পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড ঈশ্বর চন্দ্রের পিতা চন্দ্রকান্ত সজ্ঞানে স্বগীয় কাশীপ্রাপ্ত হন। মাতা দেড় বৎসরের শিশুপুত্র রাখিয়া পরলোক গমন করেন। একদা তথা হইতে তিনি বাড়ী আসিতেছেন; পদ্মাপারে উপস্থিত দেখিতে পাইলেন যে, পরপারে যাওয়ার জন্য খেওয়া-নৌকা প্রস্তুত হইয়াছে; ঈশ্বরচন্দ্র আর খাবার ক্রয়ের অবকাশ পাইলেন না, তাহার আর খাওয়া হইল না। পুটলীটা তাড়াতাড়ি হাতে তুলিয়া লইয়া নৌকায় উঠিলেন-বাধিতেও পারিলেন না। নৌকা যখন "মাঝ গাঙ্গে” গিয়াছে, ঐ পুটলী বান্ধিতে গিয়া ঈশ্বরচন্দ্ৰ দেখিলেন,-সৰ্ব্বনাশ! টাকার গ্রন্থিটা আনেন নাই, ভ্রমতঃ তীরে ফেলিয়া আসিয়াছেন। মাঝিকে নৌকা ফিরাইতে তিনি কত অনুনয় করিলেন, মাঝি কৰ্ণপাতও করিল না। দরিদ্র যুবক তখন সেই ভীমা বেগবতী পদ্মায় ঝাপদিয়া পড়িলেন। নৌকার লোকেরা তাহার এই দুঃসাহসিকতার পরিণাম দেখিতে সেদিকে চাহিয়া রহিল। নৌকা চলিতেছে, ঈশ্বরচন্দ্রকে কখন দেখা যায়, কখন বা তরঙ্গের উচ্ছাসে কিছু দৃষ্টি হয় না। অনেকেই ভাবিল-ব্রাহ্মণের ছেলে প্ৰাণে মরিয়াছে। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র মরেন নাই, জগদীশ্বর তাহাকে রক্ষা করিয়া ছিলেন। মনে হইতেছে-এই ঈশ্বরচন্দ্রই প্রায় সময়ে আর এক ঈশ্বরচন্দ্র এইরূপই তরঙ্গময়ী বেগবতী ভরা নদীতে ঝাপদিয়া নদী উত্তীর্ণ হইয়া মাতৃচরণ দর্শনে গিয়াছিলেন; তিনি অন্য কেহ নহেন-প্রাতঃস্মরণীয় বিদ্যাসাগর । শাণ্ডিল্য গোত্রীয়গণ দত্তদের দাতৃত্ব বালিশিরায় আরও অনেক ব্রাহ্মণ বংশের বাস। তন্মধ্যে শাণ্ডিল্য গোত্রীয় রঘুনাথ পুরের ভট্টাচাৰ্য গণের পূৰ্ব্বপুরুষ মধুসূদন উপাধ্যায় জামশীর দত্ত বংশীয় নিজ শিষ্য ভানুরাম দত্ত সহ এই স্থানে আসিয়া বাস করেন। ভানুরামের পুত্র স্বরূপ রাম, তাহার পুত্র পুরুষোত্তম, নবাবের দেওয়ান ছিলেন বলিয়া দেশে খুব প্রতিপত্তি ছিল। গুরুবংশে তখন রঘুনাথ তর্কবাগীশ বৰ্ত্তমান দেওয়ান ইহাকেই এক বাড়ী নিৰ্ম্মাণ করিয়া দিয়াছিলেন । কেবল তাই নহে, তাহাকে তিনি ভরণপোষণোপযোগী ব্ৰহ্মত্র ভূমি দান করতঃ সেই স্থানকে "রঘুপুর" নামে সংজ্ঞিত করেন। তিনিই শাণ্ডিল্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ দিগকে তত্ৰত্য রাজপণ্ডিতি পাইবার ব্যবস্থা করিয়া দেন। মধুসূদনের বংশ্যাখ্যান রঘুনাথ নিজপুত্র বিষ্ণুদাসকে তিনবৎসরের রাখিয়া পরলোকবাসী হন। আশ্রয়হীনা জননী তখন আপন পুত্রকে লইয়া পিত্ৰালয় মাধব পাশায় গমন করেন। মাতামহ তাহাকে বিদ্যা শিক্ষার্থ মিথিলায় প্রেরণ করিয়াছিলেন; তথায় তিনি তর্কপঞ্চানন উপাধি লাভ করেন। বিষ্ণুদাস মিথিলা হইতে দেশে আসিয়া ত্রিপুরেশ্বরের সভায় গমন করেন ও তত্রত রাজপণ্ডিতকে বিচারে পরাভূত করেন । ইহার পরে তিনিই তথাকার সভাপণ্ডিতের পদ প্রাপ্ত হন। মহারাজ এই নূতন সভাপণ্ডিতকে দেশে এক বৃহৎ পুষ্করিণী সহ বাটী প্রস্তুত করিয়া দিয়াছিলেন। বিষ্ণুদাসের চারিপুত্র, তন্মধ্যে তিনজন উপাধিধারী পণ্ডিত ছিলেন, ইহাদের নাম-রামজীবন (ইনি সিদ্ধপুরুষ ছিলেন), রামকান্ত শিরোমণি, রূপরাম বিদ্যারত্ন ও দেবীচরণ “বিদ্যাবাগীশ ।" রাম কান্তের পুত্রের নাম জানকীনাথ বিদ্যালঙ্কার, ইনি সস্তানাদি বিহীন। বিদ্যালত্নের পুত্রের নাম বলদেব বাচস্পতি; ইনিও পুত্রাদি বিরহিত । বিদ্যাবাগীশের দুই পুত্র-রামচরণ তর্কবাগীশ এবং কালিকা প্রসাদ বিদ্যাভূষণ। তর্কবাগীশের পৌত্র শ্রীযুক্ত রামজয় ভট্টাচাৰ্য হইতে আমরা এই ক্ষুদ্র বংশ্যাখ্যান সংগ্ৰহ করিয়াছি।