পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় : বাণিয়াচঙ্গের ব্রাহ্মণ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৮৭ বহুদিন স্থায়ী ছিল, তিনি এই টোলে ৪২ বৎসর কাল বহুতর ছাত্রকে বিদ্যাদান করেন। ইহার পুরস্কার স্বরূপ বিগত ১৯০৬ খৃষ্টাব্দে তিনি গবর্ণমেণ্ট হইতে “মহামহোপাধ্যায়" উপাধি প্রাপ্ত হন। গত ১৯১১ খৃষ্টাব্দে গবর্ণমেন্ট তাহাকে বার্ষিক ১০০ টাকা বৃত্তি নিৰ্দ্ধারিত করিয়া দেন। অতি অল্পদিন হইল, পূর্ণ অশীতি বৎসর বয়সে তাহার মৃত্যু হইয়াছে। মহামহোপাধ্যায়ের স্বজ্ঞাতি ও ভ্রাতৃসম্পর্কিত রমণকৃষ্ণ, বাণিয়াচঙ্গের সৰ্ব্ব প্রথম বি এ উপাধিধারী ছিলেন; তিনি সবডিপুটী কালেক্টার নিযুক্ত হইয়া আসাম-মঙ্গলদৈ গমন করেন এবং কৰ্ম্মক্ষেত্রেই মৃত্যুমুখে পতিত হন। গৌতম গোত্রীয় কথা গৌতম গোত্রীয় লোহিতাক্ষ তর্কসিদ্ধান্তের বাস (বৰ্ত্তমান) ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়া নামক স্থানে ছিল, ইহার পুত্রের নাম যাদবানন্দ তন্ত্রচূড়ামণি। উপাধি হইতেই জানা যায় যে, তন্ত্রশাস্ত্রে তাহার বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল; ইহার পুত্র শ্রীকৃষ্ণ তর্কালঙ্কার। গৌতমগোত্রীয় ব্রাহ্মণগণ বলেন যে, তাহারাই বাণিয়াচঙ্গের রাজার গুরুবংশীয়; কেননা শ্ৰীকৃষ্ণ তর্কালঙ্কার কর্ণখার গুরু ছিলেন। অনেকে অনুমান করেন, ইনি রাজার বৈদিক ক্রিয়া কলাপের ঋত্বিক ছিলেন; তাই আজিও তদ্বংশীয়গণ শ্ৰাদ্ধকালে দকী উপহার পান ॥৫ তর্কালঙ্কারের শ্রীহট্টে আগমন শ্ৰীকৃষ্ণ তর্কালঙ্কার পিতামহের নিকট সুশিক্ষিত হইয়াছিলেন; আট বৎসর বয়ঃক্রম কালেই ব্যাকরণ সমাপন করিয়া সকলকে তিনি চমকিত করেন। তাহার পর দুই বৎসর কাল মধ্যেই তিনি স্মৃতিশাস্ত্রে সুশিক্ষিত হন; বাৰ্দ্ধক্যপ্রযুক্ত তখন তর্কসিদ্ধান্ত অধ্যাপনা করিতে সক্ষম হইয়া চতুস্পাঠী উঠাইয়া দেন, কিন্তু পৌত্রের শিক্ষা ক্ষান্ত হইল না; ন্যায়াধ্যয়নের জন্য তাহাকে মিথিলা পাঠাইয়া দেওয়া হইল। এই সময় লোহিতাক্ষ পুত্রকে বলিয়াছিলেন—“বৎস, মিথিলা হইতে আসিলে স্বয়ং ইহাকে তন্ত্র শিক্ষা দিবে ও টোল করিয়া দিতে ইতস্ততঃ করিবে না, দেখিবে-শ্রীকৃষ্ণ মহাপণ্ডিত রূপে দেশখ্যাত হইয়া উঠিবে।" বৃদ্ধের বাক্যে অসত্য হয় নাই। শ্রীকৃষ্ণ উপাধিপ্রাপ্ত হইয়া, কাশী প্রভৃতি পণ্ডিত-প্রধান স্থানে নিমন্ত্রিত হইয়া গমন করতঃ বিচারযুদ্ধে জয়ী হন। তাহার পর দেশে আসিয়া পিতার নিকট তিনি তান্ত্রিক সাধনপ্রণালী শিক্ষা করেন। ■ অগ্নি অপ্রকাশিত থাকে না, দেশে আসিলে সকলেই তাহার গুণে আকৃষ্ট হইতে থাকে; কিন্তু তৎকালে দেশে মোসলমান অত্যাচার ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইতেছিল শ্ৰীকৃষ্ণ যবনোপদ্রব শূন্য কোন দেশে যাইতে ইচ্ছা করিতেছিলেন । এই সময়ে তাহার শ্রীরাম নামে জ্যেষ্ঠ পুত্রের জন্ম হয়, এবং পিতা মৃত্যুমুখে পতিত হন। এই সময়ে কোন ব্যাপার উপলক্ষে বাণিয়াচঙ্গের অধিপতিকর্তৃক নিমন্ত্রিত হইয়া তিনি এথায় আগমন করেন। বাণিয়াচঙ্গে বহু পণ্ডিতের সমাগম হইয়াছিল, কিন্তু বিদ্যা, জ্ঞান ও ধৰ্ম্মনিষ্ঠা প্রভৃতিতে তর্কালঙ্কার সকলের যশঃ আচ্ছাদিত করিয়াছিলেন। গুণগ্রাহী নৃপতি ইহা অনুভব করেন; তর্কালঙ্কারের প্রতি তিনি এতাদৃশ আকৃষ্ট হন যে, তাহাকে বাণিয়াচঙ্গে স্থাপন করিতে একান্ত উৎসুক হইলেন। রাজা তাহাকে বিনয় সহকারে সেই স্থানে অবস্থিতি করিতে ৫. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ২য় ভাগ ৩য় খন্ড তৃতীয় অধ্যায়ে ইহাই বলা হইয়াছে। রাজা সন্ন্যাসীর-শিষ্য ছিলেন-ঐ সন্ন্যাসীর স্বগীয় কালীর তত্ত্বাবধায়ক পদে থাকিতেন।