পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড বিপুল সম্পত্তি প্রাপ্তে শুকদেব ডলা হইতে প্রত্যাগমন পূৰ্ব্বক শ্বশুরালয়ে বাস করেন। ইহার বংশীয়গণই গোবিন্দবাটীর অধিবাসী । শুকদেবের পুত্র রাঘবেন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য, তাহার রামচন্দ্র, শ্রীচন্দ্র ও হরিশ্চন্দ্র নামে তিন পুত্র হয়, তন্মধ্যে রামচন্দ্র ও শ্রীচন্দের বংশ বৰ্ত্তমান আছেন। পতিব্ৰতা অহল্যা হরিশ্চন্দ্রের পত্নী অহল্যাদেবী অতুলনীয় পতিভক্তিসম্পন্না রমণী ছিলেন; তিনি প্রতিদিন পবিত্র ভাবে পুষ্পচয়ন করিতেন, স্নানান্তে সেই চয়িত কুসুমে পতিদেবতার পাদপদ্ম আচ্চনা করিতেন । পুষ্পাঞ্জলি প্রদান না করিয়া জল গ্রহণ করিতেন না। একদা হরিশ্চন্দ্রের স্থানান্তরে গমনের আবশ্যক হয়; সতীর নিত্যকৰ্ম্ম তখন চলিবে কিরূপে? হরিশ্চন্দ্র পত্নিকে বলিলেন যে পতির প্রতিনিধি রূপে পশুপতির আচ্চনা করিয়া অন্ন গ্রহণ করিও । তদনুসারে পতির অনুপস্থিতে তিনি শিবলিঙ্গ স্থাপন করিয়া পতির উদ্দেশে পুষ্পাঞ্জলি প্রদানান্তে অন্ন গ্রহণ করিতেন । সাগ্রহে শয়ন করেন। সতীর সহমরণে শত শত ব্যক্তি সমবেত হইল, শশানে কুসুম রাশি বর্ষিত হইতে লাগিল । দেখিতে দেকিতে লোকের ভক্তিপুত চিত্তে পবিত্র ভাব উদ্রেক করিয়া, তাহাদের জয়ধ্বনির মধ্যে সতীদেহ ভক্ষ্মীভূত হইয়া গেল । পরবর্তী কথা রামচন্দ্রের জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীকান্ত পরম ধৰ্ম্মিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি স্বগৃহে ধাতুময়ী এক দুর্গ মূৰ্ত্তি স্থাপিত করিয়া পূর্ণ অৰ্জ্জন করিয়া গিয়াছেন। একদা তাহার গৃহদাহ হয়, তাহাতে সমস্তই দন্ধীভূত হইয়া যায় ; শ্রীকান্ত নশ্বর সম্পত্তির জন্য কিছুমাত্র ক্ষুব্ধ না হইয়া স্বগীয় দুর্গামূৰ্ত্তির জন্য হাহুতাশ করিতে লাগিলেন । যখন ছাইভষ্ম খুঁজিয়া স্বগীয় দুর্গামূৰ্ত্তি পাওয়া গেল না, ঈদৃশ দুর্ঘটনা মূলে দেবীর এই অন্তৰ্দ্ধান ব্যাপার নিজের পাপেবই ফল স্বরূপ মনে করিয়া তিনি প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ আত্মপ্রাণ পরিত্যাগে প্রস্তুত হন । কথিত আছে তখন এক নারিকেল বৃক্ষে ঐ মূৰ্ত্তি প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছিল। ইহা দেবলীলা কি ভক্তের নিষ্ঠা পরিক্ষার্থী কোন চতুরের কার্য, কে বলিবে? শ্রীকান্তের ছয়পুত্রের একতমের নাম জগন্নাথ, তৎপুত্র সারদা, তাহার পুত্র শ্ৰীযুত শচীন্দ্র ভট্টাচাৰ্য প্রভৃতি উক্ত শ্রীমূৰ্ত্তির সেবাধিকারী। m রাঘবেন্দ্রের মধ্যম পুত্র শ্রীচন্দ্রের উমাকান্ত ও রামকান্ত নামে দুই পুত্র হয় । উমাকান্তের জ্যেষ্ঠপুত্র হরিকান্ত তন্ত্রোক্ত সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়াছিলেন । তিনি গোবিন্দবাটীর দীর্ঘীর পশ্চিম তীরে এক শিব প্রতিষ্ঠা করিয়া, এস্থানে থাকিয়া সাধন করিতেন । কথিত আছে, দূর হইতে লোকে এই স্থানে নানাবিধ আশ্চৰ্য্য ব্যাপার দেখিতে পাইত; কেহ কখন বা সন্ন্যাসীকে শতপথিক পরিবৃত দেখিত, শূন্যস্থানে কেহ বা হোমাগ্নি শিখা প্রত্যক্ষ করিত। সন্ন্যাসী লোক-সঙ্গত্যাগী ও ধ্যান ধারণাপরায়ণ ছিলেন। এসকল দৃশ্য দ্রষ্টাদের দৃষ্টি-বিভ্ৰম-জনিত কি না কে বলিবে? ইহার কনিষ্ঠ সহোদর কালীকান্ত টেঙ্গরার ভরদ্বাজ গোত্রীয় নীলকণ্ঠ ভট্টাচার্যের কন্যাকে বিবাহ করিয়া রেঙ্গাতে গমন করেন, এক্ষণে তদীয় প্রপৌত্র তথায় অবস্থিতি করিতেছেন । কালীকান্তর অগ্রজভ্ৰাতা রামকান্তের প্রপৌত্রও জীবিত আছেন। পূৰ্ব্বোক্ত রামকান্তের দুই পুত্রের নাম সৰ্ব্বানন্দ চূড়ামণি ও গৌরীকান্ত ভট্টাচাৰ্য্য। সৰ্ব্বানন্দ