পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড আত্মকলহে ফল শতানন্দের ছয় পুত্র; হরিদাসের এক পুত্র এবং সীমন্তের পাঁচপুত্র হয়। সতানন্দ ত্রিপুরেশ্বরের “ঠাকুর" ছিলেন, তাহার মৃত্যুর পর তৎপুত্র মাধবদত্ত “ঠাকুর” বলিয়া গণ্য হন। কিন্তু তখন রাজদরবারে আবেদন করেন; তাহার ফলে মাধবের পরিবৰ্ত্তে তিনি ঠাকুর গণ্য হন। মাধব ইহার প্রতিবাদ করেন। দেশের কৈবৰ্ত্তগণ তাহার পক্ষাবলম্বন করিয়াছিল, তাহারা অর্থদানে তদীয় সহায়তা করিতে লাগিল। মাধব ইহাদিগকে বশে রাখিবার জন্য তাহাদের প্রধান রঙ্গকৈবৰ্ত্তের কন্যার পাণি গ্রহণ করিয়া জাতিচু্যত হইলেন। ঠাকুর পদবি প্রাপ্তিও আর ঘটিল না। এই মাধবের পুত্রের নাম গোবিন্দ দাস, তৎপুত্র কন্দৰ্প খাঁ তদ্বংশে বিশেষ খ্যাতিমান ব্যক্তি ছিলেন। মিশারীয় দত্ত মাধব এত চেষ্টা করিয়াও ঠাকুর রহিতে পারিলেন না দেখিয়া তাহার ভ্রাতা যাদব দত্তগ্রাম হইতে বালিহীরা চলিয়া আি যাদবের পৌত্র পাৰ্ব্বতী দাস তথা হইতে তরফে গমন করেন, মিরাশী গ্রামের দত্তেরা এই পাৰ্ব্বতী দাসের সন্তুতি । ইহার অধস্তন অষ্টম পুরুষ শ্ৰীযুত প্রমোদ চন্দ্র দত্ত মহাশয় “দত্ত বংশ বিবরণ" প্রেরণে আমাদের বিশেষ সহায়তা করিয়াছিলেন, তদবলম্বনেই এই বৃত্তান্ত লিখিত। নায়ক দত্ত যাদব দেশত্যাগী হইলে তাহার অপর ভ্রাতা নায়ককে লইয়া তদীয় জননী বাণিয়াচুঙ্গের জমিদারের শরণাপন্ন হন। বৃদ্ধ হরিহাস দেখিলেন ইহা তাহার পক্ষে যশস্কর নহে, সেই জন্য বিশেষ আড়ম্বর সহকারে বাণিয়াচঙ্গ হইতে ভ্রাতৃবধু সহ ভ্রাতুষ্পপুত্রকে আনাইয়া তিনি “ঠাকুর” পদবি গ্রহণ জন্য তাহাকে বলিলেন। কিন্তু নায়ক দুই খুল্লতাত বিদ্যমানে “ঠাকুর" পদবি গ্রহণে সম্মত হইলেন না । হরিদাস নিজ জামাতাকে শাসনে স্থাপন করিয়াছিলেন । ইহারই হস্তে নায়কের শিক্ষাভার প্রদত্ত হয় । এই জামাতা পরে শ্রীহট্টের উজিরের অপবাদ করিয়া গৌড়াধিপতির কাছে এক পত্র লিখেন। তখন নায়কের সাক্ষ্যে উজির অপবাদ মুক্ত হন। বলা বাহুল্য যে, তখন জামাতা দাস মহাশয়ের শাস্তির আদেশ হয়, পাইক গণ তাহাকে “অশেষ বীভৎস করি মারয়ে অনেক ।” গ্রন্থকৰ্ত্তা গোপীনাথ কাজেই তখন নায়ক সহস্র মুদ্রা প্রদানে ইহাকে শাস্তি হইতে মুক্ত করেন । নায়কের পুত্রের নাম শুভরত্ন খা, তৎপুত্র হৃদয়ানন্দ, ইনি পুরন্দর খা পদবিতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। নায়কের দ্বিতীয় পুত্রের নাম রামানন্দ, ইহার মধ্যম পুত্রের নাম রামনাথ, রামনাথের পুত্র ধনরাম, তাহার তৃতীয় পুত্রের নাম গোপীনাথ । এই গোপীনাথ দত্তই "দত্ত বংশাবলী” রচয়িতা । কেবল তাহাই নহে, গোপীনাথ মহাভারতের "দ্রোণপৰ্ব্ব” “নারীপৰ্ব্ব” প্রভৃতি পয়ারে রচনা করেন। এতদেশীয় মণিপুরীগণ উত্থান একাদশীর মাসে, গোপীনাথের নারীপৰ্ব্ব পাঠ করিয়া থাকে। গোপীনাথ দত্তের চারিপুত্র, তন্মধ্যে সৰ্ব্ব কনিষ্টের নাম সোণারাম দত্ত, ইহার স্বহস্ত লিখিত প্রায় দেড়শত বৎসরের প্রাচীন পুঁথির অনুসরণে এই বিবরণ লিপিবদ্ধ হইয়াছে। সোণারামের অগ্রজ রাম জীবন বৈষ্ণব হন।