পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ অধ্যায় : পুনঃ বিবিধ বংশ কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৩৫ কৃষ্ণরামের পুত্রের নাম নবকিশোর, তৎপুত্র নব নারায়ণ সূক্ষ্ম বিষয়-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। এম এ পরীক্ষোত্তীর্ণ শ্ৰীযুত ব্রজেন্দ্র লাল দাস চৌধুরী প্রভৃতি ইহার পুত্ৰগণ পৈতৃক সম্পত্তি ও সম্মানের অধিকারীরূপে বৰ্ত্তমান আছেন ॥৫ গোপায়ার চৌধুরী বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৫ম অধ্যায়ে পৈলের বিবরণে শাহ নুরির কথা লিখিত হইয়াছে। নুরি যখন দিল্লী হইতে নিজ নামে “নুরুল হাসন নগর" পরগনা খারিজ করিয়া আনয়ন করেন, সেই সময় কালারাম পাল নামক এক ব্যক্তি স্বগুণে ঢাকার নবাব হইতে “রায়” উপাধির সহিত শ্রীহট্টে কতক জায়গীর প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। শাহ নুরি সেই কালারামকে নিজ অনুষঙ্গীরূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন। কালারাম নিজ জায়গীর ভূমের নাম “গোপায়া” বলিয়া নির্দেশ করেন। রাজানুগ্রহে তিনি এই ভূমি দান প্রাপ্ত হন বলিয়া এই নাম নির্দেশ করিয়াছিলেন। (গো অর্থে পৃথিবী, পায়া প্রাপ্ত হওয়া ) শাহনুরি কালারামকে অত্যন্ত ভালবাসিতেন; এমন কি, তিনি এই স্থানে স্বয়ং উপস্থিত হইয়া কালারামের গৃহের “নিশান” স্থাপন করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। কালারাম নিজ ভ্রাতা কুলরাম প্রভৃতিকে পরে এই স্থানে আনয়ন করিয়া স্থাপন করিয়াছিলেন। কালারাম বেকিটেকা বাজারের নিকট একটা ঘাট বসান, ইহা “কালারামের ঘাট" নামে খ্যাত আছে; ঐ স্থান এক্ষণে মৎস্য বিক্রয়ের এক প্রধান আড্ডা। তিনি কয়েকটি হাট বসাইয়াছিলেন বলিয়। কথিত আছে । কালারামের পুত্র রাম দাস, তৎপুত্র চান্দরাম, তাহার পুত্রের নাম জগৎরাম, তৎপুত্র আদিত্য রাম, তাহার পুত্রের নাম শ্যামরায়, শ্যামরায়ের পুত্র প্রসাদরাম, ইহার উৎসব রাম নামে এক পুত্র হয়; ইনি সাধারণতঃ উছব পাল নামে খ্যাত ছিলেন। ইহার সময় হইতেই এই পাল বংশীয়গণ “চৌধুরী” উপাধি ধারণ করিয়া আসিতেছেন। উছব পাল একজন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন, তিনি অকমণবর্গকে ঋণদান করিয়া অনেক অর্থ উপাৰ্জ্জন করেন, এবং তাহাতে তরফ পরগণার অনেক তালুক ক্রয় করিয়া জমিদার শ্রেণীতে গণ্য হন। তাহার প্রতাপে অনেক দুষ্ট লোক দমিত হইয়াছিল। তিনি নিজগৃহে বিষ্ণুমন্দির প্রতিষ্ঠিত করিয়া শ্রীধর বিগ্রহ স্থাপন করেন এবং খোয়াই নদীতীরে “গোবিন্দগঞ্জ” নামে একটি বাজার বসান। সেই স্থানে তিনি একটি বিদ্যালয় সংস্থাপন করিয়া যশস্বী হন। প্রায় বিংশতি সহস্র মুদ্রা আয়ের ভূসম্পত্তি রাখিয়া ১২৬৯ বাংলায় তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাহার পুত্র হরগোবিন্দ অতি ধাৰ্ম্মিক ও সদগুণসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন; হবিগঞ্জে তিনি “চৌধুরী বাজার" নামে একটি বাজার বসাইয়াছিলেন; উহা এক্ষণে একটি প্রধান বাজারে পরিণত হইয়াছে। গোপায়ার মধ্য ইংরেজী স্কুল প্রতিষ্ঠা তাহার আর এক কীৰ্ত্তি। ৩৫ বৎসর মাত্র বয়সে পুত্র হরকুমার পাল চৌধুরীকে নাবালক অবস্থায় রাখিয়া প্রাণত্যাগ করেন। হরকুমারও একজন উপযুক্ত জমিদারূপে গণ্য হন, তাহার পুত্র শ্রীযুক্ত জিতেন্দ্রকুমার পাল চৌধুরী বৰ্ত্তমান আছেন। গোপায়া স্কুলের পণ্ডিত শ্রীযুক্ত নীলকান্ত চক্রবর্তী মহাশয় হইতে এই বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। ♥ስ ৫. প্রেরক শ্রীযুক্ত শরচ্চন্দ্র দত্ত।