পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড একদা কাশীতে বাঙ্গালী টোলায় এক স্থানে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ হইতেছিল; ব্যাখ্যা শ্রীধরস্বামীয় সম্মত না হওয়ায় শিরোমণি আপত্য করিয়া, স্বয়ং শ্রীধরানুমত ব্যাখ্যা করেন, সেই ব্যাখ্যাশ্রবণে বিমোহিতা হইয়া তাহাকে মাসিক দশ টাকা হারে এক বৃত্তি প্রদান করেন; শিরোমণির কাশী প্রাপ্তির সময় পর্যন্ত এই বৃত্তি তিনি ভোগ করেন। শিরোমণির খুল্লতাত-ভ্রাতা রামশরণ বিদ্যালঙ্কার বাদার্থের শব্দকাণ্ড সম্বন্ধীয় “শব্দরত্ন” নামক একখানা মৌলিক গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়া গিয়াছেন, এই গ্রন্থ এখনও অমুদ্রিত অবস্থায় রহিয়াছে। শিরোমণির জ্ঞাতি ভ্রাতুষ্পপুত্র কালীচরণ তর্কবাগীশ ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জমিদারের দ্বারপণ্ডিত ছিলেন। ইহার ভ্রাতুষ্পপুত্র রাজকৃষ্ণ বিদ্যারত্ব "স্বচিন্তান্তঃ" নামক ভগবতীর স্তোত্র-গ্রন্থ লিখিয়া গিয়াছেন, এই গ্রন্থের একটি টীকাও তিনি স্বয়ং প্রণয়ন করিয়াছেন। শিরোমণির পৌত্র শ্রীযুক্ত বিরজানাথ তর্কপঞ্চানন মহাশয় জলসুখার বহুবিধ বৃত্তান্ত সহ স্বংশের বিবরণ প্রদানে আমাদিগকে সাহায্য করিয়াছেন। পরগণা-দিনারপুর বাণী বংশাখ্যান ইতিপূৰ্ব্বে আমরা ভুজবলের গোস্বামী বংশের উল্লেখ করিয়াছি, ভুজবলের গোস্বামী বংশ দিনারপুরের বাণী বংশের একটি শাখা ৯ রাঢ়দেশবাসী কাশ্যপগোত্রীয় শুভঙ্কর সিদ্ধান্ত রত্ন কোন কারণে স্বদেশ ত্যাগ করিয়া শ্রীহট্টের অন্তর্গত দিনারপুরের শতকগ্রামে আগমন করতঃ বাস করেন, তথায় তাহার হরিশ্চন্দ্র নামে এক পুত্রের জন্ম হয়, ইহার পুত্রই সুপ্রসিদ্ধ সিদ্ধ মহাত্মা ঠাকুরবাণী । ঠাকুরবাণীর অলৌকিক গুণগ্রামে বিমোহিত হইয়া শ্রীহট্ট জেলার বহুব্যক্তি তৎপ্রতি আকৃষ্ট হইয়া তদীয় শিষ্যত্ব স্বীকার করেন। শ্রীহট্টে যে সকল সিদ্ধ গুরুকুলের বাস, বাণীবংশ তন্মধ্যে সৰ্ব্বপ্রধান বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। সিদ্ধমহাত্মা ঠাকুরবাণীর প্রভাবই ইহার একমাত্র কারণ; ৪র্থ ভাগে আমরা উক্ত মহাপুরুষের চরিত কথা বর্ণন করিব। অনন্ত বংশ ঠাকুর বাণীর দুইটি বিবাহ ছিল, প্রথমা পত্নীর গর্ভে প্রথমে যে পুত্র জাত হয়, একটি সর্প তাহার দেহ বেষ্টন করিয়া জাত হইয়াছিল, এই জন্য অনন্তনাগের নামে উক্ত সন্তানের নাম অনন্ত রাখা হয়। মাতা সপটির প্রতিও স্নেহশীলা ছিলেন, দুগ্ধদানে তাহাকে পালন করিতেন। একদা নিদ্রিতাবস্থায় অনন্ত-জননী স্বপ্নে দেখিতে পাইলেন যে, তাহার গর্ভজ-সৰ্প যেন মনুষ্য ভাষায় তাহাকে বলিতেছে যে, এবংশে কদাপি সর্প ভয় থাকিবে না। ইহা বলিয়া সপটি মাতা হইতে বিদায় লইয়া চলিয়া গেল । রাত্রি প্রভাত হইলে জননী সপকে পূৰ্ব্ববৎ দুগ্ধহার দান করিলে, সৰ্প দুগ্ধ পান করিল, কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় যে, সপটি তৎপর চলিয়া গেল, আর ফিরিয়া আসিল না। যে কাষ্ঠাসনে বসিয়া জননী সর্পকে দুগ্ধ খাওয়াইতেন, তাহা এখনও দিনারপুরের জনৈক গোস্বামী-গৃহে১০ আছে। ৯. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) ৩য় ভাগ ৩য় খণ্ড ৫ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য।