পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড রামসিংহ শিকদার ও সুঘরের রামপ্রিয়া গঙ্গাগোবিন্দ অতি শিষ্ট ও শান্ত প্রকৃতির লোক ছিলেন। রামশ্ৰী নিবাসী খোন্দকার, গঙ্গাগোবিন্দ হইতে কানুনগোই-সনন্দ ক্রয় করিয়াছেন বলিয়া এক দলিল উপস্থিত করেন ৮ এবং বন্ধু রামসিংহ শিকদারেরও যোগ ছিল। গঙ্গাগোবিন্দ নিরুপায় হইয়া তৎপ্রতিকারার্থে মুর্শিদাবাদে গমন করেন, এবং খোন্দকার ও রামসিংহ শিকদারের নামে অভিযোগ উপস্থিত করেন ॥৯ তরফ কাছারীর লালারাম সিংহ শিকদারের সহিত খোন্দকারের এরূপ আত্মীয়তা ছিল যে, তিনি তরফে হিন্দুদের অচ্চনার জন্য যেমন কালীমূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তেমনই মোসলমানদের উপাসনার জন্য এক মসজিদ প্রস্তুত করিয়া দিয়াছিলেন। এই কালীই তরফেশ্বরী নামে খ্যাত হন, ইহার কথা এ খণ্ডের সৰ্ব্বপ্রথমেই কথিত হইয়াছে। শিকদারের কৃত মসজিদটি বিগত ভূকম্পে বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে। গঙ্গাগোবিন্দের পত্নী রামপ্রিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য । গঙ্গাগোবিন্দের অনুপস্থিত কালে খোন্দকার গঙ্গাগোবিন্দের বাসগ্রাম ও তৎসন্নিহিত স্থান আত্মসাৎ করিতে উদ্যত হন। তখন এই তেজস্বনী বুদ্ধিমতী রমণীর বুদ্ধির কাছে খোন্দকারের কূট কৌশল ও জনবল বিফল হইয়া যায়, তিনি অকৃতকাৰ্য হন। দৈব-কৃপা গঙ্গাগোবিন্দ বহুকাল মুর্শিদাবাদে অবস্থিতি করিয়া সম্পত্তির উদ্ধার সাধনের সুবিধা করিতে সমর্থ হইলেন না। তখন তিনি দৈবের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া রহিলেন। দৈবাৎ এই দৈবের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া রহিলেন। দৈবাৎ এই সময়ে একজন সন্ন্যাসীর সহিত তাহার সাক্ষাৎ হয়, তিনি সন্ন্যাসীকে সমস্ত জ্ঞাত করিয়া দৈবকৃপা প্রাপ্তির জন্য কিছু করিতে অনুরোধ করেন; উক্ত সন্ন্যাসী তাহার অভিপ্রায় মত এক কালী মূৰ্ত্তির অচ্চনা করেন। পূজায় কোনরূপ বিঘ্ন উপস্থিত না হওয়ায় সন্ন্যাসী অষ্টচিত্তে তাহাকে বলেন যে, অচিরাৎ তিনি কৃতকাৰ্য হইবেন। বাস্তবিক তাহাই হইয়াছিল, সত্বরেই তিনি অভীষ্ট ফললাভে সেই কালীমূৰ্ত্তি লইয়া দেশে প্রত্যাগমন করেন। ঐ সময়ে জাহাঙ্গীর নগরের (ঢাকার) তহশীলদার মোহাম্মদ আলী খার প্রেরিত “সোয়ার” (অশ্বারোহী) আসিয়া তাহার জমিতে দখল দিয়া যায়। ইহার অল্প পরেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত ৭. ইহা একখানা তারিখও মোহরাদি ক্ষয়িত জীর্ণ সনন্দ হইতে জ্ঞাত হওয়া যায়। শ্রীযুক্ত কালীকুমার দেব মজুমদার মহাশয় সুঘরের মজুমদার বংশ বিবরণের সহিত উক্ত সনন্দের মৰ্ম্ম যাহা লিখিয়াছেন, তাহা এই ঃ সরকার শ্রীহট্টের অধীন মহলে তরফের কৰ্ম্মচারীয়ান, চৌধুবীয়ান ও রায়তানকে আলা জনাব সমস উদ্দৌলাব হুকুম মতে জানান যে উক্ত পরগণার কানুনগোই রঘুনাথ রায়ের হস্ত হইতে তাহার ছোট ভাই গঙ্গা গোবিদেব হস্তে দেওয়া যায়। উচিত যে তাহকে পরণণার কানুনগো জ্ঞানে তাহার পরামর্শ অনুযায়ী কাৰ্য্য করে, ও কোনরূপ ক্ষতিগ্রস্থ না হয় । ৮. পূৰ্ব্বে চৌধুরাই কানুনগোই ইত্যাদি পদের সনন্দ ক্রয় বিক্রয় হইত। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৪র্থ অধ্যায়ে “নবাবি আমলে দেশের অবস্থা” প্রকরণে তাহা বলা গিয়াছে, এবং ঐ খণ্ডের ১১শ অধ্যাযে “দস্তখত” বিক্রয়ের একটা উদাহরণ প্রদত্ত হইয়াছে। ইহার আরও বহুতর উদাহবণ বিষয় প্রসঙ্গে স্থানে স্থানে উক্ত হইয়াছে । ৯. এস্থলে তোতিওর রহমানের নাম উল্লেখিত আছে। তেতিওর রহমানের সময়ের তরফে কৃষ্ণ শিকদাব বৰ্ত্তমান ছিলেন; শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে পাঠক ইহাব উল্লেখ পাইযাছেন। রাম শিকদার উক্ত কৃষ্ণ শিকদারের পরবর্তী। তরফের প্রসিদ্ধ হাঙ্গামার পরে রাম শিকদার "চাকলাদার" নিযুক্ত হইয়াছিলেন । এই সময় রামশ্রীতে রিয়াজুর রহমান ছিলেন। (পরবর্তী ৭ম অধ্যায় দেখ ।)