পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড উজির হরিদত্তকে সাদরে গ্রহণ করিলেন ও তাহাকে ত্রিপুর রাজের সামন্ত নিযুক্ত করিয়া “নারায়ণ" উপাধিতে ভূষিত করিলেন এবং উদনার দক্ষিণ; হইতে পৰ্ব্বত পৰ্য্যন্ত অষ্টক্রোশ পরিমিত স্থানের অধিকার প্রদান করিলেন। এই স্থানটি বালুকা-বহুল ছিল, কিন্তু সে বালুকাতে বহু শস্য জনিত, তাই উজির সে স্থানকে "বালি হীরা" নামে খ্যাত করেন ৮ হরিদত্ত হরিনারায়ণ নামে খ্যাত হইয়া ইহার উপস্বত্ব-ভোগী হন। পরবর্তী কালে হরিনারায়ণের অতি বৃদ্ধপ্রপৌত্র চন্দ্রনারায়ণের সময় এই ভূমি শ্রীহট্টের নবাবের অধিকারে আসে, চন্দ্রনারায়ণ তত্ৰত্য চৌধুরাই প্রাপ্ত হন। দত্ত খা ব্রাহ্মণগণকে গান্ধিজুরি গ্রাম দান করিয়াছিলেন, ঐ গ্রাম তদবধি ব্রাহ্মণ-শাসন নামে পরিচিত হইয়া আসিতেছে। বাহাদুরপুরের বিস্তীর্ণ খেওয়ার জন্য লোকেরা সতর শত কৌড়ি দিয়া দত্ত খানের নিকট উহা ক্রয় করিয়াছিল। এই সতর শত কৌড়ির সংসৃষ্ট বলিয়া পরগণার নাম সতর শতী হয় । দত্ত খানের কঠোরতা দত্ত খানের দুই ভগিনী ছিলেন, রাঢ়দেশ হইতে দুইজন বৈদ্য-সন্তান আনাইয়া ভগিনীদ্বয়ের বিবাহ দেন। ভগিনীদ্বয়ের গর্ভোৎপন্ন পুত্রদ্বয়ের নাম যথাক্রমে বিনোদ ও হরিশ্চন্দ্র। বিনোদ কালক্রমে মাতুলের দপ্তরের অধিকার পাইয়া ছিলেন। কিন্তু একটি সামান্য কারণে শেষে তাহার বিরাগ-ভাজন হন। কোন এক গুপ্তস্থানে খড়িদ্বারা বিনোদ কি অঙ্কপাত করিয়াছিলেন, তদৃষ্টে দত্ত খানের মনে সন্দেহ জাত হয়; তিনি ভাবিলেন যে, একান্ত অন্তরালে এই অঙ্কপাতের কারণান্তর নাই; ইহ: তাহারই অর্থহরণের হিসাব মাত্র। এইরূপ মনে হওয়াতে তাহার অত্যন্ত ক্রোধোদয় হয়, এবং তাহাতে সানুজ নিজ ভাগিনেয়কে অনায়াসে হাইল-হাওরে ডুবাইয়া মারিতে অনুমতি দিলেন। বিনাদোষে দুইজনের জীবন নষ্ট করা আজ্ঞাবাহকের প্রাণে সহিল না, সেই হাইল-হাওরে এক নৌকায় উভয় ভ্রাতাকে তুলিয়া দিয়া চলিয়া আসিল । নৌকা বায়ুবেগে ইতস্ততঃ চালিত হইতে লাগিল । গিয়াছিলেন, তিনি বায়ুবেগে বিঘুর্ণিত এক নৌকা দেখিয়া উহা কাছে আনাইলেন ও তাহাতে ভাগিনেয়দ্বয়কে দেখিতে পাইয়া লইয়া আসিলেন । ইহার অনুরোধে শ্ৰীবৎস ভাগিনেয়দ্বয়কে ক্ষমা করিলেন বটে, কিন্তু একত্রে রাখা অনুচিত বোধে “চৌয়ালিশ পত্তনে" পাঠাইয়া দিলেন। কাহারও দিন সমান যায় না; মাতুল কর্তৃক পরিবর্জিত হইলেও ইহাদের দিন ফিরিল; কিছুদিন পরে গৌড়-বাদসাহের উজির চেয়ালিশ আগমন করেন। তিনি দুই ভ্রাতার সহিত আপন ৭. বড়লোকের উপযোগী দোলা। শ্রীচৈতন্য ভাগবতে লিখিত আছে যে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দ্বিতীয় বাবের বিবাহ কালে সায়বানী দোলায় তাহাকে আরোহিত করিয়া, সাড়ম্বরে বরযাত্রীর দল কন্যাগৃহে গিয়াছিলেন। ৮, “এই দেশে বারি বহু দেখি কি কারণ। তাতে উঠি একজন কহিলা তখন। বালি নহে হীরা এই শুন মহাশয় । বালির কারণে দেশে শস্য বহু হয়। তখনে উজির আসি সভাতে কহিল । হীরা যদি হয় বালিহীরা নাম থৈলu"-দত্ত বংশাবলী (অমুদ্ৰিত)। এই বালিহীরাই পরে লালিশিরা পরগণা বলিয়া খ্যাত হইয়াছে ।