পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড উত্তরভাগে বাস করেন; তৎপর দত্তপাড়ায় বাড়ী নিৰ্ম্মাণ করেন। এতদ্ব্যতীত ষাটিয়াজুরীর বংশও একটি সুসম্মানিত বংশ। মজুমদারগণ এবং এ সব বংশীয়বর্গের প্রতিপত্তি তরফে অতি প্রবল। তরফের হিন্দু সম্প্রদায়ে তুঙ্গেশ্বর, জয়পুর, দত্তপাড়া, দাসপাড়া, হাসারগাও, ও ষাটিয়াজুরী, এই পাচ গ্রামের ভদ্র পরিবারে "পঞ্চগ্রামী" নামে এক সমাজ আছে। সুঘর ইহার মধ্যে নহে, সুঘরের মজুমদারের সামাজিকতা তাহাদের স্বগ্রামে নিবদ্ধ। কর বংশের কথা তরফের সাত কাপনের কর বংশের আদি নিবাস হুগলী জেলা। ভরদ্বাজ গোত্রোদ্ভব বৈদ্যজাতীয় এই কর বংশ ও আদিত্য বংশ প্রায় সমসাময়িক। কর বংশের আদি পুরুষ, পরস্পর জ্ঞাতি সম্পর্কিত দুই ব্যক্তি চিকিৎসা উপলক্ষে এ দেশে আগমন করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। ইহাদের সহিত ষাটিয়াজুরীর ভট্টাচাৰ্য্যগণের আদি পুরুষও আসিয়াছিলেন; তাহারাই করদের কুলপুরোহিত। চিকিৎসা ব্যবসায়ী সেই আদি করেরা প্রথমে “স্নানঘাটে” উপস্থিত হইয়া ছিলেন; তথা হইতে একজন পুটিজুরীতে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি সাতকাপনে গমন করেন। পুটিজুরীর চৌধুরী, পুরকায়স্থ এবং রায় উপাধিবিশিষ্ট করবংশীয়গণের সহিত এক্ষণে সাতকাপনের কর বংশের অশৌচ নাই। সাতকাপন হইতে পরে আর একজন দক্ষিণ শ্রীহট্টের ভীমশী গমন করিয়া বাস করেন; সে বংশীয়গণ অদ্যাপি তথায় আছেন। দুৰ্য্যোধন কর করবংশীয়ের কীৰ্ত্তিকথা সামান্যই সংগৃহীত হইয়াছে। সাতকাপনের কর বংশে পূৰ্ব্বে দুৰ্য্যোধন নামে এক ব্যক্তির উদ্ভব হয়; দুৰ্য্যোধন অশেষ প্রতাপশালী ব্যক্তি ছিলেন; তিনিই তাহার সময়ে তদঞ্চলে সমাজপতি ছিলেন। কোন সামাজিক সভায় যখন সকলে একত্রিত হইত, তথায় দুৰ্য্যোধন সকলের সমাসনে বসিতেন না বলিয়া, কথিত আছে যে তাহার জন্য পৃথক এক ক্ষুদ্র চৌকি প্রদত্ত হইত; তাহাতে দুৰ্য্যোধন বসিতেন। তিনি উপবেশন করিলে সসম্মান করিয়া সকলেই তাহার গলে পুষ্পমালা প্রদান করিত, এই জন্য তাহার বংশ "মালাধারী কর" বলিয়া খ্যাত, ইহাদের এ গৌরব বহুকাল ছিল। দুৰ্যোধনের সন্ত্রমজ্ঞান কিরূপ প্রবল ছিল, একটা ঘটনা হইতে তাহা সম্যক জানা যায়। তাহার বাড়ীর বহির্ভাগে তিনি এক দীর্ঘিকা দেন, উহা “করের দীর্ঘী" বলিয়া আজও কথিত হয়। এই দীঘিকা-তীরে তিনি এক ফুলের বাগান প্রস্তুত করিয়াছিলেন। নানাবিধ কুসুম সৰ্ব্বদা ঐ বাগানের বাহার বিস্তার করিয়া বিলাসী ব্যক্তিবর্গের চিত্তে বিমল আনন্দ বিধান করিত। একদা কাৰ্য্যানুরোধে দুৰ্য্যোধন শিবিকারোহনে লস্করপুর গমন করেন, এই অবসরে তদীয় দ্বিতীয়া পত্নী উক্ত উদ্যান দর্শন জন্য কৌতুহলাম্বিতা হইয়া জনৈকা পরিচারিকা সহ বাটী হইতে বহির্গত হন; দৈববশতঃ পথ হইতে তৎকালে দুৰ্য্যোধন প্রত্যাগম হইয়া তদবস্থায় পত্নীকে প্রাপ্ত হন। অভিমানী দুৰ্য্যোধন এই সামান্য অপরাধে অল্পবয়স্কা গর্ভবতী পত্নীকে পরিবর্জন করেন। মুড়াগাও নামক স্থানটি তিনি পরিবর্জিত পত্নীকে প্রদানপূৰ্ব্বক এক বাটিকা প্রস্তুত করিয়া দেন। সেই স্থানে এই রমণীর একটি পুত্র সন্তান জাত হয়; তাহার বংশধরগণ এখন আদিত্যপুরাবাসী । সাতকাপনের করবংশীয় শ্ৰীযুত নবকিশোর কর মহাশয় হইতে তরফের অন্যান্য বিবরণ সহ ইহা প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে।