পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড ব্যক্তিগত বিবরণ পূৰ্ব্বোক্ত কেশব রামের পুত্র হুলাস রাম অতিশয় শ্রীমান পুরুষ ছিলেন, দক্ষিণ পৰ্ব্বতে ত্রিপুরাধিপতির জনৈক কুটুম্ব-কৰ্ম্মচারীর সহিত তাহার দেখা হয়, তিনি ইহাকে অবিবাহিতা জনৈকা রাজকন্যার যোগ্য বর মনোনীত করিয়া রাজধানীতে লইয়া যান। কৃতদার হুলাসরাম বিবাহে অসম্মত হইলে তাহাকে তথায় বহুদিন আবদ্ধ করিয়া রাখা হয়; পরে যখন দুর্গোৎসবের আনন্দ কোলাহলে রাজধানী মুখরিত হইয়া উঠে, যখন তিনি মুক্তি কামনায় ও স্বগৃহে দেবীপূজার কথা স্মরণে ক্ৰন্দন করিতে থাকেন, দেবী-কৃপায় তখন তিনি মুক্ত হন; তিনি ও তাহার ভ্রাত আকুতরাম অতি বদান্য ছিলেন। পাণিশালীর আখড়াবাসী কোন বৈষ্ণব ভক্তি শাস্ত্রে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করেন, ইহার গুণের পুরস্কার স্বরূপ তিনি তাহাতে চারিসহস্র টাকা মূল্যের ভূসম্পত্তি দান করেন ও তাহার শিষ্যত্ব স্বীকার করেন। প্রতাপগড়ের ফরিদকোণা নিবাসী মুরাদ মোহাম্মদ নামক ব্যক্তি এ অঞ্চলে সৰ্ব্বপ্রথম হজব্রত উদযাপন করিয়া আসিলে, লোকের ধৰ্ম্মোৎসাহ বৰ্দ্ধনার্থ তাহাকে প্রায় এক হাল পরিমিত ভূমি দান করিয়াছিলেন। এই সকল ভূমি ব্যতীত এই ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রদত্ত ব্ৰহ্মত্র এবং সন্নিকটবৰ্ত্ত কানাইলাল দেবতার দেবত্র অদ্যপি তাহাকে দাতৃত্বের প্রমাণ দিতেছে। আকুতরাম বহু অর্থ ব্যয়ে ও ক্লেশে নৌকাযোগে একবার বৃন্দাবন দর্শন করিয়া আসেন; গমনাগমনে তাহার আট মাস কাল লাগিয়াছিল। মায়ারাম ও মাণিক্যরাম ভ্রাতৃদ্বয় অতি প্রতাপান্বিত ছিলেন, ইহাদের শাসন ভয়ে দেশে কেহই কোন অন্যায় কাৰ্য্য করিতে পারিত না । দেশে চোরের উপদ্রবের নামও ছিল না; রাত্রে ঘরে দোয়ার খোলা রাখিয়া নিরুদ্বেগে সকলে নিদ্রা যাইবে, এই কথা তাহারা প্রচার ও তাহা কাৰ্য্যে পরিণত করেন। তাহারাও প্রায় সহস্র মুদ্রা মূল্যের ব্ৰহ্মত্র দান করিয়াছিলেন। মাণিক্যরাম ঢাল, তলওয়ার ও বল্লম লইয়া বাড়ী হইতে প্রতাপগড়ের কাছারীতে যাইতেন, বীরবেশে সজ্জিত থাকিতে ভালবাসিতেন । সিঙ্গিছড়া নামক একটি ক্ষীণকায় পাৰ্ব্বত্য স্রোতস্বতীর গতিপথ পরিবর্তন করিয়া দিয়া তিনি সাধারণের চাষী ভূমির উন্নতি বিধান করেন। শঙ্কর রাম ধৰ্ম্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। যখন কানু রাম, ঠাকুর শান্ত রাম নামক বৈষ্ণবের ভক্তি ও ধৰ্ম্মানুরাগে মোহিত হইয়া তাহাকে গৃহে লইয়া আসেন,১৮ যখন শান্ত রাম তথায় মধুর হরি সংকীৰ্ত্তন আরম্ভ করেন, ইনিই তখন আকৃষ্ট হইয়া তাহার কাছে সৰ্ব্বপ্রথমে বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষিত হইয়াছিলেন। এবং তাহার পরেই স্বগৃহে বিশ্বম্ভর চন্দ্র স্থাপন করেন। বিশ্বম্ভরই এ বংশের কুলদেবতা। মায়ারামের পুত্র কৃষ্ণপ্ৰসাদ ও বিষ্ণুপ্ৰসাদ। চৌধুরী বংশে ইহারা অতি বিখ্যাত ও ক্ষমতাবান ছিলেন। কৃষ্ণপ্রসাদ কালেক্টরীর মহাফেজ ছিলেন। শহরে থাকার উপলক্ষে তিনি ঐ পদ গ্রহণ করেন। তিনি নানাগুণে এরূপ প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন যে; উক্ত পদটি তাহার দ্বারা অলংকৃত ও গৌরবান্বিত হইয়াছিল। তাহার দান-শৌণ্ডতা, ধৰ্ম্মনিষ্ঠা ও বিনয়াদি গুণ-মুগ্ধ দুই একজন শহরবাসী প্রাচীনের মুখে বাল্যকালে আমরা তাহার কীৰ্ত্তিকথা গল্পের ন্যায় শুনিয়া মুগ্ধ হইয়াছি। একদা তিনি গঙ্ঘধামে গমন করিয়াছিলেন, তথায় বিহারাধিপতির সহিত তাহার মিত্রতা স্থাপিত হয়। তিনি বিহারাধিপতিকে শ্রীহট্টের নিৰ্ম্মিত সুবর্ণ পুষ্প খচিত হস্তিদন্তের একটি বহুমূল্য পাটি উপহার প্রদান করেন। মহারাজও তাহাকে স্বর্ণনিৰ্ম্মিত একটি কর্কট ও একটি পদ্মমুকুল এবং ঝালরযুক্ত এক বৃহৎ ছত্রস্ট উপহার স্বরূপ পাঠাইয়াছিলেন। ১৮. শ্রীহট্রের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশে ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ১১শ অধ্যায়ে এই বিষয় বলা হইয়াছে। ১৯. কৃষ্ণপ্ৰসাদের ভ্রাতু-পুত্র স্বগীয় ব্রজ শোর চৌধুরী তাহার মৃত্যুর পর এই ছত্রসহ ৮০ টাকা মূল্যের এটা আতরদান জলডুবের ব্রাহ্মণ জমিদার তদীয়বন্ধু স্বগীয় চন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রদান করিয়াছিলেন ।