পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড বড়াল বংশ বড়াল বংশের আদিপুরুষের নাম বিজয় কেশব । হৃদয়ানন্দ ও হৃষীকেশ নামে ইহার দুই পুত্র ছিলেন। এই বংশেরও বিশেষ কোন কথা জ্ঞাত হইতে পারি নাই। আমাদের বিবরণ প্রদাতা এবংশীয় জগৎবল্লভের সম্বন্ধে একটি অলৌকিক কাহিনী প্রেরণ করিয়াছিলেন । জগৎবল্লভ দশসনা বন্দোবস্তের সময় জীবিত ছিলেন, তাহার নামে একটি তালুক আছে। কথিত আছে যে, একদা জগৎবল্লভ জনৈক চৌধুরীর গৃহে কালীপূজা সমাধা করিয়া, নিশীথ রাত্রে বাড়ী আগমন করিতেছিলেন, পথিমধ্যে এক বিকট ও বিরাট মূৰ্ত্তি তাহার পথ-রোধ করিয়া দাড়াইল । জগৎবল্লভের দক্ষিণ হস্তে পূজার তৈজসপত্র ছিল। তদবস্থায় সাধক ভীত না হইয়া বামহস্তে ঐ বিকট মূৰ্ত্তির কেশাকর্ষণ করিলেন ও মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া তাহাকে মুগ্ধ ও বশীভূত করিলেন। তিনি ইহার রামদাস নাম রাখিলেন। রামদাস ভৃত্যুবৎ তাহার সঙ্গে চলিল। রামদাস বার বৎসর কাল তাহার গৃহে চাকর স্বরূপ অবস্থিতি করিয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। এই রামদাসকে কোন অপরিচিত পথিক মনুষ্য মাত্র বলাও যাইতে পারিত কিন্তু ইহার সম্বন্ধে যে গল্প চলিত আছে, তাহাতে মনুষ্য বলা যাইতে পারে না, তাহা শুনিলে ভয় বিস্ময়েরই উদ্রেক হইয়া থাকে। কথিত আছে যে, জগৎবল্লভের স্ত্রী এক মেঘাচ্ছন্ন রজনীতে রামদাসকে কদলী-পত্র দিতে বলিলে, সে একস্থানে থাকিয়াই হস্ত প্রসারণ ক্রমে প্রায় ত্রিশত হস্ত দূরবর্তী স্থান হইতে পত্র আনয়ন করে । এই ব্যাপারে বিলোকনে বল্লভবনিতা ভীতা হইয়া স্বামী সদনে রামদাসের কাণ্ড বর্ণন করেন ও ইহাকে তাড়াইয়া দিতে অনুরোধ করেন, তিনিও তাহাতে স্বীকৃত হন। সেই স্বীকৃতি অনুসারে আজ পর্যন্ত তদ্বংশীয়গণ যজ্ঞশেষে “রামদাস ভূতায় স্বাহী” ইতিমন্ত্রে ইহার উদ্দেশ্যে আহুতি দান করিয়া থাকেন বলিয়া শুনা যায় ॥৬ পরগণা-জনতরি পরগণার নামতত্ত্ব ও মঘবন-সংবাদ স্বর্ণকৌশিক গোত্রীয় মঘবন মিশ্র সাবর্ণগোত্রীয় নিজ পুরোহিত সহ কান্যকুব্জ হইতে তীর্থভ্রমণোপলক্ষে পূৰ্ব্বাঞ্চলে আগমন করেন। তিনি কামরূপ পিঠ দর্শনার্থে গমন কালীন শ্রীহট্টের গুমগুমিয়া গ্রামে আগমন করিয়া, সত্যব্রত নামক তত্ৰত্য এক ব্রাহ্মণের আতিথ্য গ্রহণ করেন। তৎকালে এতদঞ্চল এক দ্বীপাকার ধারণ করিল, গ্রাম ছাড়িয়া এক পদ যাইবার যো নাই । মঘবনের কামরূপ গমনে আপাততঃ ব্যাঘাত জন্মিল, তিনি সেই স্থানেই রহিলেন ও “যন্ত্রে” কামাখ্যা দেবীর অচ্চনা করিতে লাগিলেন। মঘবনের অচ্চনা নিস্ফল হইল না, যন্ত্রে দেবীর আবির্ভাব ঘটিল; মঘবন সেই স্থানে থাকিয়াই কেবল ঐকান্তিক ভক্তিবলে কামরূপ গমনের ফল লাভ করিলেন। যন্ত্রে দেবীর আবির্ভাব হইয়াছিল বলিয়া,-কথিত আছে- সেই স্থান তদবধি যন্ত্রী, অপভ্রংশ যনতরি বা জনৃতরি নামে খ্যাত হয়। মঘবনের ঈদৃশ প্রভাব অবগত হইয়া সত্যব্রত নিজ বিবাহ-যোগ্য তনয় তাহার করে সম্প্রদান করিতে ইচ্ছা করিলেন, মঘবন ইহাতে সম্মত হইলে বিবাহ হইয়া গেল, সেই বিবাহে ৬. আহুতিদানের শেষে এ বংশীয়গণের রামদাসের নামেও একটি আহুতি দেওয়ার কথা সত্য হইলে এই বৃত্তাত্তটি ভিত্তি বিহীন গল্প মাত্র বলা চলে না। "অলৌকিক রহস্য” নামক পত্রিকায় এইরূপ অনেক ঘটনাই বিবৃত আছে, সেসব বৃত্তান্তের সত্যতার প্রমাণও প্রদত্ত হইয়াছে। শ্রীযুক্ত গোবিন্দচরণ দে মহাশয় হইতে ইহা প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে।