পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় : তরফের ব্রাহ্মণ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৮১ তুঙ্গেশ্বরের হরিশরণ মজুমদারের নাম ও গুণ বিদেশেও অনেকে জ্ঞাত ছিল, ইহার কথা পরবর্তী ৪র্থ অধ্যায়ে উল্লেখ করা যাইবে। রাজা রাজবল্লভের জনৈক সভাপণ্ডিত এক কুটার্থ কবিতার ব্যাখ্যা করিয়া দিতে তাহার কাছে কবিতা প্রেরণ করেন। মজুমদার পণ্ডিতবর্গকে আহবান করিয়া সেই কবিতার অর্থ লিখিয়া দিতে অনুরোধ করেন। সেই সভায় তর্কসিদ্ধান্ত ব্যতীত অপর ভ্রাতৃত্ৰয়ও উপস্থিত ছিলেন। প্রেরিত কবিতার অনেকরুপ অর্থই হইয়াছিল, কিন্তু কোনটি সদর্থ, তাহা অবধারিত না হওয়ায় কেহই তাহা প্রেরণ করিতে সাহস করেন নাই। তর্কসিদ্ধান্ত হরিশরণ মজুমদারের কাছে নিজবাড়ীর সম্মুখবর্তী একখণ্ড ভূমি প্রার্থনা করিয়াছিলেন, ঐ ভূমিখণ্ড আরও দুইজন ব্রাহ্মণ প্রাপ্ত হইতে ইচ্ছা করায়, মজুমদার কাহাকেই উহা দেন নাই; এজন্য তর্কসিদ্ধান্ত তাহার আহবানে উপস্থিত হন নাই। ভাতকাটিয়া নিবাসী খ্যাতনামা নৈয়ায়িক মৃত্যুঞ্জয় তর্কালঙ্কার সেই পণ্ডিত মণ্ডলীতে প্রকাশ করিলেন যে, তর্কসিদ্ধান্ত ব্যতীত এ বিষয়ের মীমাংসা হইবে না। তখন সকলের অনুরোধে তাহাকে উপস্থিত হইতে হইল, তিনি কবিতার সপ্তপ্রকার অর্থ নির্দেশ করিয়া, তাহাই প্রেরণ করিলেন। কবিতা পৌঁছিলে সেই কবিতা-প্রেরক পণ্ডিত কবিতার যথার্থ অর্থ প্রাপ্ত হইয়া প্রশংসাসূচক এক পত্র প্রেরণ করিয়াছিলেন। হরিশরণ মজুমদারও তৎপ্রতি বিশেষ তুষ্ট হইয়া, তখন সেই ভূমিখণ্ডে একটি পুষ্করিণী খনন করাইয়া, তাহাকে দান করিলেন; সে পুষ্করিণী এখনও বিদ্যমান আছে। তর্কসিদ্ধান্তকৃত “বৰ্ষভাস্কর” নামক বর্ষকৃত্য বিষয়ক এক গ্রন্থ ও অনেক গ্রন্থের দুরধিগম্য স্থান সমূহের সরলার্থ আছে। তর্কসিদ্ধান্তের পুত্রের নাম রাজচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য। গৌবীকান্ত ন্যায়ালঙ্কার কৃত জ্যোতিষশাস্ত্র সম্পর্কিত "জাতকপ্রকাশ" নামক বৃহৎ গ্রন্থ এবং “জ্ঞানদীপ" নামক এক বেদান্তিক গ্রন্থ আছে। বিশ্বনাথের পুত্র হরিনাথ তর্কলঙ্কার একজন উৎকৃষ্ট নৈয়ায়িক ছিলেন, তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা মোহনচন্দ্র বিদ্যালঙ্কারও “শুদ্ধিকারিকলি" নামক অশৌচ নির্ণায়ক এক গ্রন্থ লিখিয়া গিয়াছেন বলিয়া তত্ৰত্য শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য জানাইয়াছেন । কচুয়াদির ব্রাহ্মণগণ কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় ব্রাহ্মণ বিবরণ জয়পুরে কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণেরও বাস আছে। তথা হইতে এক শাখা কচুয়াদিবাসী হন। কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণের আদি পুরুষ কোন স্থান হইতে জয়পুরে আগমন করেন, এতদনুসন্ধানে জানা যায় যে, পঞ্চখণ্ডের কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় ব্রাহ্মণ বংশের কেহ তরফের মুড়াগ্রামে প্রথমতঃ আগমন করেন এবং তৎপর জয়পুর যান ও তথা হইতেই একজন কচুয়াদিবাসী হন।৮ এই বংশে শ্যামানন্দ ভট্টাচাৰ্য্য নামে একব্যক্তি অতি প্রসিদ্ধ হইয়াছিলেন, ইনি সুখরের বড়বাড়ীর অৰ্দ্ধ অংশের পৌরোহিত্য গ্রহণ করেন। ইহার পুত্র কৃষ্ণানন্দ শিরোমণিও পিতার ন্যায় যোগ্যব্যক্তি ছিলেন, ইহার পত্নী মহামায়া দেবীর কীৰ্ত্তি আজও লোকে শতমুখে বর্ণনা করিয়া থাকে । _ ৮. কেহ কেহ বলেন- কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণের পূৰ্ব্বপুরুষ, মজুমদার বংশের সহিত এদেশে সমাগত ব্ৰাহ্মণ হইতে অভিন্ন ছিলেন, কিন্তু অধিকাংশের মতেই তাহা ঠিক নহে।