পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : তরফের মজুমদারদের কাহিনী শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩১১ রামেশ্বর সেন” বলিয়া খ্যাত হয় ৪ রামেশ্বর সনন্দবলে তরফ, গদাহাসন নগর, নুরুল হাসন নগর, দাউদ নগর, গিয়াস নগর ও লস্করপুরের "শ্ৰীকণী” নিযুক্ত ও কর্তৃত্ব প্রাপ্ত হন।৫ হরিশরণ সেন ও পরবর্তী কথা রামেশ্বরের ছয়জন পুত্র ছিলেন; ছয়পুত্র রাখিয়া ১৬৯৫ শকাব্দে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন । এই ছয়পুত্রের মধ্যে হরিশরণ সেন চতুর্থ। ইনি যে শুধু বিদ্বান ও বুদ্ধিমান ছিলেন, তাহা নহে, তিনি যোগানুষ্ঠানে অতি উচ্চ স্থানে আরোহণ করিয়াছিলেন। মহাত্মা হরিশরণ হইতেই তুঙ্গেশ্বর বংশের মহাত্ম্য শতগুণে বিবৰ্দ্ধিত হইয়া পড়ে; তিনি তদীয় সুমহৎ কার্য্যের জন্য সৰ্ব্বসাধারণকর্তৃক “মহাশয়" আখ্যায় খ্যাত হন। তদবধি তদ্বংশীয়গণ আজ পর্যন্ত সে গৌরব প্রাপ্ত হইতেছেন। তাহারা “তুঙ্গেশ্বরেরমহাশয়" বলিয়া আখ্যাত হন। মহাত্মা হরিশরণের কথা আমরা ৪র্থ ভাগে ব্যক্ত করিব । হরিশরণ মজুমদার মহাশয়ের দ্বিতীয় পুত্র ভৈরবচন্দ্র স্বধৰ্ম্ম নিরত ব্যক্তি ছিলেন, তাহার অতুলনীয় শারীরিক সৌন্দর্যে সকলেই মোহিত হইত, অদ্রুপ শ্ৰী মানুষে অতি অল্পই দৃষ্ট হয়। তিনি একদা নিজ জমিদারির অন্তর্গত কোন একটি স্থানে পদব্রজে গিয়াছিলেন, কথিত আছে আগমন কালে পথিমধ্যে শুয়াইয়া নামক গ্রামে এক বৃক্ষতলে তাহার দেবদর্শন ঘটে । হঠাৎ এক জ্যোতিস্তরঙ্গের মধ্যবৰ্ত্তী দেবরূপ বিদ্যুৎফুরণের ন্যায় ক্ষণমাত্র তিনি দেখিতে পাইয়াছিলেন। তথা হইতে তিনি যখন বাড়ী আসিলেন, তখন সম্পূর্ণ ভাবান্তরিত অবস্থায় চিরযাত্রার বন্দোবস্ত করিতে লাগিলেন, তাহার ভাবদর্শনে আত্মীয়গণ কিছুই বুঝিতে পারলেন না; তাহাদের পুনঃ পুনঃ জিজ্ঞাসায় তিনি বললেন যে অচিরকাল মধ্যেই তদীয় মৃত্যু ঘটবে। এই কথায় সকলেই ভীত হইলেন, গম্ভীরাশয় ভৈরবচন্দ্রের কথা কেহই অবিশ্বাস করিতে পারিলেন না; দেখিতে দেখিতে সেই ভয়ঙ্কর দিন সমাগত হইল, তিনিও পূৰ্ব্ব কথিতানুসারে পরলোক যাত্রা করিলেন। ইহার কনিষ্ঠ সহোদর শিবচন্দ্র সেন মহাশয় নানা গুণের আধার ছিলেন, তাহার দেবদ্বিজে প্রগাঢ় ভক্তি ছিল। একদা শারদীয় পূজার পরে তিনি স্বগীয় কামাখ্যা পাঠ দর্শনে গমন করেন, তথায় একটি কুমারী দেবীভাবাপন্না হইয়া তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছিলেন-"অশুদ্ধ চণ্ডীপাঠ করাইয়া কিরূপে শুভ কামনা কর? অশুদ্ধ চণ্ডীপাঠে সোণার লঙ্কা ছারখার হইয়াছিল। এবার পূজাকালে আমি তোমার বাড়ীতে গিয়াছিলাম, নিবেদিত কমলালেবুতে তোমার ভৃত্য লোভ করিযাছিল, ইহা আর গ্রহণ করিতে পারি নাই।” ব্যথিত চিত্তে বাড়ীতে আসিয়া শিবচন্দ্র, দেবগৃহে নিয়োজিত ভৃত্য "দেওঘরি"কে ইহা ৪. এই তালুকের ভূ-পরিমাণ ৯৮৫ ০ হাল এবং রাজস্ব ১০২৩/৭০ আনা । “৫ নং তালুক হরকৃষ্ণ" জয়পুরের হরকৃষ্ণের নামে বন্দোবস্ত হয়। ইহার ভূ-পরিমাণ ১৫৯/০ হাল; রাজস্ব ৪১॥n.wপাই মাত্র। ৫. রামেশ্বরের প্রাপ্ত পারস্য সনন্দের মৰ্ম্ম এই ঃ সুবে বাঙ্গালার অন্তর্গত সরকার শ্রীহট্টের অধীন পরগণা তরফের বর্তমান ও ভবিষ্যকালের কৰ্ম্মচারী, চৌধুরী ও রায়তানকে জানান যায় যে পরগণা মজকুবের হিন্দুবর্গের শ্রীকণী (সরদার) হরগোবিন্দ সেনেব পুত্র রামেশ্বর সেনকে পূৰ্ব্বরীতি মতে পৈত্রিক সূত্রে নিযুক্ত করা গেল। উচিত যে তিনি বিধিসকল বাহাল রাখিয়া তাহার সতর্কতার সহিত পালন করিতে থাকেন, এবং পরগণা মজকুরের চৌধুরী-আমলা রায়তানের উচিত যে, ইহা জ্ঞাত হইয়া উক্ত রামেশ্বর সেনের লভ্য ও পাওনার যে রীতি আছে, ইহা জ্ঞাত হইয়া উক্ত রামেশ্বর সেনের আদায় করে ও ওজর না করে, ইহা তাদিগ (অত্যাবশ্যক) জানিব । অন্য তিন খানা সনন্দ গভর্ণর জেনেরেল বাহাদুর কর্তৃক প্রামাণ্য স্বীকৃত হয়, ইহাতে এইরূপ মন্তব্য লিখিত STC :-"Authenticated by the order of Governor General in council 11th April. 1788."