব্বপ্রথম উৎপাতের সংবাদ ॥১৭ ইহার পর হইতেই কুকিরা লোকের উপর উৎপাত করিতে আরম্ভ করে; যত বারই তাহারা প্রতাপগড় দিয়া আক্রমণের চেষ্টা করিয়াছে এবং গবর্ণমেণ্ট তৎপ্রতিকারার্থ যত্ন করিয়াছেন, ততবারই এই চৌধুরী বংশীয়গণ রসদাদি যুগাইয়া গবর্ণমেণ্টের সহায়তা করিয়াছেন। (সে সকল আক্রমণ সংবাদ পূৰ্ব্বাংশে বলা গিয়াছে।) ১৭. সরকাৰী ইতিহাসে এই কাঠুরিয়া হত্যার সংবাদটি মাত্র আছে; কিন্তু কি কারণ বশতঃ কুকিবা ক্ষেপিয়াছিল, জমিদারদের উপহার প্রেরণ কেন বন্ধ হইয়াছিল, ইত্যাদি বিবরণ তাহাতে নাই । এই কাঠুরিয়া হত্যাল অনুসন্ধান জন্য গবর্ণমেণ্ট লোক পঠাইলে, কুকিরা ধরিয়া রাখে; গবর্ণমেণ্ট টাকা দিয়া সেই লোক মুক্ত করেন। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশের ২য় ভাগ ৫ম খণ্ড ২য় অধ্যায় এই কথা উল্লেখিত হইয়াছে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-তৃতীয় ভাগ)-১২