পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড বহুলার বংশ বিবরণ তরফ পরগণায় হবিগঞ্জের সন্নিকটবৰ্ত্তী বহুলা প্রাচীন গণ্ডগ্রাম। বদ্ধমান জেলায় কাটোয়া অঞ্চলে পীঠস্থানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী “বহুলা"। কোনও সাধক দেবীর নামে গ্রামের নামকরণ, করিয়াছিলেন কিনা, অথবা গ্রামের বিস্তৃতি-সমৃদ্ধি লক্ষ্য করিয়া ইহার নাম “বহুলা" হয় কিনা, তাহা এক্ষণে জানিবার উপায় নাই। তবে গ্রামের প্রসিদ্ধি বহুকাল হইতে। তরফের “আনন্দপুর” মহালের অধিকারী আনন্দরাম দত্তের নিবাস এই গ্রামে ছিল। পরে এই দত্তজবংশ মোসলমানধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া মোসলমান সমাজভূক্ত হইয়া যান। এই বংশের সুবিদ্বান মৌলবী সাহেব আব্দুল রহিম বীরভূমের তদানিন্তন পাঠান বংশীয় নবাবের শিক্ষকতা করিয়া যথেষ্ট যশঃ ও অর্থ অৰ্জ্জন করেন। পরে ইহারা “চৌধুরী” উপাধি ধারণ করিয়া এক ঘর বহুলা গ্রামেই স্থায়ী হইয়াছেন। অপর এক ঘর পুটিজুরীর অন্তর্গত ও ভাদেশ্বর দৌলতপুরে উঠিয়া যান। ইহারা বলিয়া থাকেন ইহাদের পূৰ্ব্বপুরুষ ও রিচির দত্তচৌধুরীগণ একই বংশীয়। বহুলার এই দত্তবংশের সঙ্গে সঙ্গে তাহাদিগের পুরোহিত বংশও মোসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন, কিছুদিন পূৰ্ব্ব পর্য্যন্তও তাহারা মোসলমান হইয়াও “ঠাকুর" পদবীতে অভিহিত হইয়াছিলেন। “গোপাল রায়”, “সুবল গৌরাঙ্গ”, “লাখুউদ্ধব”, ভঙ্গুবাঞ্ছী নামীয় তালুকের অধিকারীগণও সকলেই এ গ্রাম নিবাসী । গ্রামের অগ্রণী দত্তজগণ পুরোহিত সহ মোসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করায় ভগ্নোৎসাহে অন্যান্য বিশিষ্ট হিন্দুগণ মধ্যে অনেকে এ গ্রাম ত্যাগ করিয়া স্থানান্তর বসতি করেন। বহুলা গ্রামবাসী অন্যতর বংশোদ্ভব পরলোকগত সদাময় রামদুলাল দাসের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য, কলিকাতার টেরেটি বাজারে তাহার বিস্তৃত কারবার ছিল। তাহার মাতৃশ্ৰাদ্ধে মুক্তহস্তে দান করিয়া তিনি যশস্বী হন, তখন দেশে দুর্ভিক্ষ ছিল, দুর্ভিক্ষের সময়ে এরূপ দানবহুল শ্ৰাদ্ধ ব্যাপার এতদঞ্চলে তাহার স্মৃতি চির জাগরক রাখিয়াছে। বহুলাবাসী আমাদের বিবরণ প্রদাতা স্বৰ্গীয় কৃষ্ণচন্দ্র দাস বি,এ সুদূর কাশ্মীর রাজ্যে যিনি রাজমন্ত্রীর আফিসে সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট পদে নিযুক্ত ছিলেন, বৃদ্ধ পিতামহ এস্থান বাসী হন, তাহার নাম তুলসী দত্ত। কবিরাজী ব্যবসায়ী তুলসী দত্ত নবাবী আমলে যশোর হইতে কৰ্ম্মোপলক্ষে আসিয়া উচাইল গ্রামে "ধানুপাবন" নামে পরিচিত গোষ্ঠিতে বিবাহ করিয়া এদেশে থাকিয়া যান। উক্ত গোষ্ঠির কোনও মহাজনের জেলা বাখরগঞ্জের অন্তর্গত নলচিঠিতে কারবার ছিল, যশোর নিবাসী তুলসীদত্তও সেইখানে কবিরাজী করেন। মহাজন কোনও রোগীর চিকিৎসার্থ তাহাকে এদেশে লইয়া আসেন। এই বিবাহ লইয়া ঢাকার নবাব সেরেস্তায় অসবর্ণ বিবাহেব অভিযোগ হইয়াছিল, শ্রীহট্টের চিরাচরিত প্রথার সমর্থনে অভিযোগ পণ্ড হইয়া যায়। তুলসীদত্তে অনন্তর বংশীয়েরা উচাইল গ্রাম হইতে উঠিয়া আসিয়া কিছুকাল ভদ্রগৃহ বা ভাদিগিরা গ্রামে বাস করেন ও পরে বহুলায় আসিয়া বাসস্থাপন করেন। ভদিগিরায় (অধুনালুপ্ত) এক শাখা “উত্তম কৃপারামের” গোষ্ঠিনামে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। মাছুলিয়ার জগন্মোহিনী সম্প্রদায় কাহিনী শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে ১ম ভাগের ৮ম অধ্যায়ে ধৰ্ম্ম "প্রকরণে” “জগন্মোহিনী" সম্প্রদায়ের উল্লেখিত হইয়াছে। স্বগীয় অক্ষয়কুমার দত্ত কৃত উপাসক সম্প্রদায় গ্রন্থের প্রথম ভাগে বৈষ্ণবধৰ্ম্মাশ্রিত এই অভিনব সম্প্রদায়ের বিবরণ বিবৃত হইয়াছে। মাছুলিয়া এই সম্প্রদায়ের আদি স্থান, দ্বিতীয় স্থান জলসুখা, তৃতীয় ও প্রধান স্থান বিথঙ্গল । তদ্ব্যতীত ঢাকা জেলার ফরিদাবাদ চতুর্থ ও শেষ স্থান। আরও আটটি স্থানে এই সম্প্রদায়ের আখড়া স্থাপিত হয়, ইহার ময়মনসিংহের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত ।