পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড নারায়ণের উদ্ভব হয়। লক্ষ্মী নারায়ণের “জমি ভূমি” ছিল, কিন্তু যথা সময়ে রাজস্ব শোধ করিতে পারিতেন না, তাই এক সময়ে তাহা “এস্তেফা” দেন। এই সময় সাংসারিক ঝঞ্ঝাটে উত্ত্যক্ত হইয়া বিষাদ ভরে তিনি অন্নজল ত্যাগ করিয়া সাত দিন ছিলেন। তদবস্থায় শেষ রাত্রে নিত্যানন্দ প্রভু তাহাকে স্বপ্নে দর্শন দেন। যখন লক্ষ্মী নারায়ণের নিদ্রাভঙ্গ হইল, তখন তাহার মনের অবস্থা অনেকটা পরিবৰ্ত্তিত হইয়াছে; স্বপ্ন তাহার চিত্তে এক তরঙ্গ তুলিয়া দিল, সংসারের অনিত্যতা হৃদয়ঙ্গম হইল, তিনি “বিকল হইয়া খেদে পূৰ্ব্বমুখী” চলিলেন ও নানাস্থান অতিক্রম পূৰ্ব্বক “এক রাত্রে” শ্রীহট্টের সতরশতীর হাওরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন; তথা হইতে তিনি ইটায় আসিলেন ও তথায় নিজ “দরবেশী জারি” করিয়া কোন এক ব্যক্তিকে শিষ্য করিলেন । ইটার বর্মাণ গ্রামে বাসুদেব দত্ত নামক এক ব্যক্তির এক বিবাহ যোগ্যা কন্যা ছিল, কন্যার নাম রত্নাবতী। বাসুদেব আগন্তুকের “ফকিরী” দেখিয়া মুগ্ধ হন ও ইহারই করে কন্যা সম্প্রদান করিয়া সেই গ্রামে তাহাকে স্থাপন করেন ধৰ্ম্মানুরাগী জামাতা নিজ বাটিকাতে শ্যাম সুন্দরের সেবা স্থাপন করিয়া গৃহী হইলেন। লক্ষ্মী নারায়ণের এক পুত্র হয়, তাহার নাম সুবল নারায়ণ। পিতা অল্প বয়সেই ইহাকে সাতগার দত্ত বংশীয় লীলাবতী নামী এক সুন্দরী বালিকার সহিত বিবাহ দেন। এই বিবাহে সুবলের রামজীবন নামে এক পুত্র জাত হয়। রামজীবনের পুত্রের নাম জগন্নাথ ! জগন্নাথ একজন ইষ্ট নিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। একদা যখন তিনি “সন্ধ্যাহ্নিক” করিতেছিলেন, তখন এক বিষধর কৃষ্ণ সৰ্প তাহাকে “নাগপাশে বন্ধ করে। তিনি কিছুমাত্র ব্যস্ত না হইয়া অকুষ্ঠিত চিত্তে আহ্নিক সমাধা করিলেন, এদিকে সাপটাও ধীরে ধীরে বন্ধন মুক্ত করিয়া চলিয়া গেল। জগন্নাথের দুই বিবাহ, উভয় স্ত্রীর নামই রেণুকা ছিল। প্রথম পত্নী, রেণুকা যদুনন্দন প্রভৃতি তিন পুত্র রাখিয়া পরলোকগতা হন, তাহার দ্বিতীয় পত্নী রেণুকার গর্ভজাত সন্তানের নাম গৌরকিশোর; ইনি বৰ্ম্মাণ গ্রামে শ্যামরায় বিগ্রহ স্থাপন করেন। প্রথম রেণুকাপুত্র যদুনন্দের পুত্রের নাম ধনঞ্জয়, ইহার পুত্রের নামই শ্যামকিশোর ঘোষ। শ্যাম কিশোরের জন্ম-প্রসঙ্গ ধনঞ্জয়ের পত্নীর নাম সুখময়ী। ধনঞ্জয় চোঁয়ালিশের সেন বংশে বিবাহ করেন; সুখময়ীর স্বভাব অতি সুন্দর ছিল, দেবতার প্রতি ভক্তি এবং পতির প্রতি অনুরক্তি তাহাকে আরও মনোরম করিয়া তুলিয়াছিল। স্বামী স্ত্রীতে অত্যন্ত প্রণয় ছিল। ধনঞ্জয় পরম ধাৰ্ম্মিক ব্যক্তি ছিলেন, কিন্তু পত্নীকে ছাড়িয়া কোথাও যাইতে পারিতেন না; তাহার বৃন্দাবন দর্শনের সাধ মনেই বিলীন হইত। পারিবারিক অবস্থাও তাহার অনেকটা অন্তরায় ছিল, কিন্তু অবশেষে তিনি আর রহিতে পারিলেন না। এক রাত্রে স্ত্রীকে জীবনের অনিত্যতা ইত্যাদি বহু বিষয়ে উপদেশ দিলেন, স্বধৰ্ম্মে থাকিয়া শ্যাম রায়ের প্রতি ভক্তি রাখিয়া দুৰ্ব্বার মনকে স্থির রাখিতে পরামর্শ দিলেন এবং শেষ রাত্রে উঠিয়া পলায়ন পূৰ্ব্বক বৃন্দাবন চলিলেন। পরদিনই সুখময়ী পতির উপদেশের মৰ্ম্ম বুঝিলেন, এবং শ্যামরায়ের প্রতি চিত্ত সমর্পণ পূৰ্ব্বক জগৎপতিকেই পতিজ্ঞানে ভজনা করিতে লাগিলেন, তাহার দেবতার প্রতি এতাদৃশী আশক্তি দর্শনে লোকে ধন্য ধন্য করিতে লাগিল । লোকের মত মুহূৰ্ত্তে পরিবৰ্ত্তিত হইয়া যায়। সুখময়ী যেমন প্রশংসিতা হইয়াছিলেন, ৩/৪ মাস যাইতে না যাইতেই ততোধিক নিন্দিতা হইলেন। ধনঞ্জয়ের বৃন্দাবন যাত্রার ৩/৪ মাস