পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা ইতিহাসের সত্যানুসন্ধান একটি কঠিন কাজ এবং দুরূহ দায়িত্ব। সাধারণ লেখকের পক্ষে এ ধরনের ঐতিহাসিকের দায়িত্ব পালন করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু প্রায় একশত বৎসর পূর্বে শ্রী অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি সিলেটের বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন সময়ের ইতিহাসের তথ্যগুলোকে একজন গবেষকের শ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে চয়ন করেছেন । সিলেটের অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে তার নিজস্ব সত্য ও তথ্যের আলোকে আলোকিত করেছেন। একজন লেখক ও গবেষক হিসেবে তিনি যে পরিশ্রম ও প্রতিভার পরিচয় রেখে গেছেন আজীবন তা প্রশংসার দাবিদার । 轟 সিলেট একটি প্রাচীন জনপদের নাম । সিলেট অঞ্চলের লোকজন প্রাচীনকালে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল । সর্বশেষ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এম এ জি ওসমানী রণক্ষেত্রে সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন । সিলেটে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৪০ সালে ভ্রমণ করে— এই অঞ্চলকে শ্ৰীক্ষেত্র বলে বর্ণনা করেছেন। ১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুব সিলেট ভ্রমণকালে এই অঞ্চলকে শ্রীভূমি আখ্যা দিয়েছেন। প্রকৃতির নিজের হাতে গড়া অঞ্চলটির শ্রী এখনও অন্তহিত হয়নি। বরং আরও শ্রীময়ী হয়ে উঠেছে। সারা বিশ্বে সিলেটের মানুষ বাংলার গৌরবময় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি, শ্রুতি, স্মৃতি, দলিল, দস্তাবেজ, প্রাচীন শিলালিপি, ভাস্কর্য ও লিপিবদ্ধ বিবরণ সিলেটের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসে লুকিয়ে আছে। লুকিয়ে থাকা প্রাচীন সভ্যতাকে শ্রী অচ্যুত চরণ চৌধুরী আমাদের জনসম্মুখে হাজির করেছেন। শুধুমাত্র এই একটি কারণে তিনি আমাদের কাছে অমর হয়ে আছেন। এখানে তার গ্রন্থের সার্থকতা। আমি দুই যুগ ধরে ইতিহাসের তথ্য সংগ্ৰহ করার কাজে নিয়োজিত। আমার লিখিত রাজনগরের ইতিবৃত্ত, মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস ও সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত গ্রন্থসমূহ প্রকাশিত হয়েছে। অচিরেই উভয় বাংলা ইতিহাস নিয়ে লিখিত বাংলার ইতিবৃত্ত গ্রন্থ প্রকাশের পথে । ইদানীং অনেক লেখক ও প্রকাশক ইতিহাস গবেষণা ও প্রকাশনার কাজে নিয়োজিত হয়েছেন । তা বাঙালিদের জন্য আনন্দের কথা। কারণ বাঙালিরা নিজের ইতিহাস সাধারণত না পড়ে পাশ্চাত্য ইতিহাসের দিকে ঝুঁকে পড়ে । এদিক দিয়ে এটা গর্বের কথা । বিশেষ করে সিলেটের আকর গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত শ্ৰী অচ্যুত চরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি লিখিত তিন খণ্ডে শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত গ্রন্থের পুনঃপ্রকাশনার দায়িত্ব জনাব সিকদার আবুল বাশার সাহেব গ্রহণ করে যে ঐতিহাসিক কার্য সম্পাদন করতে যাচ্ছেন তার জন্য যে কোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রেমিক লোক হিসেবে তাকে অভিনন্দন জানানো উচিত । জনাব সিকদার সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে গ্রন্থটি পুনঃপ্রকাশের জন্য ইতিহাসবিদদের পক্ষ থেকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। গ্রন্থটি বাংলার ইতিহাস সাহিত্যে মূল্যবান সংযোজন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শেকড় সন্ধানী বাঙালি মাত্রেই গ্রন্থটি সংগ্রহে রাখা উচিত। নতুন সংস্করণের বহুল প্রচার কামনা করছি।