পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ অধ্যায় : প্রাচীন দত্ত-বংশ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৩৩ কল্যাণ ও তৎপুত্রের কথা কল্যাণ দত্তের সময়ে ত্রিপুররাজ দক্ষিণশূর অধিকার করেন, তাহাতে গৌড়-গোবিন্দ প্রদত্ত অধিকার বিলুপ্ত হইয়া যায়, কল্যাণ দত্ত উপায়ান্তর বিহীন হইয়া ত্রিপুররাজের বশ্যতা স্বীকার পূৰ্ব্বক রাজস্ব প্রদানে প্রতিশ্রুত হইয়া নিজ অধিকার পুনঃপ্রাপ্ত হন। কল্যাণ দত্তের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম দিবাকর, তিনি একদা ত্রিপুরায় গমন করেন, তিনি চক্রপূজা উপলক্ষে মদ্যপান করিয়াছিলেন বলিয়া পিতাকর্তৃক পিণ্ড দানাধিকারে বঞ্চিত হন। অন্য একদিন পক্ষিশিকার কালে দৈবাৎ খুল্লতাত পত্নীকে বাণাহত করায় পিতা কর্তৃক বৰ্জ্জিত হন। পিতৃ পরিবর্জিত দিবাকর রোষ ও ক্ষোভে মোসলমান-ধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন ও হাসান খা নামে খ্যাত হন। তিনি পিতৃগৃহ ছাড়িয়া হুগলী নামক গ্রামে গিয়া বাস করেন। এই বংশে পরবর্তী কালে চাদ খা প্রভৃতি বহু ভাগ্যবান ব্যক্তির জন্ম হয়। শ্ৰীবৎস দত্তের ব্যবহার কল্যাণ দত্তের পুত্ৰগণের মধ্যে অনেকেই খ্যাতনামা ছিলেন, অনেকেরই নামে দার্ঘিকাদি এযাবৎ বৰ্ত্তমান আছে; ইহাদের মধ্যে অনেকেই খা উপাধি ছিল । বংশ তালিকায় কল্যাণ দত্তের ২য় ও ৬ষ্ঠ পুত্রের খা উপাধি লিখিত হইয়াছে। কল্যাণ দত্তের তৃতীয় পুত্র বঙ্গদত্তের বংশ বহু বিস্তৃত হইয়া পড়িয়াছিল, তাহার ৪র্থ পুত্রের নাম ভরত দত্ত: আমাদিগকে জনৈক বিবরণ প্রদাতা জানাইয়াছেন যে ইহার দত্ত খা উপাধি ছিল। কল্যাণ দত্তের পঞ্চম পুত্র শ্ৰীবৎস দত্ত, ইনি দত্তকুলের এক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং প্রধান বংশ-প্ৰবৰ্ত্তক। তাহার জীবদ্দশায় "গৌড়ের বাদশাহ" দক্ষিণশূর হইতে ত্রিপুরা আক্রমণ করেন। শ্ৰীবৎস তখন ত্রিপুরার করপ্রদ সামন্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি ভবিষ্যৎ ভাবিয়া এই অভিযানে গৌড়ের বাদশাহকেই বিশেষ সহায় করেন ও পরে পুরস্কার স্বরূপ, ভানুগাছ, আমদপুর, ছয়চিরি, ইটা-পাচগাও এবং পুটিজুরী প্রভৃতি স্থান প্রাপ্ত হন। বাদশাহ তাহাকে খা উপাধি দান করেন; তদবধি তিনি দত্ত খা নামে খ্যাত হন ৫ কয়েক বৎসর পরে ত্রিপুরাধিপতি এই দত্ত খার সহিত সদ্ভাব রাখা সঙ্গত বোধে প্রধান উজিরকে দ্বিসহস্র হস্তীর সহিত প্রেরণ করেন। তিনি বিজয়পুরেও আগমন করিয়া দত্তখার নিকট আগমন সংবাদ পাঠাইলেন । দত্ত খাঁ পূৰ্ব্বকথা স্মরণে উজির সহ সাক্ষাৎ করিতে সঙ্কোচিত হইলেন । না গেলেও চলিবে না, বহু ভাবিয়া চিন্তায় তিনি ভ্রাতা বঙ্গদত্তের পুত্র হরিদত্তকে “সায়বানী দোলায়"৭ চড়াইয়া উজির সকাশে প্রেরণ করিলেন। ৪ লাখাহ দত্ত বংশীয়গণ ইহারই বংশসমূত বলিয়া খ্যাত। তাহারা “বড়দত্ত খানের" সন্তান বলিয়া ভবানী দত্তের লিপিতে লিখিত আছে। শ্রীযুক্ত প্রমোদ চন্দ্র দত্ত মহাশয় হইতে আমরা যে বংশ তালিকা পাইয়াছি, এই প্রাচীন তালিকাতে কল্যাণ দত্তের ১৮ পুত্রের মধ্যে ১২ জনের নাম লিখিত হইয়াছে, বাহুল্য বৰ্জ্জনের জন্য ৬ জনের নাম লিখিত হয় নাই; কিন্তু স্বীকৃত হইয়াছে। তন্মধ্যে দত্ত খাঁ কি বড়দত্ত খা বলিয়া কোন নাম পাওয়া যায় নাই; গন্ধৰ্ব্বখা ও মহেন্দ্র খা বলিয়া দুইটি নাম আছে মাত্র । জ্ঞাত হওয়া যায় যে উক্ত তালিকাতে লিখিত ভর দত্ত বা ভরত দত্তের উপাধি দত্ত খাঁ। দত্ত বা অতি ক্ষমতাশালী পুরুষ ছিলেন । ইহার কনিষ্ট শ্ৰীবৎস দত্তও অতিশয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন। এবং তাহার উপাধিও দত্ত বা ছিল বলিয়া জানা যায়। এই দুই দত্ত থা মধ্যে জ্যেষ্ঠই বড়দত্ত খা নামে খ্যাত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সাতগার বংশ তালিকাতে তাহার উল্লেখ নাই । তাহাতে উল্লেখ না থাকাতে কেহ কেহ অনুমান করেন যে লাখাই, আতুয়াজান প্রভৃতি স্থানের দত্ত বংশীয়গণ মুকুন্দের সন্তান এবং ইছামতী হইতে আগত । কিন্তু লাখাইর দত্ত বংশীয়গণ কল্যাণ দত্তেরই সন্তান বলিয়া খ্যাত, তাহারা মুকুন্দের সন্তান নহেন । লাখাইর দত্তবংশের সংক্ষিপ্ত কথা ৩য় ভাগ ৪র্থ খণ্ডে উক্ত হইবে। ৫. শ্ৰীবৎসের পরবর্তী কালে বংশের প্রধান ব্যক্তি এই উপাধি স্বয়ং গ্রহণ করিতেন । ৬. বালিশিরার সন্নিহিত এক ক্ষুদ্র পল্লী ।