পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড রাজেন্দ্রের বংশ কথা ঠাকুরবাণী তাহার জনৈক শিষ্য কন্যাকে তাহার পর বিবাহ করেন, ইহার গর্ভে রাজেন্দ্র নামে এক পুত্রের জন্ম হয়। দিনারপুর চেয়ালিশ ও চৌতলীয় গোস্বামী বংশ ইহার সন্তুতি। রাজেন্দ্রের১২ তিন পুত্র মধ্যে জ্যেষ্ঠ হরিরামের বংশধরগণ পৈতৃক বাসভূমি শতকবাসী; মধ্যম পুত্র শুকদেবের সন্ততিবর্গ চোঁয়ালিশবাসী এবং কনিষ্ঠ মণিরামের বংশধরগণ চৌতলীতে বাস করিতেছেন। ঠাকুররাণী কখন যে গৃহ ত্যাগ করেন, সাধন প্রভাবে তিনি যে কত দীর্ঘকাল জীবিত ছিলেন, তাহা বলা যায় না। তাহার পৌত্ৰগণের সময়ে তৎসংসৃষ্ট বহুঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়; ঠাকুর বাণীর কাহিনীর প্রসঙ্গে ৪র্থ ভাগের তাহা উল্লেখিত হইবে বলিয়া এস্থলে কথিত হইল না। হরিরামের পুত্র কৃষ্ণগোবিন্দ, তাহার পুত্রের নাম জয়গোবিন্দ, ইহার পুত্র দোল গোবিন্দ। ইহারা সকলই সাধক মহাত্মা ছিলেন। একদা জয়গোবিন্দ স্বীয় বালকপুত্র দোলগোবিন্দকে স্নেহবশতঃ স্নানের পূৰ্ব্বে তৈল মাখাইতে মাখাইতে বলিয়াছিলেন-“বাপ, তোমার গৃহে আমি জনিব ।" এতচ্ছ্রবণে বালক জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন—“বাবা, ইহা কি সত্য কথা? তবে তোমাকে কিরূপে বাবা বলিয়া চিনিব?” হাসিয়া পিতা বলিলেন—“দক্ষিণ পায়ের তলাতে একটি লাল চিহ্ন থাকিবে, তাহা দেখিলেই বুঝিতে পারবে যে আমি জনিয়াছি। এ কথা ভুলিয়া যাইও না।” পিতা পুত্রের এই কথা উপস্থিত সকলেই শুনিয়াছিল, ও তৈল মাখিতে অনিচ্ছুক বালককে ভুলাইয়া স্থির রাখিবার গল্প বলিয়াই মনে করিয়াছিল। দোল গোবিন্দ একদা শ্ৰীক্ষেত্র যাইতে ইচ্ছা করেন, কিন্তু তাহাকে তথায় যাইতে হয় নাই। ক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য যখন তিনি উদ্যোগ করিতেছিলেন, তখন একদা রাত্রে স্বপ্লাবস্থায় দেখিলেন যেন এক জগন্নাথ মূৰ্ত্তি জীবন্তভাবে তাহাকে বলিতেছেন, “তুমি শ্ৰীক্ষেত্রে যাইবে কেন? তোমার অভিলাষ পূর্ণ করিতে আমিই তোমার কাছে যাইব । বালশিরাস্থ উত্তরশরের দত্তদের পুষ্করিণীতে আমি আছি—উঠাইয়া লইয়া আসিবে ।” এই স্বপ্নে যাথার্থ পরীক্ষার্থ পরদিনই তিনি উত্তর শূর গমন করেন, ও দামদলাবৃত শ্বেতপদ্মবনাচ্ছাদিত জলাশয়ে লোকদ্বারা অনেক চেষ্টা করিয়াও মূৰ্ত্তি প্রাপ্ত হইলেন না; নিরাশ হইয়া ফিরিয়া আসিলেন । সেই রাত্রেও পুনঃ তিনি স্বপ্ন দেখিলেন, সেই জগন্নাথ মূৰ্ত্তিই যেন পুনঃ বলিলেন, “তুমিই স্বয়ং উঠাইবার কথা আমি বলিয়াছি, ভিন্ন লোকের দ্বারা আমি যাইতে চাহি না।" এইরূপ একই বিষয়ে ক্রমশঃ স্বপ্ন দেখিলে বিশ্বাস না হইবে কেন? দোল গোবিন্দ পুনশ্চ সেই পুষ্করিণী অভিমুখে চলিলেন এবং উপস্থিত হইয়া স্বয়ং জলে নামিয়া জগন্নাথ বিগ্রহ উত্তোলন করিলেন ও সেই বিগ্রহ লইয়া আসিলেন । ত্রিপুরাধিপতি মহারাজ গঙ্গাধর মাণিক্যের মহিষী দোল গোবিন্দের শিষ্যা ছিলেন। রাজমহিষী গুরুদেবের স্থাপিত জগন্নাথ বিগ্রহের সেবা পরিচালনের জন্য বার্ষিক ৩৬০ টাকা বৃত্তি প্রদান করিয়াছিলেন । ইহার পুত্রের নাম হরি গোবিন্দ। যাহারা আত্মিক তত্ত্বের আলোচনা করিয়া থাকেন, তাহারা বলেন যে আত্মিকগণ জীবিতাবস্থায় কোন প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ থাকিলে, তাহা পূর্ণ না করা পর্যন্ত তাহাদিগকে মানসিক অশান্তি ভোগ করিতে হয়; বিশেষতঃ পরলোকের প্রমাণ পক্ষে তাহারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ থাকিলে, তাহা পালন করিতে যত্নের ক্রট করেন না; ইহার না কি বহু উদাহরণ আছে।