পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : বড়লিখার পুরকায়স্থ কথা এবং প্রতাপগড়ের বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৮৩ যে তাহারা শিবাচ্চনায় আসিয়াছে, তথায় নৌকাদি নাই যে তাহাকে পার করিয়া লইবে । রঘুনাথ ঠাকুরের জঠরানলও তখন ধকধক জুলিতেছিল, শিবপূজার কথা শুনিয়া, ক্ষুধায় উন্মত্ত প্রায় রঘুনাথ, প্রসাদ প্রাপ্তির লিন্সায় “জয় শিব শম্ভু" বলিয়া জলে ঝাপ দিলেন। তিনি জলে পতিত হইবা মাত্র কি জানি কি রকমে লৌহশূঙ্খল ছিন্ন হইয়া গেল, তিনি তখন সহজেই সন্তরণ সহকারে পরপারে উত্তীর্ণ হইলেন। শিবের অনুকম্পাতেই শৃঙ্খল ছিন্ন হইয়াছে বলিয়া তাহার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিল, তিনি পূজাস্থলে উপনীত হইয়া ভক্তিভরে প্রণত হইলেন ও পূজান্তে প্রসাদ পাইতে অভিপ্রায় করিলেন। যাহারা পূজা দিতে আসিয়াছিল, তাহারা নিজেদের জাতির কথা জানাইয়া ব্রাহ্মণকে স্বপৃষ্টে প্রসাদ দিতে চাহিল না। একে প্রাণান্তকর জঠরানল, তাহাতে শৃঙ্খল মুক্তি হেতু প্রবল বিশ্বাস বল, রঘুনাথ কোন আপত্তিই শুনিলেন না, প্রসাদ ভক্ষণ করিলেন। জঠরানল কিয়ৎ পরিমাণে নিবৃত্ত হইলে তাহার মনে বৈরাগ্যোদয় হইল, এবং তিনি কিছু দিনান্তে নিজগৃহে গোপনে গিয়া একদা আপন স্ত্রীকে লইয়া অপরিচিত ভাবে রাউৎভাগ নামক স্থানে আগমন পূৰ্ব্বক যোগী জাতি পরিচয়ে বাস করিতে লাগিলেন। কিন্তু আচার ব্যবহারে অচিরেই প্রকৃত পরিচয় অনেকটা বিদিত হইয়া পড়িয়াছিল। যাহা হউক, কালে তাহার মনের বৈরাগ্য বিদূরীত হইল এবং তথায় তাহার একটি পুত্র জন্মিল, আত্মগোপনের প্রকৃষ্ট উপায় স্বরূপ তিনি এই নবজাত পুত্রের নাম কাজলনাথ রাখিলেন। তাহার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইয়াছিল, রাজপুরুষগণ জেল পলাতক রঘুনাথ শৰ্ম্মার কোন অনুসন্ধানই প্রাপ্ত হইতে পারেন নাই । কাজলনাথের পুত্র প্রাণনাথ, তৎপুত্র পদ্মনাথ, ইহার খরাই, হরাই, গোরাই ও উত্তম নামে চারি পুত্র হয়। কাজলনাথ, তাহার পুত্র পৌত্র এবং প্রপৌত্ৰগণ সকলেই বিশাল দেহী, বলশালী ও সংযমী পুরুষ বলিয়া সকলের ভয়-ভক্তির পাত্র হইয়াছিল। বৃদ্ধকালে পদ্মনাথ স্বীয় অধিকৃত ভূমির রাজস্ব আদায় করিতে অশক্ত হইয়া বিপন্ন ও পীড়িতাবস্থায় মৃত্যুকালে পুত্রগণকে সে স্থান পরিত্যাগ করিতে বলিলে এবং ভবিষ্যতে কখনও ভূমির বন্দোবস্ত গ্রহণ করিতে নিষেধ করিলে, তাহারা রাউৎভাগ ত্যাগ করিয়া, নরসিংহ পুরের জঙ্গল আবাদ ক্রমে সে স্থানবাসী হয়। ইহাদের সময়ে দশসনা বন্দোবস্ত হয়। ইহাদিগকে আবাদীয় ভূমি, পিতৃবাক্য পালনার্থ নিজ নিজ নামে বন্দোবস্ত না করিয়া প্রতিবেশী মোসলমানদের দ্বারা বন্দোবস্ত লইতে হইয়াছিল। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক সেই বন্দোবস্তকারিগণ কিছুদিন মধ্যে প্রতিশ্রুতি বিস্মৃত হইয়া খাজানা প্রার্থ হয়। মোসলমানদের এই অন্যায়াচরণ অমিত বলশালী খরাইর অসহ্য হইয়া উঠিল, খরাই বিশ্বাসঘাতক দিগকে আক্রমণ করিতে উদ্যত হইলে, তাহারা ভয়ে কোন উচ্চ বাক্য না করিয়া নিরস্ত রহিল; ফলে খাজানা দেওয়া হইল না। ভ্রাতৃবর্গও বিরক্ত হইয়া ইহদের সংস্রব ত্যাগে ভরণ ও কুশিয়ারকুল পরগণা সংক্রান্ত কতক ভূমি ক্রয় করিয়া লইলে, তাহাই তাহাদের অধিকৃত হয়। পূৰ্ব্বকার লোকের শক্তির পরিমাণ এক্ষণে ধারণাতীত হইয়া পড়িয়াছে, তন্মধ্যে যাহারা বিশেষ বলশালী ছিল, তাহাদের তো কথাই নাই। খরাইর বিশাল দেহ ও আহারের কথা গল্পবৎ বোধ হয়। একদা শ্রীহট্টের পথে খরাই সশস্ত্র দসু্যদল কর্তৃক বেষ্টিত হইলে, সঙ্গের একশত টাকা গিলিয়া ফেলিয়া, দসু্যদিগকে বলপরীক্ষায় আহবান করিলে, তাহার কার্য ও আকৃতি দর্শনে