পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম অধ্যায় : চৌয়ালিশ ও ইটার সিদ্ধ বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৪৯ গৌরকান্তি নবীন নাগরকে দেখিতে পাইলেন। কৃষ্ণ ঘোষ সে অপরূপ রূপপ্রভা বিলোকনে বিহ্বল ও আত্মবিস্তৃত হইয়া গেলেন। একি জাগ্রত স্বপ্ন ঘোষ ঠাকুর দেখিলেন, যেন এ জগত গৌর কান্ত দয়ারামের প্রেম-হিল্লোলে আপ্লাবিত রহিয়াছে। তিনি কে এবং কোথায়, এ জ্ঞান তাহার তিরোহিত হইল; । তহার স্বতন্ত্র সত্ত্বা যেন বিলোপ পাইল; তখন যেন শুনিতে পাইলেন,-যেন শত বঁাশরী বাজিয়া উঠিল; সেই গৌর-কান্ত পুরুষ করুণার স্বরে আশ্বাস দিয়া বলিলেন-“চিন্তা কি কৃষ্ণচন্দ্ৰ! তোমার গৃহে আমার প্রিয় ভক্তের উদ্ভব হইবে, তোমার বাঞ্ছা পূর্ণ হইবে; তাহাকে পবিত্র ভাবে প্রতিপালন করিও।” আর কিছু নাই, নিমেষ মধ্যে সে রূপরাশি যেন বাতাসে মিশিয়া গেল; ঘোষ ঠাকুরের অপূৰ্ব্ব জগৎ স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেল। ইহার কিছুদিন পরেই কৃষ্ণ ঘোষের পত্নী রেবতী গর্ভধারণ করিলেন; এই গর্ভে মহাত্মা গঙ্গারামের উদ্ভব হয়। গঙ্গারামের জন্মের কিছু পরে কৃষ্ণ ঘোষ কালগ্রাসে পতিত হন। রেবতীর মনে ধারণা ছিল যে পুত্র এক অনন্য সাধারণ পুরুষ হইবে, পুত্রকে তিনি অতিযত্নে প্রতিপালন করেন; কিন্তু পুত্রের বাল্যচরিত্র বিপরীত দৃষ্ট হইতে লাগিল। লেখা পড়ায় মন নাই, কেবল চাঞ্চল্য; দুষ্ট বালক বর্গ সহ ঘনিষ্ঠতা। একদা মাতা তাহাকে তীব্র তিরস্কার করেন, বালকের মনে ইহাতে বড়ই ধিক্কার জন্মে, এবং বালস্বভাববশতঃ সে সন্নিকটবৰ্ত্তী বনে গমন করে। কিন্তু সেই স্থানে গেলে হঠাৎ তাহার মনে এক ভাবোদয় হইল, তিনি আর গৃহে আসিলেন না; একাদশ বর্ষীয় বালক,-সরস্বতী-পতির আরাধনায় বৃত হইল। তপস্বী গঙ্গারাম ধ্রুবের ন্যায় গভীর অরণ্যে বৃক্ষমূলে ঐ কে বালক বসিয়া? এটি কি সেই চঞ্চল গঙ্গারাম? গঙ্গারামই বটে; কিন্তু এক্ষণে তাহার সেই চাঞ্চল্য নাই; এখন গঙ্গারাম পরম সাধক। গঙ্গারাম অনতিবিলম্বে দেব কৃপায় সিদ্ধ পুরুষ বলিয়া খ্যাত হইলেন, তাহার জীবনে অনেক অলৌকিক কাণ্ড ঘটিতে লাগিল, দেখিয়া সাধারণ লোক স্তম্ভিত হইল। সে অদ্ভূত কাহিনী—তাহার জীবেদয়া, জীবোদ্ধার বাত্তা, বৃন্দাবন গমন ব্যপদেশে দিল্লী নগরে তাহার অলৌকিক কীৰ্ত্তি, তাহার সৰ্ব্বজ্ঞতাদি গুণ প্রকাশ ইত্যাদি সংবাদ আমরা ৪র্থ ভাগে জীবন চরিত প্রসঙ্গে ব্যক্ত করিব। এই গঙ্গারামেরই নামান্তর বঞ্চিত ঘোষ । ইটার রাজবংশীয় বৃদ্ধ দেওয়ান ইস্রাইল খাঁ তখনও জীবিত ছিলেন, তিনি এই বালকতপস্বীর সংবাদ জ্ঞাত হইয়া, তৎপ্রতি বিশেষ সহানুভূতি প্রকাশ করেন, ও তাহার তপঃক্ষেত্র পরিষ্কৃত করাইয়া তাহাকে দান করেন। সেই স্থানই “মোহন্তালয়" (অপভ্রংশ) মহলাল নামে খ্যাত হয়। এই স্থানই তদ্বংশীয়ের বাস গ্রাম রূপে পরিণত হইয়াছে। মোসলমান জমিদার কর্তৃক এইরূপে তিনি সৎকৃত হইলে, হিন্দুগণ তাহার প্রতি অধিকতর শ্রদ্ধাম্বিত হইলেন; অনেকেই তাহার শিষ্যত্ব স্বীকার করিলেন। তাহার অতুলনীয় ধৰ্ম্মানুরাগে আকৃষ্ট হইয়া ব্রাহ্মণ সমাজেও অনেকে এই সিদ্ধ মহাত্মার শিষ্যত্ব স্বীকার করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে রাজা বিপ্রহরির নাম সৰ্ব্বগ্রগণ্য। রাজা বিপ্রহরির বাটী ইহাতে ছিল, তিনি ইটার এক ধনী জমিদার ছিলেন সন্দেহ নাই; তৎসম্বন্ধে গ্রন্থপত্রে অধিক বিবরণ নাই ॥১০ ১০. পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত ১ম অধ্যায়ে “রাজা" ধৰ্ম্মনারায়ণের বংশে রাজা বিপ্রহরির নামে আছে, তিনি সিদ্ধ মহাত্মা। উভয়ে অভিন্ন কিনা সহজেই বুঝা যায়। উভয়ের অবস্থিতি কালও একই।