পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-পঞ্চম খণ্ড আগমন করেন ও তত্ৰত্য দাসপাড়াবাসী আচাৰ্য্য পদবি বিশিষ্ট শাণ্ডিল্য গোত্রজ জনৈক ব্রাহ্মণের একটি লাবণ্যবতী কন্যার পাণি গ্রহণ পূৰ্ব্বক সেই স্থানবাসী হন, ইহার পুত্রের নাম দুর্গাপ্রসাদ; দুর্গাপ্রসাদের চারি পুত্র হয়, তন্মধ্যে অনন্তরাম ও যদুনাথ বংশপ্ৰবৰ্ত্তক ছিলেন। যদুনাথ আতুয়াজান পরগণার কাঠালকাইড় গ্রামে কতক ভূমি ক্রয় করিয়া আপন স্ত্রী ও পুত্রদ্বয় সহ তথায় আগমন করেন। তদবধি যদুনাথের বংশীয়গণ সেই স্থানবাসী। তাহার ভ্রাতৃবংশীয়গণ পূৰ্ব্বস্থানবাসী। সেই বংশজাত শ্ৰীযুত রোহিনীনাথ ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় হইতে এই বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। পরগণা-হাউলি সোণাইতা গর্গ গোত্রীয় নীলাম্বর ভট্টাচাৰ্য্য রাঢ়দেশ হইতে হাউলি সোণাইতা পরগণার অন্তর্গত একটি স্থানে আসিয়া বাস করেন; তাহার বসতি জন্য উক্ত স্থান “রাঢ়ীগাও" নামে খ্যাত হয়। কিছুকাল তথায় বাস করার পর তিনি ঐ স্থান পরিত্যাগ করিয়া সন্নিকটবৰ্ত্ত বুলিয়া নামক বিলের ধারে একটি নূতন বাড়ী প্রস্তুত ক্রমে তথায় চলিয়া যান। ক্রমে সেই স্থানে একটি ক্ষুদ্র গ্রামের পত্তন হয় ও উক্ত ব্রাহ্মণের বসতি জন্য সেই নূতন গ্রাম "ব্রাহ্মণ বুলিয়া" নাম প্রাপ্ত হয়। নীলাম্বরের শ্রীপতি ও ভীম নামে দুই পুত্র ছিলেন। শ্রীপতির বংশধর মহেশ ভট্টাচাৰ্য্য দশসনা বন্দোবস্তের সময় বৰ্ত্তমান ছিলেন, তিনি পূৰ্ব্ববৰ্ত্তীর প্রাপ্ত ভূমি নিজ নামে বন্দোবস্ত লইয়াছিলেন এবং চৌধুরাই প্রাপ্ত হন। তিনি অতি দয়ালু ব্যক্তি ছিলেন, কুরুয়ার জনৈক নিরাশ্রয় ব্রাহ্মণ-কুমারকে তিনি নিজগৃহে আশ্রয় দান করেন ও বিবাহ দিয়া ভরণ পোষণের জন্য কতক ভূমি ও ভিন্ন বাড়ী করিয়া দিয়াছিলেন; ইহার বংশীয়গণ অদ্যপি তথায় আছেন। জগদীশ ও রামরুদ্র নামে তাহার দুই প্রপৌত্র ছিলেন; তন্মধ্যে রামভদ্রের কিশোর নারায়ণ, রায়কৃষ্ণ ও গোপালকৃষ্ণ নামে তিন প্রপৌত্র ছিলেন; জ্যেষ্ঠ কিশোর নারায়ণের পুত্র গোপালকৃষ্ণ, ইহার পুত্র শ্ৰীযুত গোকুল চৌধুরী স্ববংশের একটি বিবরণ আমাদিগকে প্রদান করিয়াছেন। নীলাম্বরের দ্বিতীয় পুত্র ভীমের বংশধর মধুসূদন বাচস্পতি অতি সদাচারী ও ধৰ্ম্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। শ্রীহট্টের নবাব আবুল হাসন খা বাহাদুর এক সনদে (নং ৩৯৬) কৌড়িয়া হইতে তাহাকে পৌণে দশহাল ও হাউলি সোণাইতা হইতে পাঁচ হাল মোট ১৪A৬ ভূমি মদতমাস স্বরূপ প্রদান করেন। ১১৮০ সালে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হইলে উক্ত ভূমি তাহার পুত্র ভবানীপ্রসাদ ও কালিকা প্রসাদ “তছরূপ" করেন। সতী প্রভাবতী মধুসূদন ভট্টাচার্যের স্ত্রী প্রভাবতী দেবী পতির মৃত্যুর পর “সহমরণ" গমন করিতে ইচ্ছা করেন। পুত্ৰগণের ক্ৰন্দন ও প্রতিবেশিগণের নিষেধ তাঁহাকে প্রতিনিবৃত্ত করিতে পারে নাই; তখন উভয়ের জন্য চিতা প্রস্তুত হয়, বহুলোক এই “সহমরণ" দর্শনে আগমন করিয়াছিল, প্রভাবতী মৃতপতির পদধূলি লইয়া হাসিতে হাসিতে চিতারোহণ করিলে, সতীর জয়ধ্বনিতে চতুর্দিক পূর্ণ হইয়াছিল। কালিকা প্রসাদের কুলচন্দ্র ও কৃষ্ণকিঙ্কর নামে দুই পুত্র হয়, কৃষ্ণকিঙ্কর ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়া ন্যায়বাগীশ উপাধি গ্রহণ করেন; কুলচন্দ্রের পৌত্র শ্ৰীযুত সূৰ্য্যকুমার ভট্টাচাৰ্য্য হইতে এই বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে।