পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড কথিত আছে। ইটার টেংরা গ্রামে যহারা বাস করিতেছেন, তাহারা লংলার ভরদ্বাজ বংশেরই একটি শাখা বলিয়া কথিত; এই শাখার আদি পুরুষের নাম রমাপতি। রমাপতির পরবর্তীগণ রমাপতিওঁ তপোনিষ্ঠ পুরুষ ছিলেন, জেলা শহরের সন্নিকটে মনুনদীর তীরে তিনি বাস করতঃ নিত্য নৈমিত্তিক ক্রিয়ানুষ্ঠানে রত ছিলেন । বৰ্ত্তমান পৰ্ব্বতপুর চা-বাগানের নিকট নিধিপতি বংশজ রামনারায়ণ ও লক্ষ্মীনারায়ণ নামে দুই ভ্রাতা বাস করিতেন, ঐ স্থানে ইহাদের নামীয় “রামলক্ষণের দীর্ঘী" অদ্যাপি দৃষ্ট হয়; ইহারাই রমাপতিকে টেংরাতে আনিয়া স্থাপন করেন । এই বংশের ব্যবসায় মিরাসদারি । যাদবচন্দ্র ও মহেশ্বর নামে রমাপতির দুই পুত্র হয়, তন্মধ্যে মহেশ্বরের পুত্রের নাম রামচন্দ্র, তাহার পুত্র রামভদ্র। রামভদ্র তান্ত্রিক পণ্ডিত ছিলেন এবং মুর্শিদাবাদের নবাব-সভায় ব্যবস্থাপক পণ্ডিতের পদে বরিত হইয়াছিলেন। কথিত আছে যে রামভদ্র এক দ্বিগ্বিজয়ী পণ্ডিতকে কূট কৌশলে পরাস্ত করিলে, উক্ত দিগ্বিজয়ী অভিশাপ দেন যে তাহার সপ্তম পুরুষ পর্যন্ত যেন তদ্বংশে সভাপণ্ডিতের গৌরব কেহ ভোগ করিতে না পারে। সতী,-রামভদ্রের পত্নী স্বামীর মৃত্যুর পর সহমৃতা হইয়াছিলেন। রামভদ্রের কনিষ্ঠ পুত্র জগন্নাথ ন্যায়বাগীশ জয়ন্তীয়াপতির সভাপণ্ডিত নিযুক্ত হইয়াছিলেন, কিন্তু অচিরেই মৃত্যুমুখে পতিত হন, ইহা সেই দিগ্বিজয়ী বিপ্রের অভিশাপের ফল কি না কে জানে? রামভদ্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র কাশীধর, তৎপুত্র বিষ্ণুপ্ৰসাদ একবার বিশেষ আড়ম্বর সহকারে এক নৌকাপূজা করেন। ইহার পুত্র জীবিত আছেন। রামভদ্রের কনিষ্ঠ সহোদরের নাম রঘুনন্দন । ইহার অনুরোধে পঞ্চখণ্ড (নোয়াগ্রাম) হইতে কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় রত্নেশ্বর ন্যায়বাগীশ টেংরায় আসিয়া বাস করেন। রঘুনন্দনের পুত্রের নাম রামনাথ, ইহার পুত্র বিজয়কৃষ্ণ । বিজয়কৃষ্ণ একবার মহা আড়ম্বরে মহাভারত পাঠ করাইয়া ছিলেন, তদ্রুপ আড়ম্বর সে অঞ্চলে বড় হয় নাই, এই ব্যাপারে উপলক্ষে ভাটগণ বিজয়ের গুণকথা রচনা করিয়াছেন; কোন সমারোহ ব্যাপারে এযাবৎ তদঞ্চল বাসিগণ “বিজয়ের মহাভারত" বলিয়া উপমা দিয়া থাকে। বিজয়ের পুত্র যুগলকৃষ্ণ, তাহার পুত্ৰগণ জীবিত আছেন। পঞ্চগ্রামী ভরদ্বাজ গোত্রীয় ইটার রাজা সুবিদনারায়ণের সামাজিক বিবাদ মূলে ভরদ্বাজ গোত্রীয় কেহ বালিশিরা পরগণায় গমন করেন। ভরদ্বাজ গোত্রীয় তত্ৰত্য বাণিনাথ পণ্ডিতের দুইপুত্র, ইহাদের নাম রাঘবেন্দ্র (বলভদ্র) ও বৈদ্যনাথ। বৈদ্যনাথের পুত্র রমাপতি পঞ্চানন লংলা নৰ্ত্তন গ্রামে গমন করেন, এবং বৈদ্যনাথ স্বয়ং পঞ্চগ্রামে আগমন করেন। ইহার বংশীয় ঈশ্বরচন্দ্র শিকদারের মথুরেশ ও শ্রীকৃষ্ণু বিদ্যানিধি নামে দুইপুত্র ছিলেন। মথুরেশের নামে একটি তালুক পাচগায়ে আছে। বিদ্যানিধির পুত্র রমাকান্ত পঞ্চানন, ইহার প্রপৌত্রের নাম গঙ্গাচরণ; তাহার পুত্র হরিনারায়ণ তর্কবাগীশ ১৮ বৎসর বয়সে ন্যায়, ও স্মৃতি এবং জ্যোতিষ ও তন্ত্রে বিজ্ঞতা লাভ করেন; তিনি বৰ্দ্ধনকুঠী রাজবাটীর পণ্ডিত নিযুক্ত হন; অবশেষে হবিষ্যাশী হইয়া তিনি কাশীতে শিবসাযুজ্য লাভ করেন। তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্র কাশীতেই আছেন এবং অপরেরা পঞ্চগ্রামে অবস্থিতি করিতেছেন। ৪. শ্ৰীযুক্ত সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরী (বিষ্ণুপুর) ইহার বংশ তালিকাদি আমাদের নিকট প্রেরণ করিয়াছিলেন। তদ্ব্যতীত টেংরা হইতে শ্ৰীযুত রাধানাথ ভট্টাচাৰ্য ঐ বংশ এবং তত্ৰত কৃষ্ণাত্রেয় গোত্র সম্বন্ধে অনেক কথা আমাদিগকে জ্ঞাপন করিয়াছেন ।