পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : লংলা, সাতগাও বালিশিরা প্রভৃতি স্থানের ব্রাহ্মণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২১৯ অধ্যক্ষ কৃষ্ণপুর মৌজার অনেকাংশ হস্তগত করিয়া লন। তাহার যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল, এবং ঐ সময় হইতে কৃষ্ণপুর সেনাপালের খ্যাতি অনুসারে “পালাগাও" নামে আখ্যাত হয়। সেনাপালের প্রভাবের চিহ্নস্বরূপ তন্নাময়ী দীঘী ও তাহার বাড়ী আজও লোকে দেখাইয়া থাকে। সনদ প্রাপক শুকদেব প্রভৃতি কৃষ্ণানন্দের পুত্র হরিণাথ চক্রবর্তী, ইহার পুত্রের নাম শ্রীনাথ বিদ্যালঙ্কার। বিদ্যালঙ্কারের চারি পুত্র হয়, ইহারা সকলেই বিখ্যাত ব্যক্তি, সকলেই নবাবি সনন্দ প্রাপ্তির অধিকারী হইয়াছিলেন। বিদ্যালঙ্কারের জ্যেষ্ঠ পুত্র গুরুদেব চক্রবত্তী “পণ্ডিত” উপাধিতে ভূষিত হইয়াছিলেন; শুকদেবের নামীয় পাঁচখানা সনন্দের অনুবাদ আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি।৭ শুকদেবের ভ্রাতা হরিদেব চক্রবর্তী নামীয় সনদে দৃষ্ট হয় যে তিনি “উচ্চ বংশের ব্রাহ্মণ, তাহার জীবীকার উপায় নাই" বলিয়া পূৰ্ব্বোক্ত নবাব তানিব ইয়ার খা “তল্পে ইজ্জদাবাদ (?) ও উত্তরভাগের তহবিল হইতে রোজিয়ানা চারিপণ কৌড়ি" তাহার জন্য “মক্করর” (মঞ্জুর) করেন। ইহাদের কনিষ্ঠ ভ্রাতা সহদেব চক্রবত্ত “চিরদিন আশিববাদ করিতে থাকেন” এই সাধারণ পাঠ যুক্ত সনন্দে, নবাব আবুহুসেন খা বাহাদুর তল্পে দক্ষিণ ভাগের কৰ্ম্মচারিবর্গকে জানাইয়াছেন যে উক্ত স্থানের “মহালে শালিয়ানা ১০ কাহন কৌড়ির জন্য ব্ৰহ্মউত্তর" সহদেব চক্রবত্তীর নামে বাহাল করা গিয়াছে। শুকদেবের পুত্রগণও বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। জ্যেষ্ঠ গোবিন্দরাম দক্ষিণভাগের "সরবরকার” ছিলেন বলিয়া নবাব আবহুসেন (১৮ জলুসে) তাহাকে জনাবদার খ্যাতির সহিত “পরগণা মজকুরের বাণেশ্বর মৌজায় তদখানেবাড়ী স্বরূপ এক কিত্তা জমি" ১১৪০ সনে “মক্করর" করেন। ইহার ভ্রাতা জীবনেশ্বরকে “পড়ার খরচ বাবত" ঐ নবাব তৎপর বর্ষে দৈনিক দুইপণ কৌড়ি মক্কবর করেন। ৭. ১ম ও ২য় সনন্দ । নবাব আবু তানিব প্রদত্ত,-ইহাতে নবাব লংলা ও দক্ষিণ ভাগের বর্তমান ও ভবিষ্য কালেব চৌধুরী, কানুনগো ও পাটওয়ারী প্রভৃতিকে এই হুকুম দিয়াছেন যে, “শুকদেব চক্রবর্তী সংস্কৃতে পাকা বিদ্বান বটেন” ; রামদেব পুরের জঙ্গল হইতে ১১৩৫ বাংলায় তাহাকে “দুইদ্রোণ জমি মদত মাস মক্করর করা গেল, উচিত যে তথাকার জমিদারগণের ডৌলচরাবন্দি মত মদতছরূপে রূপে ছাড়িয়া দেয়।” দ্বিতীয় সনন্দ দ্বারা দক্ষিণ ভাগের তালুকাত হইতে তাহাকে ১৪ পণ কৌড়ি দেওয়া বরাদ্দ হয়। তারিখ ১১৩৯ বাংলা । ২য় সনন্দ । নবাব বসারত বা প্রদত্ত,-ইহাতে লংলা সম্বন্ধীয় কৰ্ম্মচারিগণকে জ্ঞাত করা হইয়াছে যে শুকদেব “দয়ার পাত্র," তদীয় জীবিকা নিৰ্ব্বাহ হেতু "ভবানীপুর মৌজার শালিয়ানা হইতে ১১ কাহন কৌড়ি ব্রহ্মউত্তর নিয়মে ১১৩৮ বাংলা অবধি মক্করর করা গেল ।" ৪র্থ সনন্দ । নবাব আবুহুসেন খা প্রদত্ত-এ সনদ নবাব আবুতানিবের প্রদত্ত পূৰ্ব্ব সনন্দের পরিবৰ্ত্তে-সনন্দ মাত্র; তারিখ ১৭ জলুস । ৫ম সনন্দ । মোহর অস্পষ্ট-কোনরূপে এতেসাম পাঠ করা যায়, সুতরাং ইহা নবাব এতেসাম খাঁ প্রদত্ত বলা যাইতে পারে। এই নবাব ইংরেজ আমলেই নিযুক্ত হন, শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের দ্বিতীয়ভাগে তাহা বলা গিয়াছে। এ সনদও পূৰ্ব্বোক্ত ১৫ পণ কৌড়ি মঞ্জুরীযুক্ত সনদের শেষ সংস্করণ বা পরিবর্তন-সনদ । ইহাতে লিখিত আছে যে উক্ত কৌড়ি “বৰ্ত্তমান কালে কলিকাতা সদরের হুকুমানুসারে পরগণা মজকুরের সামীল তালুকাতে বন্দোবস্ত হইয়াছে। উচিত যে বর্ণিত মহালাভের শাসন হইতে বর্ণিত ব্যক্তিকে পৌছাইতে থাকে ।” তারিখ ১১৯৯ বাংলা । প্রথম সনন্দ হইতে ৫ম সনদের তারিখের ব্যবধান ৪৪ বৎসর; শুকদেব যে দীর্ঘজীবী পুরুষ ছিলেন, ইহাই তাহার প্রমাণ। নিতান্ত ছেলে বয়সে যে তিনি প্রথম সনন্দ পান নাই, তাহা বলা যাইতে পারে। পূৰ্ব্বে বলা গিয়াছে যে এ বংশীয় ব্যক্তিগণ দীর্ঘজীবী ছিলেন। নবাব আবুল হুসেনের তারিখ যুক্ত কোন সনদ পূৰ্ব্বে কালেক্টরী হইতে না পাওয়াতে ইহার সময় স্থির ১৭৩৫ খৃষ্টাব্দে প্রদত্ত হইয়াছিল, তাহা বুঝা যাইতেছে। অতএব ইনি জনৈক নায়েব ফৌজদার ছিলেন, বলা যাইতে পারে।