পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় : কায়স্থাদি বংশকথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৬১ বংশীয়গণ অধিকারপূৰ্ব্বক হবিব খার বশ্যতা স্বীকার করেন, তাহাতে তাহদের অধিকৃত ভূমি তাহাদেরই থাকিয়া যায়। দশসনা বন্দোবস্তের সময় উক্ত ভূমিই ১নং হইতে ৭নং এবং ১৭নং হইতে ২৫নং পৰ্য্যন্ত ষোলটি বিভিন্ন তালুকে চিহ্নিত হইয়া এই বংশীয় ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির নামে বন্দোবস্ত হইয়াছিল। এই বংশে অনেক প্রধান পুরুষের উদ্ভব হয়।৬ তাহাদের বিষয় অতি অল্পই অবগত হওয়া যায়। দশসনা বন্দোবস্তের পূৰ্ব্বে এই বংশে জয়চন্দ্র চৌধুরী এক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন, ইহার পাচ পুত্র ও সাতটি কন্যা ছিল ৭ এই পঞ্চপুত্রই ২নং হইতে ৬নং পৰ্য্যন্ত তালুকের অধিকারী ছিলেন;-ইহাদের নামেই সেই তালুকগুলির নাম হয় ৮ - সন্ন্যাসীর কথা এই পঞ্চভ্রাতার মধ্যে প্রাণবল্লভ চৌধুরী পরম সাধক ব্যক্তি ছিলেন। একদা পাঠখুরা বাজারের সন্নিকটে এক সন্ন্যাসী আগমন করেন। ইহা শুনিয়া প্রাণবল্লভ তথায় গিয়া দেখিতে পাইলেন যে, সন্ন্যাসী সেই নিৰ্জ্জন স্থানের এক বৃক্ষশাখে আপন পদদ্বয় বাধিয়া হেট শীর্ষে নিম্নের প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে আহুতি প্রদান করিতেছেন। গুপ্ত সাধক প্রাণবল্লভ বাহ্যাড়ম্বর ভাল বাসিতেন না। সন্ন্যাসীকে প্রকাশ্যে ঈদৃশ সাধন-প্রক্রিয়া প্রকাশ করিতে দেখিয়া তিনি বিক্ষিত কি বিগলিত হইলেন না, বরং বিতুষ্ট ও কিঞ্চিৎ বিচলিত হইলেন এবং আবেগভরে বলিয়া উঠিলেন,-“বাদুড়কা মাফিক লটকা হায়!” সন্ন্যাসীর চক্ষু হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বহির্গত হইল, সন্ন্যাসী কোন কথা বলিলেন না; একটিবার মাত্র রোষ-কষায়িত নেত্রে চাহিয়াই নিজকাৰ্য্যে পুনঃ প্রবৃত্ত হইলেন। সন্ন্যাসীর দৃষ্টিমাত্র প্রাণবল্লভের অঙ্গে লোহিত বর্ণের বহু চক্র চিহ্ন দেখা দিল। তিনি নিজাঙ্গে কুষ্ঠ ব্যাধির প্রকাশ হইতেছে দেখিয়া তৎক্ষণাৎ সেই স্থান ত্যাগ করিলেন ও বাড়ীতে আসিয়া দেবগৃহে প্রবেশ করিলেন। সকলকে নিষেধ করিয়া দিলেন যে, তাহার আদেশ ব্যতীত কেহ যেন দ্বার না খুলে। সেদিন গেল, তাহার পরদিনও অতীত হইল, প্রাণকৃষ্ণ দ্বার খুলিলেন না তৃতীয় দিনে তিনি সেই গৃহ হইতে বাহির হইলেন; তখন দেখা গেল যে, তাহার অঙ্গ পূৰ্ব্ববৎ সুন্দরই আছে, কুষ্ঠরোগের রেখা মাত্রও দেখা যায় না। তিন দিন তিনি গৃহমধ্যে কি প্রক্রিয়া করিয়াছিলেন, কি ঔষধেই বা অঙ্গের রক্তবর্ণ চক্ৰচিহ্নগুলি মিলাইয়া গিয়াছিল, তাহা কেহ জানিতে পারে নাই। তিনি নিরাময় হইয়া পরে একদিন কিছু গাজা লইয়া সেই সন্ন্যাসীর সমীপে গমন করিয়াছিলেন; এবার সন্ন্যাসী সম্মান সহকারে তাহাকে সন্নিকটে যাইতে ইঙ্গিত করেন ও তৎসহ অনেক আলাপ করেন। এই ঘটনার পরে সন্ন্যাসী তথা হইতে চলিয়া গিয়াছিলেন। প্রাণবল্লভের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এক সময় কাশী ছিলেন, তখন প্রাণবল্লভ একদা দেবগৃহ হইতে বহির্গত হইয়া সকলকে বলেন-“দাদার কাশীপ্রাপ্তি ঘটিয়াছে, অশৌচ ধারণ কর।” তাহার এই বাক্য যথার্থই হইয়াছিল; কাশীর পত্র প্রাপ্তে সকলে প্রাণ বল্লভের প্রভাব বুঝিতে পারেন ও ৫. ৮নং হইতে ১৬নং পর্যন্ত তালুকগুলি রাজা বিজয় সিংহের বংশধরেরা বন্দোবস্ত গ্রহণ করেন। ৬. পরবর্তী ফ পরিশিষ্টে ইহাদের বংশ তালিকা প্রদত্ত হইবে । ৭. “জয়চন্দ্র সুতাঃপঞ্চ সানন্দো বিজয়স্তথা। প্রাণদীপ সদানন্দ এতেপঞ্চ সহোদরাঃ দয়মন্তী প্রভাবতী কমলা অমরাবতী । অঘোরা স্বরূপা চৈব মালতী সপ্ত ভগ্নিকাঃ।" ৮. ফ পরিশিষ্টের বংশতালিকায় বন্দোবস্তকারিগণের নামে পার্থের তালুকের সংখ্যা দেওয়া যাইবে।