পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় ; বাণিয়াচঙ্গের ব্রাহ্মণ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৯৩ ন্যায় সংজ্ঞাশূন্য হইয়া পড়িল! অপর দসু্যগণ তদৃষ্টে ভীত হইয়া তাহাদিগকে লইয়া পলাইল। এই গল্প মহেশ্বরদিতে প্রচারিত হইয়াছিল। সৰ্ব্বানন্দের যোগ্যতাদৃষ্টে মহেশ্বরদির অনেকেই আকৃষ্ট হইয়া তাহার শিষ্য হয়। এথা হইতে তিনি ভাওয়াল পরগণায় গমন করেন, সেখানেও তাহার বহু শিষ্য হয়। অতঃপর তিনি দেশে আগমন করেন। বাড়ী আসিয়া দেখিতে পান যে, তাহার আর একটি পুত্র জনিয়াছে। ইহার কিছুকাল পরে তাহার মৃত্যু হয়। তেজস্বিনী শিবশঙ্করী Af সৰ্ব্বানন্দের পত্নী শিবশঙ্করী পতি পরায়ণা, পরমা সুন্দরী ও প্রভাবশালিনী তেজস্বিনী রমণী ছিলেন; তিনি শিশু পুত্র রাখিয়া পতির অনুগামিনী হইতে পারেন নাই। তেজস্বিতার জন্য লোকে তাহাকে শ্মশানকালী বলিয়া ডাকিত। একদা তিনি নৌকা যোগে বরিশালে “শিষ্যশাসনে” গিয়া, স্বামীর শিষ্য জনৈক জমিদারকে দোলা পাঠাইতে সংবাদ দিলেন। জমিদার দোলা লইয়া তাহাকে লইতে আসিলেন, কিন্তু তাহার মনে একটু তাচ্ছিল্য জনিল। তাহার আকার ইঙ্গিতে উঠিলেন—“অবজ্ঞা! মাঝি, নৌকা ছাড়িয়া দে, উহার বাড়ীতে আর যাওয়া হইবে না; স্ত্রীলোক বলিয়া তাচ্ছল্য!" জমিদার লজ্জিত হইলেন; তাহার মনের কথা ব্যক্ত হইয়া পড়িল; তিনি তখন কাকুতিমিনতি করিয়া গুরুপত্নী শিবশঙ্করীকে গৃহে লইয়া গেলেন। জমিদার তাহার প্রতি তখন বিশেষ আকৃষ্ট হইলেন, কিন্তু শিবশঙ্করী এই বদ্ধিষ্ণু শিষ্য তাহার পিসী শাশুড়ীকে অর্পণ করিলেন । পিসী শাশুড়ী-বেজোড়ার রমানাথ বিশারদের পুত্রবধূ একসময় ঐ জমিদার শিষ্যপ্রাপ্তির অভিপ্রায় তাহার কাছে ব্যক্ত করিয়াছিলেন । শিবশঙ্করী এরূপ দৃঢ় হৃদয়া রমণী ছিলেন যে, অভিশাপের ভয় সত্বেও আপন কনিষ্ঠ পুত্রকে উপাধি গ্রহণের আদেশ দেন, তদনুসারে সদানন্দ ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন পূৰ্ব্বক "তর্কালঙ্কার” উপাধি ধারণ করেন। ইহাতে অপরেরাও সাহসী হয় এবং শ্রীকান্তের পুত্ৰগণের মধ্যে রামকান্ত সাহস করিয়া “বিদ্যামণি" উপাধি গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু উভয়েই মৃত্যুমুখে পতিত হন। উপাধি গ্রহণের পূৰ্ব্বে রামকান্তের একটি পুত্র জাত হয়, সদানন্দের পুত্রাদি হয় নাই। এ বংশে তন্ত্রশাস্ত্রে সকলেই শিক্ষিত এবং সকলেই তান্ত্রিক সাধক ও ক্রিয়াপর ছিলেন। সদানন্দের অগ্রজ কৃষ্ণানন্দের যোগাভ্যাসে বিশেষ দক্ষতা জন্মিয়াছিল। তিনি অন্তিমকালে পদ্মাসনে উপবিষ্ট হইয়া সমাধি অবলম্বনে দেহত্যাগ করেন। শেষ কথা কৃষ্ণানন্দের পুত্রের নাম রাধানন্দ, তিনি শুধু বিদ্বান ও বুদ্ধিমান ছিলেন, এমন নহে, তাহার ন্যায় পরোপকারী ও দয়ালু ব্যক্তি খুজিয়া পাওয়া যায় না; নিজের অভাব অসুবিধার প্রতি দৃকপাত না করিয়া অন্যের অভাব অপ্রতুল বিদূরিত করিতে সৰ্ব্বদা সচেষ্ট থাকিতেন। আয়ুৰ্ব্বেদে তাহার এতাদৃশ দক্ষতা ছিল যে নাড়ী পরীক্ষা করিয়া কয়েক দিন আগেই রোগীর মৃত্যুর দিন বলিতে পারিতেন। ইহারই পৌত্র শ্ৰীযুত সারদানন্দ ভট্টাচাৰ্য মহাশয় হইতে আমরা তাহাদের এই বংশ বিবরণ প্রাপ্ত হইয়াছি। শ্রীকান্তের পুত্রের নাম শিবশঙ্কর, তৎপুত্র হরমঙ্করও “বিদ্যারত্ন" উপাধি ধারন করেন। ইনিও দীর্ঘজীবী হইতে পারেন নাই। তাহার ভ্রাতা উপাধির উপযুক্ত বিদ্যাৰ্জ্জন করিয়াও