পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[চৌত্রিশ] তাহা নহে। ক্ষত্রিয়ের কথা ইতিপূৰ্ব্বে বলিয়াছি। "বঙ্গীয় সাহুবণিক প্রভৃতি জাতিই বৈশ্য বা তৃতীয় বর্ণ।২৩ "সম্বন্ধ নির্ণয়” গ্রন্থে গ্রন্থকার লিখিয়াছেন “বৈশ্যদিগের জাতীয় ব্যবসায় বাণিজ্য, কৃষি ও কুসীদব্যবহার। ইহাদের সাধারণ নাম বণিক। বঙ্গদেশীয় বৈশ্যগণ শূদ্র মধ্যে পতিত হইয়াছেন।” বিশ্বকোষ মহাভিধানে লিখিত হইয়াছে “ভারতের সৰ্ব্বত্রই এখনও বৈশ্যজাতির বাস রহিয়াছে। অথচ যে বঙ্গীয় বণিকগণের খ্যাতি পূৰ্ব্বে দেশ বিদেশে বিশ্রুত হইয়াছিল, বাঙ্গালায় সেই বৈশ্যজাতি এক কালে লোপ পাইল, কে বিশ্বাস করিবে? বাস্তবিক বাঙ্গালায় এখনও বৈশ্যজাতির অভাব নাই, বণিক বা ব্যবসায়জীবী লক্ষ লক্ষ বৈশ্য এখনও গৌড়বঙ্গে বিদ্যমান। এদেশে গন্ধ বণিক, সুবর্ণ বণিক, তাম্বুল বণিক, সাহা বণিক (পূৰ্ব্ববঙ্গের সাহা মহাজন) প্রভৃতি জাতি যে বৈশ্য বংশধর, তাহাতে সন্দেহ নাই।” সাহু শব্দের অর্থ কি? শেষোক্ত সাহা বণিক জাতির কথাই এস্থলে আলোচ্য ২৪ তাহদের বৃত্তি, জাতীয় নাম এবং বংশ পদ্ধতি হইতে তাহাদের বৈশ্যত্ত্ব প্রতিপাদিত হয়; ইহা সুধী সমাজের সিদ্ধান্ত। সাহুবণিক জাতির নামতত্ত্ব সম্বন্ধে "সৌলুক কুল কারিকায়" লিখিত আছে যে, “দনুজ গুরুর অভিশাপে সুলুকোস্তব সেলুক্য বা শুল্কজাতি সাহা নামে খ্যাত হয় । শুদ্ধাচারিতা ও ধৰ্ম্ম নয়া হেতু সাধু নামেও খ্যাত হয়, ইহারা নিঃসংশয়ে বৈশ্য "২৫ শ্রীযুক্ত কৃষ্ণনাথ ঘোষ স্বীয় গ্রন্থে লিখিয়াছেন– “সাহা এই শব্দটি জাতিবাচক নহে, যেমন বণিক শব্দে কোন জাতিকে না বুঝাইয়া যাহারা ব্যবসায় করে, তাহাদিগকেই বুঝায়, সেইরূপ পূৰ্ব্বে সাহা শব্দে কোন জাতিকে না বুঝাইয়া যাহারা ব্যবসায় করে, তাহাদিগকেই বুঝাইত । কিন্তু বৰ্ত্তমানে সাহা বলিলে একটি জাতিবিশেষকেই লক্ষ্য করে। সাহা শব্দের অর্থ কেবল ব্যবসায়ী নহে। সংস্কৃতে সাধু শব্দের অপভ্রংশে সাহু, সাহা ও সা। সংস্কৃতে সাধু শব্দের অর্থ ধনবান, জ্ঞানবান, ধাৰ্ম্মিক, বণিক, ব্যবসায়ী: সুতরাং সাধু, সাহা ও বণিক এই তিনটি শব্দই একার্থ বোধক "২৬ স্বগীয় ধৰ্ম্মানন্দ মহাভারতী মহাশয় বলেন– “সাহা শব্দ একটি পুরাতন ও প্রখ্যাত সংস্কৃত শব্দের অপভ্রংশ। ঐ শব্দের নাম সাধু । বিহারে, অযোধ্যায়, উত্তর পশ্চিম প্রদেশে এবং ভারতবর্ষের আরও নানা স্থানে 'ধু অন্তক শব্দ ‘হু! বলিয়া অভিহিত হয়; যথাঃ- বধু-বহু, গোধুম-গোহুম, দধি-দহি, মধু-মহু, বা মৌ, মধুপুরী-মহুপুরী, অবধূত-অবহুত, দাদুজী-দাউজী ইত্যাদি। এইরূপে ঐ সাধু শব্দ সাহু, সাউ, সাহা, সউহ, সা, সাজী প্রভৃতি শব্দে অপভ্রষ্ট হইয়া গিয়াছে। সংস্কৃত সাধু শব্দের অর্থ শুদ্ধচেতা লোক, ত্যাগী, ব্ৰহ্মদশী, ধনবান, বণিক, ব্যবসায়ী প্রভৃতি। জাতিতত্ত্বে সাধু শব্দের অর্থ বণিক। বৃহৎ সংহিতার সাধুনাং বণিজাম" এইরূপ লিখিত ১৩. প্রাচ্যবিদ্যামহর্ণব শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু কৃত "বঙ্গের জাতীয় ইতিহ:স”— বৈশ্যকাণ্ড । ২৪. বণিক পঞ্চবিধ । শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ১ম ভাগ ৭ম অধ্যায়ে অন্যান্য বণিক জাতির কথা উল্লেখিত হইয়াছে । ১৫. “দনুজ গুরু শাপান্তে রাষ্টিকঃ কৃমিকঃ রুচিঃ । সৌলুক্যঃ সুলুকোদুলঃ শুল্ক সাহা বভুবহ । সাধুত্বস্যালভৎ কিল ধৰ্ম্ম নিষ্ঠা পরাগতিঃ॥" বঙ্গের জাতীয ইতিহাস ধূত সেলুক কুল কারিকাণ বচন । ২৬. কুল প্রতিভা ৩য় খণ্ড ৩৭ পৃষ্ঠা।