পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম অধ্যায় : মোসলমান বংশ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৭১ বৎসরের বালক মাত্র ছিলেন । এই অপ্রাপ্তবয়স্ক বালকের পক্ষে গবর্ণমেণ্ট তদীয় পিতামহী তালেব উন্নেসা খাতুন সাহেবানীকে অলী সাব্যস্ত করেন এবং শ্রীহট্টের জজ সাহেব একজিকিউটারস্বরূপ থাকেন। আলী আমজদ কিঞ্চিৎ বড় হইলে জজসাহেব তাহাকে শ্রীহট্টে নিয়া সুশিক্ষার বন্দোবস্ত করেন; প্রসিদ্ধ স্বগীয় রাধানাথ চৌধুরী তাহার গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি অধিক দিন শিক্ষায় ব্যাপৃত থাকিতে পারেন নাই। শীঘ্ৰ বিস্তৃত জমিদারির গুরুভার নিজহস্তে গ্রহণ করেন। জমিদারি শাসনে তাহার দক্ষতা অল্প ছিল না, তিনি দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে পরাংমুখ ছিলেন না। ভানুগাছ নামক স্থানের অদম্য বিদ্রোহী মণিপুরী প্রজাদিগকে তিনি দমন করিতে সমর্থ হন। মৃগয়া ব্যাপারে তিনি যেরূপ সুদক্ষ ছিলেন, শ্রীহট্ট অঞ্চলে তদ্রুপ ব্যক্তি অল্পই দৃষ্ট হয়; আমরা এ সকল কথা ৪র্থ ভাগে তদীয় জীবনী প্রসঙ্গে উল্লেখ করিব । ১৩১২ বাংলা কলিকাতা মহানগরীতে তাহার মৃত্যু হয়। শ্রীযুক্ত আলী হায়দর ও শ্রীযুক্ত আলী আসগর নামে তাহার দুই অপ্রাপ্ত বয়স্ক পুত্র এখন বৰ্ত্তমান আছেন; সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডের অধীনে আছে। পরগণা-কাণিহাটী চৌধুরী বংশের কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশে৭ কাণিহাটীর বিবরণ প্রসঙ্গে হজরত শাহজলালের অনুষঙ্গী শাহ হেলিম উদ্দীনের কাণিহাটী গমন কথা কথিত হইয়াছে। তিনি ও তাহার পুত্র দৌলত মালিক কাণিহাটী বাস করতঃ ধৰ্ম্মপ্রচার করেন। কাণিহাটীর অধিশ্বরী কনক রাণীর কথা পূৰ্ব্বে বলা গিয়াছে, কনকের রাজরাণী নামে এক তনয়া ছিলেন, রাজরাণী দৌলত মালিকের প্রচারিত ধৰ্ম্মে আকৃষ্ট হন দৌলত মালিক তাহাকে বিবাহ করেন। রাজরাণী তখন হামিরাবিবি নামে আখ্যাতা হন । ইহার পুত্রের নাম সুলতান খা; ইনিই সুলতানপুর গ্রামের স্থাপয়িতা, ইহার পুত্র দাউদখা । দাউদ এক নূতন বাটী নিৰ্ম্মণপূৰ্ব্বক তথায় গিয়া বাস করেন। সেইস্থান তাহার নামে দাউদপুর বলিয়া খ্যাতি হয়। দাউদের পুত্রের নাম মিঞা খা । তাহার ডাকনাম ছিল ভুইয়া মিয়া। এই নামানুসারে “ভুইগা" বলিয়া তিনি এক গ্রাম স্থাপন করেন। মিঞাখার পুত্রের নাম নূর খাঁ ও কলবে খা। এই দুই ভ্রাতা আপনাদের মধ্যে কাণিহাটী বিভাগ করিয়া নেওয়ায় উহা পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম ভাগে বিভক্ত হয়। কলবে খা শ্ৰীসূৰ্য্য মৌজায় বাড়ী প্রস্তুত করেন, তথায় তিনি একটী পুষ্করিণী খনন করিয়াছিলেন, উহা কলবে খার পুকুর নামে পরিচিত। উক্ত পুষ্করিণীর তীরে তাহার ও তৎপত্নীর ইষ্টক নিৰ্ম্মিত কবর আছে। কলবে খা ৮৩১ বঙ্গাব্দে মজলিস মারামত খা নামে একপুত্র রাখিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হন।৮ মারামত খাঁ বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে পৈতৃক বাড়ী পরিত্যাগপূৰ্ব্বক প্রশস্ত পথ ও পরিখামণ্ডিত এক বাড়ী প্রস্তুতক্রমে তথায় গমন করেন ও আপন পত্নীর (রৌজন বিবি) নামে সেই স্থানের নাম ৭. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৯ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য। ৮. কাণিহাটীর মোসলমান চৌধুরী বংশের যে বিবরণ আমাদিগকে প্রদত্ত হইযাছে, তাহার লিখিত তারিখগুলি কতদূর ঠিক বলা যায় না। শাহ হেলিম উদ্দীন শাহজলালের সঙ্গে খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাগে আগমন করেন, তাহার ৬ষ্ঠ পুরুষে কলবে খার উদ্ভব, ইহার মৃত্যু আমাদের প্রাপ্ত বিবরণী অনুসারে ৮৩১ বঙ্গাব্দে হইলে, শাহজলালের সময় এততুলনায় অনেকটা পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত হইয়া পড়ে। আবার ইহাব ৬ষ্ঠ পুরুষে নাসরুদীনের ৫মে সময় (১০১০ বাং) কথিত হইয়াছে, তাহাও উপরোক্ত হিসাবে আভ্রান্ত বলা যাইতে পারে না।