পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড তাকাইয়া নক্ষত্রে কি একটা চিহ্ন দর্শনে তিনি বলিয়াছিলেন যে, আগামী প্রাতে একটা বিষম ঘটনা সজ্ঞাটিত হইবে। পরদিন প্রাতে তাহাকে আর জীবিত পাওয়া গেল না। হঠাৎ তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন! ভবিষ্যদ্বাণী ফলিয়া গেল,-প্রাতেই এই বিষম ঘটনা সজঘটিত হইল। সেই সময় সুবেশধারী এক অপরিচিত ফকীর উপস্থিত হইয়া শবধৌত করিবার জন্য অনুমতি চাহিল। সে অনুমতি প্রাপ্তে শবটি সুন্দর রূপে ধৌত ও আতরসিক্ত করিয়াই প্রস্থান করিয়াছিল। কাজিসাহেবের পুত্র জীবিত আছেন। কাজি সাহেবের জ্ঞাতি সম্পর্কিত ভ্রাতা সদর-উল-হাসন প্রথমে লস্করপুরের মুন্সেফ প্রাপ্ত হন। সদরুল হাসনের নামোল্লেখ পূৰ্ব্বাংশে করা গিয়াছে; এ বংশে তিনি এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন বলিয়া জ্যেষ্ঠ সহোদরের জ্যেষ্ঠপুত্র সুলেমন হাসনকে পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করেন। সুলেমন হাসন বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হইলেও ভোগবিলাসপূন্য ছিলেন; সৰ্ব্বদা ঈশ্বর-চিন্তায় বিব্রত থাকিতেন। বাড়ীতে দালান-কোঠা বিস্তর ছিল, কিন্তু স্বয়ং পর্ণকুটীরে বাস করিতেন। রামশ্রীর সৈয়দ বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ২য় ভাগ ষষ্ঠ অধ্যায়ে রামশ্রীর বিবরণ প্রসঙ্গে প্রসিদ্ধ মোতিওর রহমানের কীৰ্ত্তিকথা কথিত হইয়াছে; ইহার পূৰ্ব্বপুরুষ তরফের প্রসিদ্ধ সৈয়দ বংশে সমুদ্ভূত হন। ২য় ভাগের খ পরিশিষ্টে সংযোজিত বংশ তালিকায় সৈয়দ সিরাজ উদ্দীনের নাম লিখিত হইয়াছে, মুসাফির ও ফকির নামে তাহার দুই পুত্র ছিলেন । ফকিরাবাদ গ্রাম প্রতিষ্ঠাতা উক্ত সৈয়দ ফকির এই বংশের আদিপুরুষ । ফকিরের পুত্র পৌত্রাদির নাম পরিশিষ্টে লিখিত হইবে ৫ ফকিরের অতিবৃদ্ধ প্রপৌত্রের নাম সৈয়দ সালেহ বা সুলেমান শাহ। রঘুনন্দন পৰ্ব্বতের পার্শ্বে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে লাইনের পূৰ্ব্বে "সুলেমান শাহের দরগা” নামক স্থানে ইহার কবর আছে; ইনি প্রসিদ্ধ কুতুব-উল-আউলিয়ার সমসাময়িক ব্যক্তি ছিলেন । সৈয়দ সালেহের পুত্রের নাম গৌহার, তাহার পুত্রের নাম সৈয়দ সিরাজ উদ্দীন (২য়), ইনি লালঠাকুর নামে খ্যাত হন । সিরাজ উদ্দীন (২য়) পরম সাধু পুরুষ ছিলেন, তিনি তরফ হইতে উচাইল চলিয়া যান, ও তথায় বিবাহ করিয়া বাস করেন; তিনি অলাবু (লাউ) নিৰ্ম্মিত বাদ্যযন্ত্রযোগে সদা পরমার্থ সঙ্গীত গান করিতেন বলিয়া সাধারণে তাহাকে লাউয়া পীর নামে অভিহিত করিত; তাহার সমাধিস্থান “লাউয়া পীরের দরগা" নামে কথিত হইয়া থাকে। এই মহাত্মার পুত্রের নাম আব্দুল রহমান, ইনি নরপতির শাহ আবুল হাসন প্রভৃতির ভগ্নীকে বিবাহ করিয়া প্রচুর সম্পত্তি প্রাপ্ত হন ও তথায় "আব্দুল রহমানপুর" নামক গ্রাম স্থাপন করেন; চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কালে উহা গদাহাসন নগরের ৩০নং তালুকে পরিণত হয়। তিনি উচাইলের শঙ্করপাশা নামক স্থানে সাত হাল ভূমি ব্যাপিয়া (খানেবাড়ী সহ) এক বৃহৎ বাটিকা প্রস্তুত করিয়াছিলেন। এরূপ বৃহৎ বাটী বাণিয়াচঙ্গ ব্যতীত অন্যত্র দৃষ্ট হয় না। বিখ্যাত মোতিওর রহমান ইহার পুত্র। সেই সময়ে লস্করপুরে বাদশাহী তহশীল কাছারী ছিল, মোতিওর রহমান সেই কাছারীর কাৰ্য্যভার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন ও কাজের সুবিধার জন্য রামশ্রীতে এক বাটিকা নিৰ্ম্মাণ করিয়া ৪. ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৫ম অধ্যায়ে । ৫. দ পরিশিষ্টের সংযোজিত বংশ তালিকা দ্রষ্টব্য ।