পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম অধ্যায় : চৌয়ালিশ ও ইটার সিদ্ধ বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৪৭ পিতৃবিয়োগ ঘটিয়াছিল, রাজ কাৰ্য গ্রহণের কিছুদিন পরেই তাঁহাদের মাতৃবিয়োগ ঘটে। একদা ঢাকায় হিসাব সংক্রান্ত কৰ্ম্মচারীর আবশ্যক হওয়ায় মুর্শিদাবাদে তাহা জ্ঞাপিত হইলে, নবাবের অভিপ্রায়নুসারে যাদব ঢাকায় যাইতে আবিষ্ট হন। জ্যেষ্ঠকে দূরদেশে যাইতে হইল; কনিষ্ঠ মাধব একাকী তথায় যাইতে তাহাকে দিলেন না; অনেক যোগাড় যন্ত্র করিয়া তাহার সাহায্যকারী রূপে স্বয়ং সঙ্গে চলিলেন। রাজ কাৰ্য্য ব্যপদেশে ঢাকায় তাহারা বহুদিন বাস করেন। স্বীয় কার্য্যে দক্ষতা ও চরিত্রগুণে তাহারা সত্ত্বরেই ঢাকা-নবাবের বিশ্বাস ভাজন হইয়া উঠেন ও ইহার পুরষ্কার স্বরূপ তাহার আদেশে শ্রীহট্টের রাজস্ব সংগ্রহের কাৰ্য্যে উন্নীত হইয়া অনতিবিলম্বে শ্রীহট্টে প্রেরিত হন। শ্রীহট্টে আগমন শ্রীহট্ট তখন সাক্ষাৎ ভাবে ঢাকা নবাবের অধীন ছিল, ইহা উক্ত হইয়াছে। ইহাও কথিত হইয়াছে যে, শ্রীহট্টের তরফ, লাউড়, ইটা প্রভৃতি স্থানে এক সময় স্বাধীন খণ্ড রাজ্য সমূহ ছিল। এই জন্য মোসলমান আমলে দেখিতে পাওয়া যায় যে, ঐ সকল স্থানে এক এক কার্যালয় ছিল। যাদব ও মাধব ইটার কাছারীতে আগমন করিয়া তথায় বাস করেন। তাহদের বাসস্থান অদ্যাপি “হাওলি” নামে কথিত হয়। কয়েক বৎসর তাহারা সুখ্যতির সহিত সরকারী কাৰ্য্য সম্পাদন করিলেন, তৎপর একদা দেশে অজন্ম হওয়াতে এবং নিম্নস্থ কৰ্ম্মচারিগণের শৈথিল্যে বাৎসরিক “মাল" (সংগৃহীত রাজস্ব) নিয়মিত রূপে ঢাকায় প্রেরিত হইতে পারিল না। ইহারা নবাবকে স্থানীয় অবস্থা জানাইলেন, কিন্তু তাহা অগ্রাহ্য হইল। তৎকালে দূরদেশের উচ্চ কৰ্ম্মচারিবর্গ প্রায়শ স্বাধীনভাবে চলিতেন। রাজস্ব সংক্রান্ত কর্মচারীরা সুবিধা পাইলেই সংগৃহীত অর্থ আত্মসাৎ করিতে ইতস্ততঃ করিতেন না, এই জন্য কর্তৃপক্ষও তাহাদিগকে বিশ্বাস করিতেন না, কাজেই যাদব মাধবের আপত্তি গৃহীত হইল না, এবং তাহাদিগকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য “সোয়ার” (অশ্বারোহী) প্রেরিত হইল। “সোয়ার” আসিতেছে শুনিয়াই হাওলির আমলাবর্গ যে যথায় পারে পলাইল; কারণ “সোয়ার” আসিলে প্রায় অত্যাচার হইত। যাদব তখন পীড়িত ছিলেন, তিনি দূরবত্তী জঙ্গলে আশ্রয় নিতে না পারিয়া, সন্নিকটবৰ্ত্ত গয়ঘড় গ্রামে গিয়া গোপনে অবস্থিতি করিলেন; মাধব যে কোথায় অদৃশ্য হইলেন, তাহা জানা গেল না।৮ যাদব ঘোষ গয়ঘড়ে গয়ঘড়ে তখন দত্তবংশীয় গণই প্রধান ছিলেন। তত্ৰত্য বিজয় দত্তের জয়মঙ্গলা নামী বিবাহ যোগ্যা এক কন্যা ছিল; বিজয় যাদবকে সেই কন্যা সম্প্রদান করিতে ইচ্ছা করিয়া স্বীয় অভিপ্রায় জ্ঞাপন করিলেন। যাদব দৈবতঃ নবাব সরকারে দোষী হইয়া পড়িয়াছেন; এক্ষণে এই নিৰ্জ্জন জঙ্গলাকীর্ণ প্রদেশ পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক পশ্চিমে মুর্শিদাবাদে বা তদ্রুপ কোন স্থানে যাওয়া সুবিধাজনক নহে বলিয়া বোধ করিলেন এবং সহজেই এই প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। বিবাহ হইয়া গেল, যাদব যৌতুকে জীবন ধারণোপযোগী বহু ধন সম্পত্তি, দাস-দাসী এবং ৮. জনশ্রুতি আছে যে, মাধৰ তিপরাদের আশ্রয়ে অনেক দিন ছিলেন, তথা হইতে পরে তিনি উত্তরাঞ্চলে গমন করেন। শ্রীহট্টের বেতাল পরগণাস্থ যে কয়েক ঘর ঘোষ বাস করেন ইহারা মাধব সন্তান-বলিয়া উক্ত হন।