পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড পরগণা-লংলা কানুনগো বংশকথা পরগণা লংলার অন্তর্গত হিঙ্গাজিয়ার কানুনগোদের বংশাবলিতে লিখিত আছে যে রাঢ়দেশে ঢাকা নামে এক পল্লী আছে, সেই পল্লী হইতে রঘুনাথ মিত্র, নিজপুত্র সুরানন্দকে লইয়া শ্রীহট্ট জেলায় আগমন করেন। সেই সময়ে এতদঞ্চলে ত্রৈপুর নৃপতি যশোধর মাণিক্য ও গোবিন্দ মাণিক্যের বিশেষ প্রভাব ছিল ২৩ রঘুনাথ ও সুরানন্দ উভয়েই কৃতীপুরুষ ছিলেন, জীবিকানিৰ্ব্বাহের উদ্দেশ্যই তাহারা এদেশে আগমন করেন। ইহারা শ্রীহট্টে আসিলে “বিষয় পাইয়া" লংলার হিঙ্গাজিয়া গ্রামে বাস করেন। এই “বিষয়" যে কি তাহা স্পষ্ট লিখিত হয় নাই। সম্ভবতঃ ইহা রাজকীয় কোন ধৰ্ম্ম ও তৎসংসৃষ্ট জায়গীর হইবে। সুরানন্দের পুত্র বাসুদেব, তৎপুত্র যদুনন্দন। ইহার মহেশ ও হরিনামে দুই পুত্র হয়। তন্মধ্যে মহেশ কন্দৰ্প রায়ের নামে খ্যাত হন। হরির রাজদত্ত উপাধি “রূপসখা" । কন্দৰ্প রায়ের পুত্র রামভদ্র, তৎপুত্র শ্রীচন্দ্র, ইহার পুত্রের নাম রামচন্দ্র; ইনি এইবংশে এক প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। রামচন্দ্র শ্রীহট্টের নবাব ফরহাদ খা বাহাদুরের অধীনে একটি কাজে ছিলেন। একখানা সনন্দে তাহার কানুনগো খ্যাতির উল্লেখ আছে।২৪ তিনিই বোধ হয় এই বংশে কানুনগো দস্তখত প্রাপ্ত হন। একখানা ভূমি বিক্রয় পত্রে দেখা যায় যে তিনি ১০৮৪ সালে “চতুর্থ কার্যাপন" মূল্যে নিজ গ্রাম হইতে সাত কেদার ভূমি বিক্রয় করিয়াছিলেন । এই দলিল খানা ২৪৩ বৎসরের প্রাচীন ॥২৫ ২৩. আমাদের প্রাপ্ত বিবরণী যশোমাণিক ও গোবিন্দ মাণিককে "হেড়ম্বেশ্বব" বলিযা লেখা হইযাছে । আমলা ইহাদিগকে ত্রৈপুব নৃপতি বলিযাই অবধারণ করিয়াছি । প্রথমতঃ হেড়ম্বেশ্বগণের “মাণিক্য" উপাধি নহে, তাহাদেব উপাধি “নারায়ণ" । এবং ঐ নামে হেড়ম্বে কেহ রাজা ছিলেন না। পক্ষান্তরে ত্রৈপুর রাজবংশ তালিকাতে (ঐ তালিকা শ্রীহট্রেব ইতিবৃত্ত ২য় ভাগ ১ম খণ্ড ৪র্থ অধ্যায়োল্লিখিত ক পরিশিষ্টে) দুষ্ট হইলে যে আমব মাণিক্যের পৌত্রের নাম যশোধর মাণিক্য; এবং ইহারই ভ্রাতুষ্পপুত্রের নাম গোবিন্দ মাণিক্য ছিল । ইহাদের সময়ে বৰ্ত্তমান কাছাড়ের হেড়ম্বের দক্ষিণাংশ ত্রিপুরার অন্তর্গত থাকা অসম্ভব নহে ২৪. রামচন্দ্রের পৌত্র জগৎবল্লভ ও প্রপৌত্র রামপ্রসাদের যুক্ত নামীয় কানুনগো পদের সনন্দে রামচন্দ্রের কানুনগে৷ পদের উল্লেখ আছে। ২৫. “শ্রীশ্রীমতাং সুলতান আরঙ্গসাহা বাদশাহা স্বস্তি চতুবাশীতু্যত্তর সহস্রাব্দে ফাৰুণস্য অষ্টাবিংশতি দিবসে স্বগীয় পাদপদ্মনামভু্যদয়িনি বাজ্যে গৌড়াঙ্গাধিপতী শ্ৰীযুক্ত সাইস্থা খান মহেগ্রপতাপেষু শ্রীহট্টাকৃতে সুপেস্বৰ শ্ৰীযুত ফুহাদ খান মহাশয় নিজ জায়গিরি মধ্যে ওজির শ্ৰীযুত আতিক উল্লাজউ বিষয়িনী মিক লঙ্গল চত্তরকান্তর্গত হিঙ্গাজিয়া গ্রাম পাটকস্থ শ্রীরণজিন খা সকাশাত চতুর্থ কাৰ্যপনান গৃহিত্বা শ্ৰীবামচন্দ্র বায়সা নিজ মিরাস মৌজে হিঙ্গাজিয়া গ্রাম সম্বন্ধি সপ্তকেদার পরিমিতা বাটিকা সহ ভূমি বিক্রিতেতি । অজমাল ৪ চাইর কাহন ভূমি বাড়ী-সাত কেদার ইনি সত ১০৮৪ সাল ২৮ ফাল্গুন ৯ জিনহেঞ্জ । অত্র চতুসীমরাপশ্চিমে মুকুনির খাঁ পুকরির পূর পারের খাল-দক্ষিণে নিজ বাড়ীর খাল-পূৰ্ব্বে জাঙ্গাল উত্তরে হাড়িপাব এই দলিলেব উপরে একটি পারস্য মোহর আছে; তাহার দক্ষিণ পার্শ্বে একটি পারস্য দস্তখত দৃষ্ট হয় । দক্ষিণ পার্শ্বে-“শ্রীরামচন্দ্র রায়স্য" ইতি দস্তখত। এবং বাম পার্থে “উভয়ানুমতী শ্ৰীগোবিন্দদাসকেন লিপি" এই কথাগুলি লিখিত, অর্থাৎ ইহাই লেখকের দস্তখত। দলিলের পৃষ্ঠদেশে "উগাহি" “ধনঞ্জয় মিএ, গঙ্গা হরিদাস" প্রভৃতি ১০ ব্যক্তির নাম এবং “হস্যাদি" উল্লেখে “পুরুষোত্তম শৰ্ম্মা" নামটি এবং “সাক্ষি" উল্লেখে "বামদেব শৰ্ম্মা"র নাম আছে । তদ্ব্যতীত পৃষ্ঠদেশেও দুইটি পার দস্তখত আছে । দলিল খানা যেমন লিখিত, বর্ণাশুদ্ধি সহ অবিকল অদ্রপই উদ্ধৃত করিয়া দিলাম ।