পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড পরিচিত হইয়া উঠেন। ইনি স্বীয় ক্ষমতায়, নরপতি করেন, তাহার নামেই সেই ভূখণ্ড “রঘুনন্দন" পরগণা বলিয়া খ্যাত হয়। দশসনা বন্দোবস্তের সময় এই পরগণার দুইটি মাত্র তালুকের সৃষ্টি হইয়াছিল, তন্মধ্যে ১নং তাং রঘুনন্দন বন্দোপাধ্যায়ের নামেই বন্দোবস্ত হয়। ঠিক এই সময় বৃদ্ধ রঘুনন্দনের সহিত তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা হরেরাম ও ভ্রাতুষ্পপুত্র রামচন্দ্র এবং সদারায়ের মনান্তর হওয়ায় ভূসম্পত্তি রঘুনন্দনের পুত্র রাজনারায়ণ ত্রিপুরার মহারাজ ঈশানচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুরের মন্ত্রণা সভার রষদ ছিলেন। মহারাজপ্রদত্ত একটি তালুক মনতলায় এখনও তাহার নাম ঘোষণা করিতেছে। পরবর্তী বংশীয়গণ মধ্যে রামচন্দ্র পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন এবং তৎপুত্র কালীশঙ্কর একজন মল্ল বলিয়া পরিগণিত হইয়াছিলেন, তাহার আহারও তদনুরূপ ছিল। মোনশী গৌরীকান্ত আরবি ভাষায় সুবিজ্ঞ ছিলেন। আমাদের বিবরণ প্রদাতা শ্ৰীযুত যোগেন্দ্রনাথ বিশ্বাস লিখিয়াছেন যে, এই বন্দ্যোবংশীয় ব্রাহ্মণবর্গ বৰ্ত্তমানে বিশ্বাস উপাধি ধারণ করিয়াছেন। ইহাদের মধ্যে অনেকেই মোসলমান জমিদারের অধীনে কাৰ্য্য করিয়া এই উপাধি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। যাহারা জমিদার গৃহে কাৰ্য্য করেন নাই, তাহারা বন্দোপাধ্যায় বলিয়াই পরিচিত ছিলেন; বৰ্ত্তমানে একজন মাত্ৰ-তিনিও অপুত্রক-সেই উপাধি ধারণ করিতেছেন। এই বংশীয়গণ এখনও রঘুনন্দন পরগণায় বাস করিতেছেন। নরপতিনামে যে ভূস্বামী রাজপণ্ডিত বন্দোপাধ্যায়কে আনয়ন করিয়াছিলেন, তাহার বংশ নাই । পরগণা-বেজোড়া বেজোড়ার বিশারদ বংশ পরগণা বেজোড়ার নামকরণ সম্বন্ধে তরফের বিবরণে একটি শোকাবহ ঘটনার উল্লেখ পূৰ্ব্বে করা গিয়াছে ২ বেজোড়া পরগণার নিজ বেজোড়াবাসী কাশ্যপ গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণের আদিপুরুষের নাম অচ্যুতানন্দ। এ বংশে ইনিই প্রথম শ্রীহট্টে আগমন করেন ও বেজোড়াবাসী হন। ইহার পুত্রের নাম কংসারি, তৎপুত্র রামচন্দ্রের বাসুদেব, রতিদেব ও রঘুদেব নামে তিন পুত্র হয়, তন্মধ্যে রতিদেবের বংশই সুবিস্তৃত। রতিদেবের দুই পুত্র, লক্ষ্মীকান্ত ও রমানাথ বিশারদ। রমানাথ এই বংশের এক অত্যুজ্জল রত্ন। রমানাথ একজন সিদ্ধপুরুষ ছিলেন, অনেক অলৌকিক ঘটনা তাহার জীবনের সহিত জড়িত, তাহার অলোক-সামানা মহিমাদর্শনে অনেক সন্ত্রান্ত ব্রাহ্মণ বংশ তদীয় শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন। কেবল শ্রীহট্ট জেলা নহে ত্রিপুরা, ময়মনসিংহ, এমন কি পরম্পরা সম্পর্কে চট্টগ্রাম হইতে কলিকাতা পর্যন্ত তদীয় শিষ্যশাখা বিস্তৃত। তিনি সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করিয়া বিশারদ উপাধি প্রাপ্ত হন, তদবধি এই বংশ "বিশারদ বংশ" বলিয়া খ্যাত হইয়াছে। বাণিয়াচঙ্গের সিদ্ধ মহাত্মা মহাদেব পঞ্চাননের সহিত ইহার বিশেষ সম্প্রীতি ছিল, উভয়ে প্রায়শঃ একত্র থাকিতেন, উভয়ে যেন "হরিহর আত্মা"-এতই একাত্মতা ছিল। বিশারদের কাহিনী আমরা ৪র্থ ভাগে যথাপ্রাপ্ত বলিব । বিশারদের পুত্ৰগণ মধ্যে-মহাদেব পঞ্চাননের জামাতা বাণেশ্বরও সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। পুরাকালে শিষ্যগণ পাণ্ডিত্য অপেক্ষা গুরুদেবের আধ্যাত্মিক ঐশ্বৰ্য্যে লক্ষ্য করিতেন। বাণেশ্বরের ২. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৫ম অধ্যায় দেখ।