পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় : ছরচিরি ও বরমচালের বাৎস্য শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৯৫ দধি বামন ও মূৰ্ত্তি প্রাপ্তির গল্প কথিত আছে যে, এই দীর্ঘিকা খনন করিতে করিতে ভূগর্ভে দিব্য জ্যোতি-বিশিষ্ট যোগপবিষ্ট এক ধ্যানাবিষ্ট মহাপুরুষ দৃষ্ট হইয়াছিলেন। মহাপুরুষের সম্মুখে এক দেববিগ্রহ ও এক শালগ্রাম চক্র পরিদৃষ্ট হয়। ধৰ্ম্ম নারায়ণের নিকট এই কথা জ্ঞাপিত হইলে “রহস্যোড্রেদ জন্য তিনি তথায় যাইয়া দেখিলেন, মৃত্তিকা গর্ভে দেব বিগ্রহ দেখা যাইতেছেন এবং তাঁহাদের সাক্ষাতে জনৈক মহাপুরুষ উপবিষ্ট।” ধৰ্ম্ম নারায়ণ “অতি ধাৰ্ম্মিক ছিলেন, তিনি স্তুতি মিনতি করিলে সে সন্ন্যাসী তাহার সহিত ২/১টি কথা" বলেন। এই দুই দেবতার নাম স্বগীয় দধি বামন ও স্বগীয় বাসুদেব । কোদালের আঘাতে বাসুদেবের নাসিকার কিয়দংশ ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল। কিন্তু সন্ন্যাসী উভয় দেব বিগ্রকেই পূজার জন্য ধৰ্ম্ম নারায়ণের করে সমর্পণ করিয়া প্রস্থান করেন। দধি বামন এক শিলাচক্র । এই দুই বিগ্রহ তদবধি এই বংশীয় কর্তৃক পূজিত হইতেছেন। ভূগর্ভে ধ্যানাবিষ্ট যোগী পুরুষের অবস্থিতি বিষয়ক আখ্যানের সত্যতা সম্বন্ধে বিচারের প্রয়োজন নাই। কিন্তু দীঘী খনন কালে যে দুই বিগ্রহ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছিল, তাহাতে সেই স্থানের বহু প্রাচীনত্বই প্রমাণিত হয়। খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে “জঙ্গলাকীর্ণ সেই স্থানে" বিষ্ণুপুর গ্রাম স্থাপিত হয়, তাহার বহুপূৰ্ব্বে সেই স্থানে লোক বসতি ছিল, পরে সেই প্রাচীন জনবসতি পরিত্যক্ত হওয়ায় জঙ্গল পরিপূরিত হইয়া পড়িয়াছিল, অনুমান করা যাইতে পারে। মন্দির ও গ্রাম স্থাপন ধৰ্ম্মনারায়ণ “দধি বামন ও বাসুদেবের জন্য এক খানা সুন্দর দ্বিতল মন্দির প্রস্তুত করাইয়া তদুপরি তাহাদিগকে প্রতিষ্ঠিত করাইলেন। তৎপর তিনি বিষ্ণুপুরের পূৰ্ব্বে শ্ৰীনাথপুর, পশ্চিমে রাম চন্দ্রপুর, উত্তরে লক্ষ্মীপুর, দক্ষিণে নিজ নামানুসারে ধৰ্ম্মপুর গ্রাম স্থাপন করেন। চতুষ্পার্শ্ববৰ্ত্তী গ্রাম সমূহে যে সকল জলাশয় তিনি প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, তাহার চিহ্ন আজ পর্য্যন্ত বিলুপ্ত হয় নাই।’ তিনি “ধলাই নদীর তীরে চৈত্র মাসের বারুণী ও অষ্টমীর একটি মেলা স্থাপন করিয়া সেই স্থানের চৈত্রঘাট নামকরণ করেন। স্থানীয় বহুলোক বারুণী উপলক্ষে এখানে আসিয়া থাকে।" “চৈত্রঘাটের সন্নিকটে অতি পবিত্র একটি স্থানে ধৰ্ম্ম নারায়ণ বৈদিক কুলাচারানুসারে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ দ্বারা নিহোম ও যজ্ঞ সম্পাদন করাইতেন, কালক্রমে এই স্থানই যজ্ঞশালা নামে অভিহিত হয় । বৰ্ত্তমানে যজ্ঞশালা একটি গ্রাম।" কন্যাদানে প্রতিজ্ঞা এই নূতন স্থানে যে তখন পর্যন্ত বিশেষ রূপে ব্রাহ্মণ-বসতি স্থাপিত হয় নাই, তাহা একটি ঘটনা হইতেই জানা যায়। তখন বিষ্ণুপুরের পূৰ্ব্বদিকে শ্রীনাথপুরে ভরদ্বাজ গৌত্রীয় কয়েকজন ব্রাহ্মণ বাস করিতেন, তিনি "ইহাদিগকে আশ্রয় দিয়া শ্রীনাথপুরে বাসস্থান দান করিয়াছিলেন।" ধৰ্ম্ম নারায়ণের এক বিবাহ যোগ্যা কন্যা ছিল, ইহার বিবাহের জন্য তিনি নানা স্থানে পাত্রের সন্ধান করেন। কিন্তু গৃহ জামাতা রূপে সেই মূতন স্থানে কেহই আসিতে সম্মত হয় নাই । অবশেষে নিরুপায় হইয়া তিনি “প্রতিজ্ঞা” করিয়া বলিলেন যে— “নিরূপিত দিনে যে কোন ব্রাহ্মণ প্রথম দৃষ্টি গোচর হইবে। তাহার হস্তে কন্যা সম্প্রদান করবেন(১)” এই প্রতিজ্ঞার সমীচীনতা বা সত্যতার বিচারের প্রয়োজন নাই; কথিত পূৰ্ব্বোক্তঃ ভরদ্বাজ