পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড সতী মহামায়া ১৮২৯ খৃষ্টাব্দের পরে শিরোমণির মৃত্যু হয়, তখন আইন প্রচারিত হইয়া সতীদাহ প্রথা বারিত হইয়াছে। দেবী মহামায়া পতির মৃত্যুর পর যখন তদনুগামিনী হইতে ব্যগ্র হইলেন, কাজেই তখন উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ আইনের ভয়ে বিরোধী হইয়া দাড়াইলেন। কিন্তু তখন সেই বিরুদ্ধবাদী ব্যক্তিবর্গের এককালে হঠাৎ এক বিষম বেদনা উপস্থিত হইল। তাহারা ভাবিলেন উৎকণ্ঠিতা সতীর মানসিক ভাব-বিক্ষেপের প্রতিক্রিয়াই এই ব্যাধির কারণ; এইরূপ চিন্তা করিয়া তাহারা বিরোধভাব পরিত্যাগ করিলেও, তৎক্ষণাৎ নিকটবৰ্ত্তী থানায় এই সংবাদ জানাইলেন ংবাদপ্রাপ্তে থানার প্রধান কৰ্ম্মচারী তথায় উপস্থিত হইয়া সতীকে এ উদ্যম ত্যাগ করিতে অনুরোধ করিলেন। তখন মহামায়া একটা কাচা কদলী হাতে লইলেন, কদলী তদীয় দেহের তাপে তপ্ত হইয়া পরিপক্কবৎ প্রতীয়মান হইল; সতী বলিলেন “আমাকে নিষেধ করিও না, আমার অন্তরে আগুণ জুলিতেছে, এই দৃশ্যমান অগ্নি তদপেক্ষা অধিক নহে, এই কদলী তাহার প্রমাণ; আমি সেই অগ্নিতেই ভষ্মীভূত হইয়া যাইব,-তোমরা আমার ধৰ্ম্মে বাদ সাধিও না।" হিন্দুকৰ্ম্মচারীটিও ভীত হইলেন, “অদৃষ্টে যাহা থাকে হইবে", ভাবিয়া তিনি কিছুক্ষণ মৌনাবস্থায় রহিলেন, ইত্যবসরে সতী ত্রস্তভাবে চিতারোহণ করিয়া অৰ্দ্ধদগ্ধ হইয়া গেলেন। দর্শকগণ হায় হায় করিয়া উঠিলেন, সতী তদবস্থায় আত্মীয় স্বজনকে আশীৰ্ব্বাদ করিতে করিতে দিব্য পতি-লোকে চলিয়া গেলেন! জয়পুরবাসী তদীয় পুরোহিত লব্ধ প্রতিষ্ঠা রাধাচরণ ভট্টাচাৰ্য্যকে সতী নাসিকা হইতে নিজ নাসাভরণ নথ উন্মোচন করিয়া দিয়াছিলেন। কথিত আছে, এই নথ প্রাপ্তির পর হইতে ভট্টাচাৰ্য্য ঐশ্বৰ্য্যাম্বিত হইয়া উঠেন এবং “মহাজন ঠাকুর” নামে খ্যাত হন। ২০/২২ বৎসর অতীত হইল, সতী-দত্ত এই নথ অপহৃত হইয়াছে; ইহাদের অবস্থাও অনেকটা হীন হইয়া পড়িয়াছে। শিরোমণির পুত্র রামগতি তর্কালঙ্কার এক বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন; ইহার পৌত্র তত্ৰত্য টোলের অধ্যাপক শ্ৰীযুত কৃষ্ণজয় স্মৃতিভূষণ হইতে আমরা এই বংশ বিবরণ সংগ্রহে সহায়তা প্রাপ্ত হইয়াছি। স্বর্ণরেখা ভরদ্বাজ ও গৌতম গোত্রীয় ব্রাহ্মণ কথা স্বর্ণরেখার ভরদ্বাজ গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণ জয়পুর হইতে সমাগত। জয়পুর হইতে রামজীবন তর্কালঙ্কারই সৰ্ব্বপ্রথম স্বর্ণরেখার আগমন করেন। ইহার বংশে রামকৃষ্ণ বিদ্যাবাগীশ একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি ছিলেন, তিনিই সুঘরের মজুমদার বংশের পৌরোহিত্য স্বীকার করেন। গৌতমগোত্রীয় গণেশ্বর ভট্টাচাৰ্য্য ইটার পাচগাও হইতে স্বর্ণরেখায় গমন করেন; তাহার পুত্র রুদ্ৰেশ্বর বাচস্পতি অনেক যজমান-শিষ্য করিয়াছিলেন। কাশীশ্বর ন্যায়ালঙ্কার ও বাগীশ্বর তর্কসিদ্ধান্ত নামে তাহার দুইপুত্র অতি বিখ্যাত হইয়া উঠেন, তন্মধ্যে ন্যায়ালঙ্কার, দেশীয় বহুতর সম্ভ্রান্ত ও ধনী ব্যক্তির দ্বারপণ্ডিত ছিলেন এবং তাহাদিগের নিকট হইতে অনেক ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। দশসনা বন্দোবস্ত কালে ঐ সমস্ত ভূমি তাহার নিজ নামে বন্দোবস্ত করা হয়, অদ্যাপি তদ্বংশীয়গণ উহা ভোগ করিতেছেন। কাশীশ্বরের পুত্র শ্যামানন্দ বিদ্যাবাগীশ; ইহার প্রপৌত্র জীবিত আছেন । জয়পুরের মৈত্রেয় বংশের উল্লেখ করিয়াছি, ইহারাও বৈদিক শ্রেণীর ব্রাহ্মণ, কেহ কেহ ইহাদিগকে রাঢ়ীর বিপ্র বলিয়া থাকেন; কিন্তু তাহার সঙ্গত কারণ জানা যায় না। মৈত্রের বংশের পুরুষোত্তম ন্যায়ভূষণ স্বর্ণরেখাবাসী হন; ইহার পুত্র হরগোবিন্দ তর্কপঞ্চানন পণ্ডিত ব্যক্তি