পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ অধ্যায় : প্রাচীন দত্ত-বংশ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৩৫ তনয়া দ্বয়ের বিবাহ দেন ও চৌয়ালিশ দত্তখার অধিকারচু্যত করিয়া ইহাদিগকেই অর্পণ করেন। দত্তখা “ললাট পূরিয়া উদ্ধ তিলক” দিতেন। একদা একজন ব্রাহ্মণ তাহাকে ব্রাহ্মণবোধে নমস্কার করেন, তদবধি (তাহার নিৰ্দ্দেশে) দত্তবংশে তিলক ধারণ রহিত হইয়াছে। দত্তখা তিন বিবাহ করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে, তাহাতে তাহার ছয় পুত্রের উদ্ভব হয়। তিনি নিজেই স্বীয় পুত্রগণকে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে স্থাপন করিয়া ভবিষ্যৎ বিবাদের মূলচ্ছেদ করিয়া যান। দত্তখার পরিবর্তিগণ দত্তখা শাসন গ্রামে একবাড়ী প্রস্তুত করিয়া জ্যেষ্ঠপুত্র সতানন্দকে তথায় স্থাপিত করেন, তাহার বংশধরেরা শাসনবাসী। তিনি দ্বিতীয় পুত্রকে ভূনবীর গ্রামে এবং তৃতীয় পুত্ৰ শ্ৰীমন্তকে ভীমশী গ্রামে বাসস্থান নিৰ্ম্মাণ করিয়া বাস করিতে দিয়াছিলেন। সুয়াই দত্ত প্রমুখ ইহাদের অপর ভ্রাতৃদ্বয় নিঃসন্তান ছিলেন এবং পিতার জীবিতাবস্থাতেই সম্ভবতঃ মৃত্যু মুখে পতিত হন।৯ সুয়াই দত্তের জাতি ও বৃত্তিত্যাগ ইহাদের সময় পৰ্যন্ত জাতিবৃত্তি চিকিৎসা পরিত্যাগ করা হয় নাই। সুয়াই দত্তের পর হইতে এবংশে বৈদ্যক বিদ্যার আলোচনা রহিত হয়। কথিত আছে, চেয়ালিশের জনৈকা ব্রাহ্মণী প্রসবের প্রাক্কালে কঠোর ক্লেশ ভোগ করিতে ছিলেন, সুয়াইদত্ত ইহার চিকিৎসায় বৃত হইয়া বিশেষ বুদ্ধি কৌশলে প্রসূতি ও সন্তানের জীবন রক্ষা করেন। কিন্তু তাহার মনে এই ভয় হইয়াছিল যে একটুক ব্যত্যন্ত হইলে তাহাকে নারীবধের (ব্রাহ্মণী হত্যার) পাতকী হইতে হইত। তিনি এ বৃত্তি ত্যাগ করিলেন ও স্ববংশীয়গণকেও এই বৃত্তি গ্রহণে নিষেধ করিয়া গেলেন; যথাঃ “----আজিহনে ত্যাগ করিল ইহারে । আমার গোত্রে যেন কেহ বৈদ্যক না করে। অস্ত্র সব যতছিল জলেতে ফালাইলা । সেই হনে এই গোত্রে বৈদ্যক ছাড়িলা৷"-দত্ত বংশাবলী (অমুদ্রিত) চিকিৎসা ব্যপদেশে সুয়াই সৰ্ব্বত্র যাইতেন। কামার গ্রামে জনৈক শূদ্রের কন্যার বিবাহে নিমন্ত্রিত হইয়া তিনি বিবাহ করিয়া ফেলিলেন। সুয়াই তজ্জন্য পিতা কর্তৃক পরিবজ্জিত হইলেন ॥১০ ৯_শ্ৰীবৎসের অপর ভ্রাতা লক্ষণ দত্তের পৌত্র মাণিক্যদত্ত দিনারপুরের জমিদারের চাকুরী স্বীকার করিয়া সেই স্থানে গমন করেন; এবং অন্য ভ্রাতা প্রাণ দত্ত পৈলে চাকুরী গ্রহণ করেন । ইহার পুত্র হরিনাথ, হরিনাথের পুত্র রামেশ্বর দত্ত একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। ১০. “সুখাইয়ে দেখিলে কন্যা বড়ই সুন্দর। তখনে ঠাকুরে এই কথন শুনিয়া। করিলেন তানে ত্যাগ কুপুত্র জানিয়া। কামার গ্রামেতে বিয়া কৈল কিলা গিয়া । জেই নাহি জানে বলে কুখ্যাতি করিয়া। এই হেতু সুয়াই গোত্রের বার হৈল। সংসারেতে কেহ তান বংশ না রহিল।"- দত্ত বংশাবলী (অমুদ্রিত)