পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় তাহার এত আশক্তি জনিবে কেন? তিনি এই কথা নিজ গ্রামস্থ কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় জনৈক চক্রবত্তীকে ও ধর বংশীয় এক ব্যক্তিকে জানাইলেন এবং তাহাদের পরামর্শে তিনজনে একত্রে উক্ত রমণীকে হাকালুকির মধ্যস্থ কাচলিয়া টীলায় লইয়া গেলেন ও সেই স্থানে রাখিয়া চলিয়া আসিলেন । সেই কামিনী জলবেষ্টিত নিৰ্জ্জন স্থানে পরিবজ্জিতা হইয়া কি করিয়াছিলেন, জানা যায় না। কিন্তু কিছুকাল মধ্যে সেন ও চক্রবত্তীর বংশ বিলুপ্তি ঘটিল। ব্যাপার দেখিয়া “ধর” ভয়ে দেশত্যাগী হইলেন। ইহা যে আশ্রয়বিহীনা অবলার উপর অন্যায় অত্যাচারের ফল নহে—ইহা যে বিনাদোষে পরিবজ্জিতা সেই কামিনীর অভিশাপের পরিণাম নহে, তাহা কে বলিবে? অভিশাপের ভয়ে ধর দেশত্যাগী হইলে তত্ৰত্য ভট্টাচাৰ্য্য বংশীয় জগন্নাথ একাই সেই স্থানে রহিলেন। কিন্তু তাহার অবস্থা অনেকটা হীন হইয়া পড়িল, তাহার পুত্র গঙ্গারামও তদবস্থায় সেই স্থান বাসী ছিলেন। তৎপুত্র নন্দরামেরও সেই দশা । সতী রুক্সিনী নন্দরামের এক কন্যা সন্তান ও এক পুত্র হয়, ইহাদের নাম রুক্সিনী ও ভবানন্দ। রুক্সিনীকে তত্ৰত্য রাউৎ গ্রামবাসী বাৎস্যগোত্রীয় দুর্গাচরণ চক্রবত্তী বিবাহ করিয়া সেই স্থানে আগমন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রুক্সিনী স্বামীর সহিত “সহমরণ" গমন করিয়া ছিলেন। ভবানন্দের শিবানন্দাদি চারি পুত্র হয়, কনিষ্ঠ দুর্গাসদয় খ্যাতনামা লোক ছিলেন । ১৮৫০ খৃষ্টাব্দে দুর্গাসদয়ের জন্ম হয়, আট বৎসর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন ও ভাটেরা স্কুলে অধ্যয়ন করিয়া ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আর্থিক অবস্থা অতি শোচনীয় ছিল বলিয়া সেই সময়েই তাহাকে শিক্ষায় বিরত হইয়া অর্থ চিন্তায় বিব্রত হইতে হয়; অনন্যেপায় হইয়া তিনি গ্রাম্য পাঠশালার শিক্ষক নিযুক্ত হন। কিছুদিন পরে তাহা ত্যাগ করিয়া বরমচাল চা বাগানে সামান্য বেতনে একটী কৰ্ম্ম স্বীকার করেন ও নিজেদের কতটুকু জমি ১২০ টাকা বাৎসরিক জমায় বাগানের তাহার দক্ষতায় সাহেব তৎপ্রতি তুষ্ট ছিলেন এবং অচিরেই তাহাকে ৬০ মাসিক বেতনে বড়বাবুর পদে উনীত করেন এবং বাসা খরচের জন্য আরও মাসিক ২০ টাকা দেওয়া নির্দিষ্ট হয়। দুর্গাসদয় ১৫ বৎসর এই বাগানে কাজ করেন। অতঃপর তিনি কাৰ্য্যত্যাগ করিয়া গ্রামের দুইজন বৃদ্ধ মোসলমান সহ পরামর্শ ক্রমে গ্রামে একটি পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠা করিয়া গ্রামের উন্নতি বিধানে সচেষ্ট হন। দুষ্ট ব্যক্তি মিত্র হইলেও সর্পদষ্ট আঙ্গুলীর ন্যায় ত্যজ্য এবং শিষ্ট লোক শক্ৰ হইলেও তিক্ত ঔষধের ন্যায় গ্রহণীয়, ইহাই তাহাদের মূলমন্ত্র ছিল । দুর্গা সদয়ের চেষ্টায় এইরূপে গ্রামের সকল উৎপাতই দূর হইয়া শান্তির আবির্ভাব হয় এবং অচিরেই তিনি লোভের ভয় ও শ্রদ্ধার পাত্র হইয়া উঠেন। সেই গ্রামে হিন্দু ও মোসলমানের মধ্যে ঐক্য ও সৌহাৰ্দ্দ্য বিশেষ ভাবে বৰ্দ্ধিত হইয়াছিল । ৫১ বৎসর বয়সে তিনি মৃত্যু মুখে পতিত হন। শিবানন্দের পুত্র শ্ৰীযুত বৈকুণ্ঠ নাথ ভট্টাচাৰ্য লিখিত বৃত্তান্ত হইতে ইহা গৃহীত হইয়াছে।