পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড মধ্যে মূল্যবান বসনভূষণ পরিহিত বিংশতি ভূত্য-দম্পতি দান করা হইয়াছিল। দুঃখের বিষয় এ বংশের অবস্থা মধ্যযুগে হীন হইয়া, অর্থের অস্থায়ীত্বের উদাহরণ দিতেছিল। সম্প্রতি এই বাড়ীর একজন ইংরেজী শিক্ষিত ব্যক্তি সবরেজিষ্টার পদে আসীন আছেন। বাণিয়াচঙ্গের সৈয়দ বংশীয়গণ তরফের সৈয়দ বংশের একটি উপশাখা। সৈয়দ শাহ এনায়েত নামক একব্যক্তি ভ্রাতৃবর্গের সহিত বিবাদক্রমে বাণিয়াচঙ্গের দেওয়ান উমেদরজার১৯ সময়ে বাণিয়াচঙ্গে আসিয়া বাস করেন। উমেদরজার পুত্র দেওয়ান আলমরজা, এনায়েত-পুত্র শাহ হোসেন উল্লাকে কতক নিষ্কর ভূমি “মদতমাস" স্বরূপ দান করিয়াছিলেন। শাহ হোসেন উল্লার পুত্রের নাম শাহ মিয়াজান। ইহার পুত্র সন্তান হয় নাই, মাসনী বিবি নামী একটি কন্যা ছিল। পশ্চিমাঞ্চল হইতে আগত ও ময়মনসিংহে উপনিবিষ্ট মেহেদিজ্জমা নামে একব্যক্তি জলসুখা আগমন করিয়াছিলেন, তিনিই এই কন্যার পাণিগ্রহণ করেন। এনায়েতের বংশ নাই, দৌহিত্র বংশীয়েরা জলসুখায় বাস করিতেছেন ও বাণিয়াচঙ্গে মাতামহের সম্পত্তির অধিকার প্রাপ্ত হইয়াছেন। বাণিয়াচঙ্গেও সৈয়দবংশীয় মোসলমান আছেন পরগণা-জলসুখা ইতিপূৰ্ব্বে জলসুখার দাসবংশ-বৃত্তান্ত প্রসঙ্গে গঙ্গানারায়ণের অধিকৃত তত্ৰত্য ১নং তালুকের উল্লেখ করা হইয়াছে; জলসুখার ২নং তালুক যে বংশের অধীনে ছিল, এস্থলে তাহারই উল্লেখ করা যাইতেছে। ২নং তালুকের অধিকারীর পিতৃপরিচয় সম্বন্ধে এইমাত্র জানা যায় যে, মদিনা হইতে পিতাপুত্র দুই ব্যক্তি নিজ ভাগ্য পরীক্ষার্থ একদা হিন্দুস্থানে আগমন করিয়াছিলেন; সৰ্ব্বসাধারণে পিতা নিকড়ি আসোয়ারি এবং পুত্র দুকড়ি আসোয়ারি নামে কথিত হইতেন। জলসুখানে তৎকালে একটি নবাবি তহশীল কাছারী ছিল, দুকড়ি আসোয়ারির পুত্র পীর মোহাম্মদ মুর্শিদাবাদ হইতে উক্ত কাছারীতে প্রেরিত হইয়াছিলেন । জলসুখার তদানীন্তন অধিকারী গঙ্গানারায়ণ একদা রাজস্ব বাকীর দায়ে পড়িয়াছিলেন। যে প্রদত্ত হইত; নবাবের পক্ষে, কাছারীর কৰ্ম্মচারী পীর মোহাম্মদ, গঙ্গানারায়ণকে ধৃত করেন ও তাহাকে নবাবসদনে প্রেরণ করিতে উদ্যোগ করেন । গঙ্গানারায়ণ উপায়ান্তর রহিত হইয়া তাহাকে ছাড়িয়া দেওয়ার জন্য পঞ্চ সহস্র মুদ্রা পীর মোহাম্মদকে দিতে চাহিলেন; পীর মোহাম্মদ অনেকটা নম্র ভাব ধারণ করিলেন বটে কিন্তু তাহাকে ছাড়িলেন না; তখন অগত্যা গঙ্গানারায়ণ নিজ তালুক হইতে তাহাকে চতুর্থাংশ ছাড়িয়া দিতে স্বীকৃত হইলেন। পীর মোহাম্মদ বহু মূল্য সম্পত্তিপ্রাপ্তির লোভ ত্যাগ করিতে পারিলেন না, তাহাকে ছাড়িয়া দিলেন। গঙ্গানারায়ণ বিমুক্ত হইয়া স্বীয় অঙ্গীকার পালনে ক্ৰটী করিলেন না। পীর মোহাম্মদের প্রাপ্ত সম্পত্তি পরে “২নং তাং পীর মোহাম্মদ নামে খ্যাত হইল।”২০ এই বংশে পীর মোহাম্মদের পরেও অনেক উপযুক্ত ব্যক্তি জনিয়াছিলেন, কিন্তু এক বৎসর ভীষণ বিসূচিকা ব্যাধিতে বংশ বিলোপের উপক্রম হয়। তাহার পর হইতেই ইহারা দীন দশায় পতিত হইয়াছেন; এক্ষণে ক্ষয়াবিশিষ্ট সম্পত্তির আয় অতি সামান্যই রহিয়াছে। ১৯. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২য় ভাগ ৩য় খণ্ড ৩য় অধ্যায়ে বাণিয়াচঙ্গের দেওয়ান বংশকথা বিবৃত হইয়াছে। ২০. পীর মোহাম্মদের ক্ষুদ্র বংশ তালিকা এইঃ