পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম অধ্যায় : বিবিধ বংশ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩২১ জয়নারায়ণ দসু্যদমনে অত্যন্ত চেষ্টাম্বিত হইয়াছিলেন, তাহার প্রতাপে তৎকালে তদঞ্চলে দসু্যর নাম শুনা যাইত না। সেই সময় নানা স্থান হইতে বিশিষ্ট ভদ্রলোকেরা রিচি আগমন করেন। জয় নারায়ণ মৃত্যুঞ্জয় সিংহ নামক জনৈক উদাসীনকে বিশেষ শ্রদ্ধা করিতেন। ইনি গ্রামের একাংশে একটি বৃক্ষ বাটিকায় বাস করিতেন, কিন্তু বন্য হিংস্র জন্তুগণ তাহার কোন অনিষ্টই করিত না। আয়ুৰ্ব্বেদে মৃত্যুঞ্জয়ের বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল, তিনি অনেকবার ত্রিপুরাধিপতিকর্তৃক আহত হইয়া রাজবাটিতে চিকিৎসা করিয়াছিলেন। জয় নারায়ণ চৌধুরী অল্প বয়সেই খ্যাতনামা হইয়া উঠিয়াছিলেন। তাহার গৌরবময় জীবন কালের পরিমাণ মাত্র ৩৮ বৎসর। ইহার বংশীয়গণ রিচিতে সসম্মানে বাস করিতেছেন। পরগণা-মুড়াকড়ি দত্ত বংশকথা পরগণা মুড়াকড়ি লাখাই পরগণার খারিজ; পূৰ্ব্বে ইহা একবার শ্রীহট্ট হইতে ময়মনসিংহের এলাকাধীন হইয়া পড়িয়াছিল, পরে ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে পুঃ শ্রীহট্ট জেলা ভুক্ত হয়। মুড়াকড়ি ভেড়ামোহানা নদীর উভয় তীরে অবস্থিত । এই পরগণার পূৰ্ব্ব-উত্তর সীমায় বাণিয়াচঙ্গ, দক্ষিণ সীমায় বরাক এবং পশ্চিম সীমায় ভেড়ামোহানা নদী। সন্নিহিত বরাকের উভয় তীরেই ভট্টাচাৰ্য্য বংশীয়ের অধূষিত বাজুকা গ্রাম । মুড়াকড়ি পরগণার জমিদারগণ বাজুকাবাসী চৌধুরীবংশীয় ছিলেন । দক্ষিণ রাঢ়ের বটগ্রামে ভরদ্বাজ গোত্রীয় দত্তোপাধি একব্যক্তি (প্রায় পাচশত বৎসর হইল) এই অঞ্চলে আগমন করেন। দত্ত বংশ তালিকায় দৃষ্ট হয় যে ইহার সন্ততিবর্গ মধ্যে অনেকেই খা উপাধি বিশিষ্ট সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন ৬ তদৃষ্টে ইহাও জানা যায় যে জগদীশপুরের দত্তগণও একই দত্তবংশের বিভিন্ন শাখা মাত্র। উক্ত দত্ত মহাশয়ের দশম পুরুষে শ্যামরায় নামে একব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন, শ্যামরায়ের পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী ব্যক্তিবর্গের বিবরণ অজ্ঞাত । শ্যামরায়ের দুইপুত্র হয়, ইহাদের নাম উদন রায় ও মদন রায় । জ্যেষ্ঠ উদন রায় "মর্কর রায়” নামে খ্যাত ছিলেন । এই দুই ভ্রাতা হইতেই মুড়াকড়ি পরগণার উৎপত্তি । ইহারা হিংস্র জন্তু-পূরিত জঙ্গলাচ্ছাদিত এই স্থানটিই আবাদ করিয়া লইয়াছিলেন। তাহারা এই নূতন স্থানটি আপনাদের বাসের জন্য মনোনীত করিয়া লয়েন। এই নব আবাদি স্থানে তাহারা বাসের জন্য বাটিকাদি প্রস্তুত করেন, তাহাদের দেখাদেখি ক্রমে আরও অনেক লোক এই নূতন স্থানে আগমন করে ও তাহাতে একটি ক্ষুদ্র গ্রামের পত্তন হয় । জ্যেষ্ঠ মকর রায়ের নামানুসারে ইহা মরকর বা মুড়াকর নামেই খ্যাত হয় এবং পশ্চাৎ মুড়াকড়ি পরগণায় পরিণত হয়। এই পরগণার নামোৎপত্তি সুতরাং বহুদিনের কথা নহে। এই ভ্রাতৃদ্বয়ের বংশধরগণ মুড়াকড়িবাসী; মুড়াকড়িতে একটি প্রবাদ-বাক্য আছেঃ “মধু গৌর নিতাই । এছাড়া আর কেহ নাই৷” এই পরগণার মধু, গৌর ও নিতাই নামক ব্যক্তিত্রয় বিশেষ বিখ্যাত ছিলেন। মধু দাসবংশীয় চৌধুরী। মুড়াকড়িতে এ বংশের অনেক কীৰ্ত্তি আছে । (তন্মধ্যে গোবিন্দ ও গোপালজির আখড়া ও বালির চরের কালীই প্রধান; এই কালী প্রায় ১৪ হাত উচ্চ ।) ৬. এই বংশীয় শ্রীযুক্ত পূর্ণচন্দ্র চৌধুরী মহাশয় স্বীয় বংশ বিবরণ সহ যে বিস্তৃত বংশতালিকা আমাদের কাছে প্রেরণ করেন নিম্নে সংক্ষিপ্ত তালিকাটা তাহা হইতে গৃহীত। বটগ্রামাগত আদি পুরুষের জীবরায়, নীলরায় ও কুমদরায় নামক তিন পুত্রেব মধ্যে জীবরায়ের জ্যেষ্ঠপুত্রেব নাম গুলালরায়, তৎপুত্র বশিষ্ট শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-তৃতীয় ভাগ)-২১