পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড শ্ৰীমহাপ্রভুর আখড়ার সেবাব্যয় বাজারের মহাজনগণের দ্বারা পরিচালিত হয়। মদনমোহনের আখড়া প্রায় ষষ্ঠি বৎসর যাবৎ স্থাপিত হইয়াছে। স্থাপয়িতা বালি শিরবাবাসী শ্যামকিশোর ধরের পুত্র গোপীনাথ ধর শতাব্দীজীবি পুরুষ। ইতিপূৰ্ব্বে প্রাচীন সংবাদ শুনিতে অনেকে তাহার কাছে যাইত । কালী-ইংরেজ আমলের প্রথমে লস্করপুরে লালা রামসিংহ নামক জনৈক শিকদার ছিলেন, ইনি তরফেশ্বরী নামে হিন্দুদের জন্য এক কালীমূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং মোসলমানদের উপাসনার জন্যও এক মসজিদ প্রস্তুত করিয়া দিয়াছিলেন। তাহার উদ্যোগে তরফের জমিদারগণ কালীর সেবার জন্য যে দেবত্র দান করেন, ইংরেজ গবর্ণমেণ্ট তদুপলক্ষে ১১ /০ বৃত্তি প্রদানে স্বীকৃত হন; অনেকদিন বৃত্তিদানের পর প্রায় ত্রিশবৎসর যাবৎ বৃত্তি রহিত হয় । হবিগঞ্জে মোসেফ স্থাপিত হইলে, লালা রামসিংহ স্থাপিত তরফেশ্বরীই “কালী” নামে তথায় স্থানান্তরিত হন। স্বগীয় আদিনাথ দত্ত এবং অনেক স্বধৰ্ম্মনিষ্ট উকীলের চেষ্টায় গবর্ণমেন্ট সেই বৃত্তিটি পুনৰ্ব্বার প্রদান করিতেছেন। বগলামুখী সুঘরের হরিচরণ দেবের পত্নী হরসুন্দরী স্থাপন করেন এবং একটি বাজার সংস্থাপিত করিয়া ছয়শত টাকা আয়ের সম্পত্তি সেবা-ব্যয় নিৰ্ব্বাহাৰ্থ প্রদান করেন। সেই বাজার বগলাবাজার নামে খ্যাত । হবিগঞ্জ সবডিভিশনে ৩৫টি পরগণা আছে। সবডিভিশনের আয়তন (area) ও জনসংখ্যাদি এবং পরগণা সমূহের নাম ও তদধীন গ্রামাদি বিবরণ প্রথম ভাগে বিবৃত করা গিয়াছে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের দ্বিতীয় ভাগে যে যে বংশের প্রসঙ্গ করা গিয়াছে, তাহার অবশিষ্ট কাহিনী সহ অপরাপর বংশবৃত্তান্ত এই খণ্ডে বর্ণিত হইবে। পরগণা-তরফ জয়পুর নগর পূৰ্ব্বে তরফ এক ক্ষুদ্র রাজ্য ছিল; পরগণা তরফ অধুনা তাহার নাম রক্ষা করিতেছে। তরফের ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত পূৰ্ব্বাংশে কথিত হইয়াছে; তাহাতেই পাঠক তরফের প্রাচীনত্বের কথা জ্ঞাত হইয়াছেন। তরফের মধ্যে জয়পুর পূৰ্ব্বে অতি সমৃদ্ধিশালী নগর ছিল, এস্থলে বহু বিপ্রের বাস। জয়ানন্দকৃত চৈতন্যমঙ্গল গ্রন্থে এই গ্রামের যে বিবরণ লিখিত আছে, তাহাতে জানা যায় যে, প্রায় পাঁচশত বৎসর পূৰ্ব্বে উহা কুপতড়াগাদি শোভিত, মঠ-মন্দির মণ্ডিত ও উদ্যান উপবনে অলস্কৃত ছিল। এ নগরের চতুর্দিকেই তৎকালে “চৌ-খণ্ডী” “চৌতারা” প্রভৃতি একে একে শোভা পাইত; পাঠশালা অনেকটিই ছিল, নাট্যশালারও অভাব ছিল না; এমন কি গ্রন্থাগারও (লাইব্রেরী) পরিলক্ষিত হইত। ফলতঃ জয়পুর শ্রীহট্টের মধ্যে এক উন্নত ও প্রধান নগর ছিল, সন্দেহ নাই। এই প্রাচীন নগরের চতুঃসীমার মধ্যে বহু ব্ৰাহ্মণের বাস ছিল, ইহাদের অনেকেই ধনী, বিদ্বান ও সন্ত্রান্তবংশীয় ছিলেন।৩ ৩. “শ্রীহট্ট দেশের মধ্যে জয়পুর গ্রাম । সৰ্ব্বসুখময় স্থান ক্ষিতি অনুপাম৷ সুতার সঞ্জম ঘর নগর চত্বর ইষ্টকারয়িত দ্বার প্রাচীর ভিতর॥