পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[তেত্রিশ] শ্রীহট্টের বৈদ্য ও বৈদ্য কায়স্থ শ্রীহট্ট দেশে, বলাবাহুল্য এ সকল শ্রেণী বিভাগ ও সিদ্ধ সাধ্যাদি ভেদ লক্ষিত হয় না। দক্ষিণ শ্রীহট্টের আলওয়া প্রভৃতি স্থানের বৈদ্য হইতে তাহারা বিশেষ ভিন্ন নহেন। জনৈক সমাজ তত্ত্বজ্ঞ কায়স্থ সন্তান আমাদিগকে লিখিয়াছেনঃ- "শ্রীহট্ট জেলায় অধুনা বৈদ্য কায়স্থে মিশামিশি হইয়া গিয়াছে, কেবল গোত্র ও পদ্ধতিতে বৈদ্য ও কায়স্থ বনিয়াদ চিনা যায়; তাহা ছাড়া আর বিশেষত্ব নাই। শ্রীহট্টের বৈদ্যদের অধিকতর কৌলিণ্য বাস্তবতঃ না থাকিলেও নামে একরূপ বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছে। লোকে কথায় বলে যে, ইটা, চৌয়ালিশ, দুলালী, তরফ ভদ্রলোকের স্থান ।” ইত্যাদি। কায়স্থ বলিয়া কোন পার্থক্য নাই; পরস্পর বৈবাহিক সম্বন্ধ প্রচলিত আছে। বঙ্গের অন্যান্য স্থানে কায়স্থ বৈদ্যে যেরূপ বিরোধ বিষম্বাদ, বিবাহ দূরে থাকুক, এক শ্রেণীর সহিত অন্যে পংক্তি ভোজন পর্যন্ত করেন না, সুখের বিষয় শ্রীহট্টে সেইরূপ অসম্ভাব নাই, তবে কেহ কেহ বঙ্গের অন্যান্য স্থানের অনুকরণে কখন কখন কায়স্থ বৈদ্য বলিয়া পার্থক্য প্রদর্শন করিতে চেষ্টা করিয়া থাকেন, কিন্তু কাৰ্য্যক্ষেত্রে সে পার্থক্য দাড়ায় না।” এই জাতি কাহারা ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের পরেই শাস্ত্রে বৈশ্যজাতির নাম পাওয়া যায়। অতঃপর তৃতীয় বর্ণের বিষয় আলোচ্য হইতেছে; এই বৈশ্যজাতি কাহারা? ব্রহ্মার উরুদেশ হইতে বৈশ্যের উৎপত্তি ॥১৮ বৃহদ্ধৰ্ম্মপুরাণে তাহদের উৎপত্তি ও বৃত্তি সম্বন্ধে লিখিত আছে যে, ব্রাহ্মণের বেদপাঠ, ক্ষত্রিয়ের প্ৰজাপালন, বণিকজাতির ধনরক্ষা এবং শূদ্রের জন্য ত্রিবর্ণের সেবা নিরূপিত হইয়াছে ১৯ বণিক শব্দে বৈদ্য জাতিই বুঝাইতেছে ২০ কিন্তু কাল সহকারে বঙ্গীয় বৈশ্যজাতির, বঙ্গীয় ক্ষত্রিয়ের (কায়স্থের) ন্যায় ব্রাত্যত্ব প্রাপ্ত হন। তজ্জন্য এই উভয় জাতিই শূদ্ৰবৎ বলিয়া পরিকীৰ্ত্তিত হইয়াছেন২১ এবং তাহাতেই স্মাৰ্ত্ত ভট্টাচাৰ্য্য ঘোষণা করিয়াছেন যে, বঙ্গের ব্রাহ্মণ ও শূদ্র এই দুইটি জাতিই মাত্র দৃষ্ট হয় ২২ বস্তুতঃ ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই দুইটি জাতি যে লোক পাইয়াছিল, ১৭. "ব্ৰাহ্মণাদ্বৈকন্যায়াং অম্বষ্টো জায়তে।" মনু ১০ম অধ্যায় ৮ম শ্লোক । “দুহিপিনীযক চায়ু পন্থত্রিপুরকায়ুকাঃ। শিযালগয়িবিত্যষ্টেী বাঢ়ে বঙ্গে প্রতিষ্ঠিতাঃ” দুহি, শিয়াল ও গয়িসেন, আয়ু ও পন্থদাস, ত্রিপুর ও পিনাক ও গুপ্ত এবং কাউ নন্দী, এই আটজন মুখ্যকুলীন । ১৮. "মুখোতো ব্রাহ্মণোজাতো বাহুভ্যাং ক্ষত্রিয়স্তথা । উরুভ্যাঞ্চ তথাবৈশ্যঃ পদভ্যাং শূদ্র সমুম্ভবঃ॥" বিষ্ণুপুরাণ ১ম অংশ ৭ম অধ্যায় । ১৯. "অসাভবণ মুখাদ্বিপ্রাঃ সৰ্ব্বদেব সমাশ্রয়া । বাহোশ্চ ক্ষত্রিয়া জাতাঃ ধনরক্ষণ হেতৰ্ণে । উরুতো বাণিজ্যে জাতীঃ ধনবক্ষণ হেতবে । এযানাং সেবনাৰ্থার শূদ্রা জাতাতু পাদতঃ।” -বৃহদ্ধৰ্ম্মপুরাণ । ২০ যথা— “বৈশ্যস্ত ব্যবহত্তা বিটবাৰ্ত্তিকঃ পণিতে বণিক "– ইতি বাজনির্ঘণ্ট । ২১. "কলেী শূদ্ৰসম জ্ঞেয়া তথা ক্ষত্রা যথা বিশঃ।" ইতি বিষ্ণু । ২২. “যুগে জঘন্যে দ্বেজাতী ব্রাহ্মণঃ শূদ্র এবচ "-- ইতি শুদ্ধিতত্ত্বে স্বাৰ্ত্ত ভট্টাচার্যোণাপু্যক্তং । শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-তৃতীয় ভাগ)-৩