পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড ভীত হইয়া তাহারা পলায়ন করিয়াছিল। তদ্ব্যতীত লাঠি খেলায় তাহার দক্ষতা ও পটুতা দেশে তাহাকে প্রসিদ্ধ করিয়া তুলিয়াছিল। একদা একটা বটগাছের সমীপস্থ একখণ্ড ভূমি লইয়া মাহিডিহির মোসলমান চৌধুরীদের সহ বিবাদ উপস্থিত হইলে সভ্রাতৃক উত্তম লাঠিখেলার কৌশলে চৌধুরীদের পাচশত লাঠিয়ালকে পরাস্ত করায় উক্ত ভূমি তাহাদের দখলে আসিয়াছিল। এক ব্যক্তির শিক্ষা কৌশলে পাচশত ব্যক্তির সম্মিলিত শক্তি ব্যাহত হওয়া বিশ্বাসযোগ্য হইবে না, কিন্তু ইহার বহু সাক্ষ্যই পাওয়া যায়। তখনকার লোকের শক্তি ঈদৃশই ছিল। ইহার পুত্রের নাম মহেশ, তৎপুত্র সিদ্ধির পরপোকারী ও পরম ধৰ্ম্মপরায়ণ ব্যক্তি বলিয়া খ্যাতি ছিল, তৎপুত্র শ্রীযুক্ত লক্ষ্মীচরণ মোক্তার মহাশয় বৰ্ত্তমান। তিনিই এই বিবরণ প্রদাতা । বলবান ভরত পূৰ্ব্বোক্ত খরাই নাথের অনুজ ভ্রাতা হরাই বা হরিনাথের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ভরত। ইহার কথা বর্ণনযোগ্য । ইহার ন্যায় প্রকাণ্ডকার ও অসীম বলশালী ব্যক্তির কথা বড় শুনা যায় না। গায়ে জোর থাকিলে কিছুই গ্রাহ্য করা যায় না; প্রায় ৪০ বৎসর বয়ঃক্রম পর্য্যন্ত কোন বিষয়েই ভরতনাথকে অপ্রস্তুত হইতে হয় নাই; প্রতি কাৰ্য্যেই সফলতা যেন তাহার করবৃত ছিল। একবার দুই শত লোক তাহাকে আক্রমণ করিয়াছিল, সেই দুইশত ব্যক্তিকে ভরতের বাহুবলে পরাভূত হইয়া পলায়ন করিতে হয়। একটা বৃহৎ বৃক্ষ প্রায় পচিশ জন লোকে টানিয়া নিতে অসমর্থ হইয়া, ইহাকে সহায়তা করিতে বলে, ভরত সেই সকল ব্যক্তিকে সরাইয়া দিয়া একা স্বচ্ছন্দে সেই গাছটি যথা স্থানে স্থাপন করিলে, তাহারা সকলেই বিস্মিত হয়। ভরতের বলের কথা লোকমুখে শুনিতে পাইয়া কয়েকজন ভদ্রলোক তাহার বলের পরিচায়ক কোন ঘটনা প্রত্যক্ষ করিতে কহিলে, প্রায় ৮০/০ মণ ওজনের দ্রব্য বহন করিতে পারে, সন্নিকটবৰ্ত্ত তাদৃশ একখানা নৌকা টানিয়া অক্লেশে নদীতে ফেলিয়া দিলে, সেই ভদ্রলোকগণ ভরতের বলের পরিচয় পাইয়া চমৎকৃত হইলেন। শেষ বয়সে ভরতনাথ একজন সাধকরূপে গণ্য হইয়াছিলেন ও উপবিষ্ট অবস্থায় ভগবানের নাম গ্রহণ করিতে করিতে মৃত্যুমুখে পতিত হন। পুরুষানুক্রমে সকলেই বলশালী হয়, এইরূপ বংশ অতি অল্পই পরিলক্ষিত হয় । ভরতনাথের বংশধর বর্গও বৰ্ত্তমান । দ্বিতীয় বংশ বটরশী বাসী বৎসেন্দুনাথ বংশীয় বর্গ চৌধুরী খ্যাতি বিশিষ্ট । এই বংশের পূৰ্ব্বপুরুষ বৎসেন্দু ব্ৰাহ্মণ জাতীয় ছিলেন। ঘটনা বৈচিত্রে গ্রহবৈগুণ্যে তিনি জাতিচু্যত হন। কিন্তু তাহা হইলেও দেশে তাহার প্রতিপত্তির হ্রাস হয় নাই। দিন দোষে তাহার পদঙ্খলন হইলেও বুদ্ধির গুণে তিনি স্বীয় সম্মান রক্ষা করিয়া চলিয়া যাইতে সমর্থ হন। তাহার পুত্রের নাম পুষ্পকেতু, তৎপুত্র দয়ানন্দ, ইহার আনন্দমোহন ও রামমোহন নামে দুই পুত্র হয় । আনন্দমোহন বিদ্যানুরাগী, ধাৰ্ম্মিক ও কৰ্ম্মদক্ষ ব্যক্তি ছিলেন। ব্যবসায় বাণিজ্যে তাহার বিশেষ অনুরাগ ছিল, সুনামগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও করিমগঞ্জ এই তিন স্থানে ইহার বৃহৎ কারবার ছিল। “বাণিজ্যে লক্ষ্মীর বাস”—আনন্দ মোহনের আর্থিক অবস্থা উজ্জ্বল ছিল, তদৃষ্টে তদীয় জনৈক কপটমিত্রের ঈর্ষ। উদ্দীপ্ত হয় এবং সে একদল দসু্য সহায়ে তাহার প্রায় দুইলক্ষ টাকার সম্পত্তি অপহরণ করিতে সমর্থ হয়। আনন্দমোহন সুকৌশলে সেই দস্যদলকে ধরাইয়া দিতে পারিলেও, কপটাচারী উক্ত