পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড ব্যক্তিগত সংবাদ এই বংশীয় সিদ্ধেশ্বর বাল্যাবধি ধৰ্ম্মানুরক্ত ছিলেন। পিতা তাহার উদাসীনতা দৃষ্ট সত্বর সাগ্রহে ময়মনসিংহ জেলার কুলিয়াচরস্থ কালীবাড়ীতে অবস্থিতি করেন। সিদ্ধেশ্বর সিদ্ধপুরুষ ছিলেন,-ক্ষণকাল ধ্যান করিয়া তিনি লোকের হিতাহিত নিশ্চিতরূপে বলিয়া দিতেন। আপন মৃত্যুকাল আসন্ন অবগত হইয়া পূৰ্ব্বেই শিষ্যবৰ্গকে তাহা জ্ঞাপন করেন এবং একটি লবণপূরিত কাষ্ঠ-সিন্ধুকে বলিয়া যোগাসনে দেহত্যাগ করেন। পরে সেই সিন্ধুক সহ শব ভূগর্ভে প্রোথিত করা হয়। সিদ্ধেশ্বরের ভ্রাতুষ্পপুত্র গোবিন্দ তেজপুরের মুন্সেফ ও মাজিষ্ট্রেট ছিলেন; তাহার বাসায় অতিথির নিত্যভোজ হইত। তাহার পূৰ্ব্ববত্তী, একটি “পঞ্চরত্ন” অপূর্ণ রাখিয়া গিয়াছিলেন, তিনি উহা পূর্ণ করেন ও দুর্গামণ্ডপ প্রস্তুতাদি সদ্ব্যয় করেন। ইহার জ্ঞাতি ভ্রাতা কমলনারায়ণ একজন প্রতিভাশালী ব্যক্তি ছিলেন, ১২৩৫ বাংলায় তাহার জন্ম হয়। তিনি পারস্য, উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত ও বাঙ্গালা ভাষা অবগত ছিলেন। তিনি প্রথমতঃ বাণিয়াচঙ্গে পারস্য ভাষা শিক্ষা দিতে, পরে তথায় বালিকা বিদ্যালয় ও নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনিই তাহার শিক্ষাদান কার্য্যে নিযুক্ত হন। সঙ্গীতবিদ্যায়ও তাহার বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল, তিনি স্বয়ং একজন গায়ক ছিলেন এবং প্রায় সহস্র সংখ্যক সঙ্গীত রচনা করিয়া যশস্বী হইয়া গিয়াছেন।৩ সখীসম্বাদ, টপ্পা, মালসী প্রভৃতি বিবিধ বিষয়িনী উক্ত সঙ্গীত সমূহ ব্যতীত তৎকৃত "বৃষকেতু" নামে একখানা কাব্যগ্রন্থ আছে। চিকিৎসা বিষয়েও তাহার জ্ঞান ছিল, রোগীর “নাড়ী" ধরিয়া তিনি রোগের রহস্যোদঘাটন করিতে সমর্থ ছিলেন। ১৩০০ বঙ্গাব্দে তাহার মৃত্যু হয়। ইহার পৌত্র শ্ৰীযুত অনাদিচরণ বিশ্বাস মহাশয় হইতেই আমরা এই বিবরণ প্রাপ্ত হইয়াছি । বিশ্বাস বংশে-বিশ্বনাথ ও কাশীনাথ নামক ভ্রাতৃদ্বয় বিশেষ উপাৰ্জ্জনক্ষম ও উদ্যোগী পুরুষ ছিলেন । ইহারা উভয়েই উকীল ছিলেন। পরে শ্রীহট্টের বিশ্বনাথ থানায় মুন্সেফ থাকাকালে কাশীনাথ তথাকার মুন্সেফ নিযুক্ত হইয়া ছিলেন। ইহাদের স্বগোষ্ঠি-ভ্রাতুষ্পত্র মোনসী রাধাগোবিন্দ নওয়াখালিতে ডিপুটী মাজিষ্ট্রেট ছিলেন। সকলকে পরিতোষপূৰ্ব্বক ভোজন করাইতে তাহার বিশেষ উৎসাহ ছিল, তিন দেশে আসিলেই ভোজের অনুষ্ঠান করিতেন, আজ পর্য্যন্ত “রাধাগেবিন্দের খাওয়ান" কথাটী তত্ৰত্য লোকের স্মৃতিপথে আছে। ১৮৩৩ খৃষ্টাব্দে এ বংশে কালীকিশোর তর্করস্ত্রের জন্ম হয়, বিক্রমপুর প্রভৃতি স্থানে অধ্যয়ন করিয়া ইনি পরে কলিকাতা শোভাবাজারের প্রসিদ্ধ পণ্ডিত শ্রীহট্টবাসী গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশের নিকট আগমন করেন, ভাস্কর সম্পাদক৪ তাহার জ্ঞানগৌরবে বিমুগ্ধ হইয়া তাহাকে “তর্করত্ন” উপাধি দান করেন। উপাধি লাভান্তে তিনি দেশে আসিয়া এক টোল সংস্থাপন করেন, এই টোল ৩. নমুনা ঃ – “মা কালি! দুঃখের কালি কেন মাখালি মা আমাকে । লেগেছে যে কালি, বুঝি চিরকাল, ঘুচাও মনের কালি, কাল নিবারিকে ॥ যায় মা মনের কালি, কালে দিলে কালি, যাবে অন্তকালি, দেশে মন-কালি । মরণ আজি-কালি, তুমি মহাকালী, ব্ৰজে ক্রষ্ণকালী, দক্ষিণা কালিকো৷ :"পদ কমল হর হৃদকমলে,সেপদকমলে ধঞ্চিত কমলে, নয়নকমলে হের মা কমলে বদন কমল কোমল হাসিকে । ৪. ইহার বিষয় ৪র্থ ভাগে কথিত হবে।