পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড ভাটেরায়ও যে গৌড়গোবিন্দের সম্বন্ধ তদ্রুপেই সূচিত না হইয়াছে এমন বলা যায় না। পরন্তু গৌড়গোবিন্দের সময়ে এস্থানেও শ্রীহট্টের গৌড় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল, হয়তঃ তখন এই স্থানে তাহার রাজকীয় কোন কাৰ্য্যালয়াদি অবস্থিত ছিল, এস্থানেও হয়ত তিনি আসিয়া “দরবারি গোল” ইত্যাদি বিশিষ্ট নামে কোন কোন স্থান খ্যাত হইয়াছে। গৌড় গ্রাম ও সাতপারি দীর্ঘী গৌড়গোবিন্দের রাজকীৰ্ত্তি শ্রীহট্ট শহর ব্যতীত অন্যত্র যে ছিল না, তাহা নহে। বিশ্বনাথ থানার এক মাইল উত্তরে "গৌড়গ্রাম” নামে এক পল্লী আছে, এই স্থানে গৌড়গোবিন্দের এক বাটিকা ছিল, তাহাতেই সে স্থান গৌড়গ্রাম নামে খ্যাত হইয়াছে। রাজবাটির ভগ্নাবশেষের পরিচিহ্ন গৌড়গ্রামের অতীত কথা স্মরণ করাইয়া দিতেছে। সে স্থানেও রাজবাড়ীর পূৰ্ব্বদিকে এক "সাতপারি দীর্ঘী" আছে। দীঘীর মধ্যস্থলে মাস্তুলের মত বৃহৎ একটা স্তম্ভ (জলের ৩/৪ হাত উপরে উখিত ভাবে) দেখিতে পাওয়া যায়। ২/৩ ব্যক্তিকে আকর্ষণ করিলে উহা কিঞ্চিৎ উথিত হয়, ছাড়িয়া দিলে আবার ঝনঝনারবে পড়িয়া যায়। এই স্তম্ভ সম্বন্ধে নানাবিধ মত প্রচলিত। কোনও মতে ইহা জলের পরিমাপক দণ্ড, কোন মতে বা মোসলমান আক্রমণ কালে গৌড়গোবিন্দ তত্ৰত্য রাজবাটীস্থ তৈজসপত্র ও ধনাদি নৌকাপূর্ণ করিয়া এই দীর্ঘিকায় ডুবাইয়া রাখেন, এ স্তম্ভ নৌকারই মাস্তুল । বস্তুত এ স্তম্ভ সম্বন্ধে ভিত্তিবিহীন অলীক নানা কাহিনী কথিত হয় । জনশ্রুতি যে, গৌড়গোবিন্দ কখন কখন গৌড়গ্রাম রাজবাটিকাতে আসিয়া বাস করিতেন, তাহার এক কন্যা একদা এদেশ প্রচলিত “মঘব্রত" করিয়া “দেউল" বিসৰ্জ্জন কালে একটি নুতন পুষ্করিণী প্রস্তুত করেন; ঐ পুষ্করিণী-পারে যে গ্রাম বসিয়াছে, তাহার নাম দেউলগ্রাম । তথায় আরও ৪/৫টি পুষ্করিণী থাকায় সে স্থানে যে একদা সমৃদ্ধিশালী লোকের বাস ছিল, তাহা বুঝা যায়। বিশ্বনাথের পূৰ্ব্বদক্ষিণে দেড় মাইল দূরে “রাজবাড়ী" বলিয়া আর একটা স্থানও আছে। ভাটেরার সাতপারি দীঘী ও বিশ্বনাথের সাতপারি দীঘী একই গৌড়গোবিন্দের কীৰ্ত্তি বলিয়া প্রচারিত । আমরা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি যে ইহার মূলে সত্য থাকিতেও পারে, অথবা অপরের কীৰ্ত্তি প্রসিদ্ধ গৌড়গোবিন্দের নামে প্রখ্যাপিত হইতেও পারে। দীঘী প্রভৃতির অবস্থা পৰ্য্যালোচনায় তাহা শাহ জলালের সময়ের পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী বলিয়া বোধ হয় না। এক প্রাচীনের উক্তি যাহা হউক, যখন ভাটেরার তাম্রফলক প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছিল, তৎকালে যোগী জাতীয় বৃদ্ধ শম্ভুনাথ প্রকাশ করে, সে তাহার পিতামহের মুখে শুনিয়াছিল যে, ঐ স্থানে পূৰ্ব্বে যে এক রাজ বংশ ছিল, ত্রিপুররাজের আশ্রিত কুকিগণ রাত্রিতে আসিয়া রাজবাটী আক্রমণ পূৰ্ব্বক তাহার অধিকাংশ লোককে নিহত করে, রাজপুত্র পলাইয়া প্রাণ বাচাইয়াছিলেন। ভাটেরার দেবচৌধুরীবর্গ সেই বংশীয় । যদি শম্ভুনাথের উক্তি সত্য হয়, তবে দেববংশীয়গণই তখন “রাজা" বলিয়া উক্ত হইতেন । “দরবারি গোল” ইত্যাদি জনশ্রুতির১৮ বিবরণ হইতে যে রাজৈশ্বৰ্য্যের পরিচয় মিলে, তাহাতেও ১৮. কথিত আছে যে এই স্থানে রাজগণ দরবার করিতেন। পরবত্তী অধ্যায় কথিত ইসমাইল পুরেব উত্তরাংশে গাজীপুবে সিপাহীবিদ্রোহের সময়ে কয়েকটি বিদ্রোহী তথাকার এক তেতুলতলে অবস্থিতি করায় উহার নাম “দরবার তেতই গাছ” হইয়াছিল। এখন গাছ নাই কিন্তু সেই স্থানটি “দরবার তেতইয় তল" বলিয়া খ্যাত আছে । মামলা মোকদমা হইতেও স্থানাদি "দরবারী" নামে খ্যাত হইবার বহু উদাহরণ আছে ।