পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম অধ্যায় : মোসলমান বংশ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৪৫ শাহফতের নামে ফতেপুর মৌজার নাম হয়। শাহফতের কনিষ্ঠ ভ্রাতার নাম শাহ শাদউল্লা, তৎপুত্র রহমত উল্লার, ইহার পুত্র ওয়াহেদ আলী ওরফে মধুমিয়া, নিজ নামে মধুপুর নামক গ্রাম স্থাপন করেন। মধুমিয়ার প্রপৌত্রগণ জীবিত আছেন। পরগণা-নুরুল হাসন নগর পৈলের সৈয়দ বংশে শাহ নুরি নামে এক বিখ্যাত ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন, তিনিই “নুরুল হাসন নগর" পরগণা নিজ নামে খারিজ করেন বলিয়া কেহ কেহ বলেন; শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ২য় খণ্ডের ৫ম অধ্যায়ে পৈল-বংশ বিবরণে তাহা বলা হয়। কিন্তু মতান্তরে নুরুল হাসন নামক অন্য এক ব্যক্তি আপন নামে এই নূতন পরগণা খারিজ করিয়া আনিয়াছিলেন। এই শেষোক্ত মতটিই অনেকের মতে বিশ্বাসযোগ্য । পরগণা তরফের তিতারকোণা গ্রামবাসী শাহ বাদখার পুত্র মুল্লা মুসা বিদ্যা ও প্রতিভাবলে খলিলুর রহমান, ও হবিবুর রহমান। তন্মধ্য জ্যেষ্ঠ নুরুল হাসন পিতার চেষ্টায় নিজনামে একটি পৃথক পরগণা তরফ হইতে খারিজ করিয়া লইতে সমর্থ হইয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। উক্ত ক্ষুদ্রতম পরগণায় বৰ্ত্তমানে ৭৮৩/০ হাল মাত্র ভূমি আছে। ইহার অপর দুই ভ্রাতার নামে খলিলপুর ও হবিবপুর গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়। হবিবুর পুত্রের নাম গোলাম মোস্তফা, ইহার মিসির মিয়া নামে এক পুত্র হয়; মিসির অতি নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক ছিলেন। কথিত আছে যে তাহার অন্দর মহলে একটি গভীর কূপ ছিল; মিসির ক্রোধের উত্তেজনায় সামান্য দোষে মনুষ্য হত্যা করিয়া সেই কূপে নিক্ষেপ করিতেন। এই নিষ্ঠুর কঠোর দণ্ড স্ত্রীলোকের উপরেই অধিক মাত্রায পতিত হইত। কিন্তু তাহার পাপের শাস্তি অতি শীঘ্রই হইয়াছিলেন, বিবিধরোগে পীড়িত হইয়া যৌবনেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন, তাহার সম্পত্তি সেই সময় ঢাকায় নীলাম হইয়া গিয়াছিল। দৌলত পুরের চৌধুরীবর্গ আনন্দপুরের প্রতিষ্ঠাতা প্রসিদ্ধ আনন্দ রায়ের এক বংশীয় বলিয়া কথিত আছে। কারণান্তরে তাহারা মোসলমান ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিয়াছিলেন । আনন্দরায়ের বংশধরবর্গ বৰ্ত্তমানে হবিগঞ্জের বোলা গ্রামে বাস করিতেছেন। পরগণা-বাণিয়াচঙ্গ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ২য় ভাগ ৩য় খণ্ডের উপসংহারে বাণিয়াচঙ্গের "মৌলবী বাড়ীর" প্রসঙ্গে মৌলবী ওবেদুল হোসেনের কথা বলা গিয়াছে। ওবেদুল হোসেন হায়দরাবাদের নিজাম বাহাদুরের পুত্রদ্বয়ের শিক্ষক ছিলেন, ও তদীয় “তোষাখানা" বখশিশ পাইয়া তিনি বহু মণিমাণিক্যের অধিকারী হন ও সেই ধন রত্ন সহ দেশে আগমন করেন। ইহার পুত্রের নাম মৌলবী মাকিদুল হোসেন । রামশ্রীর সৈয়দ বংশীয় রজাওর রহমানের প্রথমা কন্যা নাবেদা বাণুর সহিত মাকিদুল হোসেনের বিবাহ স্থির হয়। আড়ম্বরের হিসাবে এই বিবাহ একটি স্মৰ্ত্তব্য ঘটনা। পুত্রের বিবাহে ওবেদুল হোসেন বহু অর্থব্যয় ও মহা আড়ম্বর করিয়াছিলেন। ব্যয়ের পরিমাণ লক্ষ মুদ্রা নিৰ্দ্ধারিত হইয়াছিল, কিন্তু ইহাতে ব্যয় সংকুলান হয় নাই। কন্যা পক্ষেও ব্যয়ের মাত্রা এইরূপই ছিল এবং তাহা সংকুলানের জন্য রামশ্রীর কতক ভূসম্পত্তি বিক্রয় করিতে হইয়াছিল। যৌতুক