পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড ইহাদের ভ্রাতা হীরারাম ও বাণীনাথের যুক্ত নামে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সময়ের একাধিক সনন্দ আছে। পূৰ্ব্ব পূৰ্ব্ব সনন্দ নূতন কল্পে ইহারা মঞ্জুর করাইয়া ছিলেন মাত্র; তন্মধ্যে একখানি ১৭৬৬ খৃষ্টাব্দে প্রদত্ত হয়। এই সময় সহদেবের পুত্র ভারতরাম জীবিকার জন্য দরখাস্ত করায় একখানা নূতন সনন্দে কতক ভূমি দান প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। এই বংশীয় অনেকেরই নামে দশসনা তালুক আছে, উদাহরণ স্থলে ৬২নং হীরারাম তালুকের নাম করা যাইতে পারে। লংলার অনেকে মৌজাতেই হীরারামের ভূসম্পত্তি ছিল। হীরারাম শিবালয় প্রতিষ্ঠা ও দেশে ব্রাহ্মণ স্থাপনাদি সৎকাৰ্য্যে কীৰ্ত্তি অৰ্জ্জন করিয়া গিয়াছেন। ইহার পুত্র কৃষ্ণানন্দ এক মন্দির প্রস্তুত ক্রমে মদন মোহন ও লক্ষ্মবিগ্রহ স্থাপন করিয়া যশস্বী হইয়াছিলেন। ইহার পুত্রের নাম রাম লোচন; ইনি স্মৃতিশাস্ত্রে অভিজ্ঞ ছিলেন এবং বাড়ীতে টোল সংস্থাপন করিয়া বহুছাত্রকে বিদ্যাদান করেন। পূৰ্ব্বোক্ত বাণীনাথ পণ্ডিতের প্রপৌত্র ভৈরবচন্দ্র তর্কভূষণ তর্কতীর্থ পরম পণ্ডিত ছিলেন, ন্যায়শাস্ত্রে তাহার বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল, তিনিও চতুষ্পাঠী সংস্থাপন পূৰ্ব্বক বহুদিন বহুছাত্রকে শিক্ষাদান করিয়া উপকৃত করিয়াছিলেন, তাহার ছাত্র মধ্যে অনেক উপাধিধারী পণ্ডিত আছেন, মাত্র বিগত ১৩০৪ বাংলায় সন্ন্যাস রোগে তিনি মৃত্যু মুখে পতিত হইয়াছেন। এ বংশীয় শ্ৰীযুত তারাচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য হইতে আমরা এই বিবরণ প্রাপ্ত হইয়াছি। সাতগার বাৎস্য গোত্রীয়গণ জগদানন্দ বংশ সাতগাও পরগণার পাত্রিকুলে যে ভট্টাচাৰ্য্য বংশীয়গণ আছেন, তাহারা নিধিপতি বংশীয় বলিয়া পরিচয় দেন। ইহারাও ইটার রাজবিপ্লবে স্থানচ্যুত হইয়া এই স্থান বাসী হইয়াছিলেন। কিন্তু কে কখন পাত্রিকুলে বসতি নির্ণয় করেন, বলা যায় না। জগদানন্দ হইতেই ইহাদের বংশাবলী পাওয়া যায়। জগদানন্দের তিনপুত্র; তন্মধ্যে কনিষ্ঠপুত্র জয়গোপাল চক্রবর্তী নবাব হরকিষুণ মনসুর উলমুলক হইতে ৩ জলুস ৭ রমজান তারিখ যুক্ত এক সনন্দে (নং ১০৩৩) সাতগাও হইতেই ২॥ ০॥৫। ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন। ঐ ভূমি পরে তাহার পৌত্র যজ্ঞেশ্বর চক্ৰবৰ্ত্তীর “তছরূপে" ছিল। এ বংশে অনেক পণ্ডিতের উদ্ভব হইয়াছিল, তন্মধ্যে রাধাকান্ত বাচস্পতি সাহিত্য ও স্মৃতিশাস্ত্রে অভিজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন। তিনি সৰ্ব্বদা ব্রহ্মবিদ্যার চর্চা করিতেন। তাহার ধ্যান ধারণা ও ধৰ্ম্মনিষ্ঠায় তাহাকে তপস্বিতুল্য জ্ঞান হইত, তিনি হবিষ্যান্ন ভোজী ছিলেন। ইহার ভ্রাতুষ্পপুত্র ভুবনেশ্বর বিদ্যামণি পিতৃব্যের ন্যায় ভক্তি পরায়ণ ছিলেন। একটি অলৌকিক আখ্যান তাহার ভক্তির প্রমাণ রূপে কথিত হইয়া থাকে ৮ বাচস্পতির সহোদর রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্যের রাজ্যেশ্বর ও যজ্ঞেশ্বর নামে দুই পুত্র ছিলেন, ইহারা উভয়েই পরম ধাৰ্ম্মিক ছিলেন, ১২২২ সালে তাহারা এক বিষ্ণুমণ্ডপ, অত্যুচ্চ শিবমন্দির ও দোলমঞ্চ নিৰ্ম্মাণ পূৰ্ব্বক বিগ্রহ স্থাপন করিয়া চিরস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছেন। রাজ্যেশ্বরের পৌত্র শ্ৰীযুত চন্দ্রকান্ত ভট্টাচাৰ্য্যই আমাদিগকে এই বংশ বিবরণ৯ পাঠাইয়াছেন। ৮. গোপালের অতিথি সৎকারঃ পরমভক্ত ভুবনেশ্বর গোপাল বিগ্রহের অৰ্চ্চনা করিতেন, যখন ভুবনেশ্বরের কোন সস্তান হয় নাই, বাড়ীতে কেবল তাহার স্ত্রী মাত্র ছিলেন, তখন একদা তাহার অনুপস্থিত কালে বাড়ীতে কয়েকজন অতিথি আসিয়া উপস্থিত হন। ভুবনেশ্বরের পত্নী অতি শুদ্ধমতি রমণী ছিলেন। গৃহে সে দিন কোন সামগ্রী ছিল না, কি দিয়া অতিথি সৎকার করিবেন ভাবিয়া বড়ই বিষাদিতা হইলেন ও কাতরপ্রাণে অনন্য-শরণ গোপালের নাম স্মরণ করিতে লাগিলেন।