পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ মধ্যেই অদ্ভুত স্মৃতিশক্তিপ্রভাবে সকলকে চমকিত করিলেন। তিনি একবার মাত্র যাহা অধ্যয়ন করিতেন, তাহা আর ভুলিতেন না, এজন্য সকলে তাহাকে "শ্রুতিধর” বলিত। কিছুদিন মধ্যেই কমলাক্ষ বেদশাস্ত্রে উপযুক্ততা লাভ করিলে অধ্যাপক তাহাকে “বেদপঞ্চানন” উপাধি দিয়া বিদায় দিলেন । এই সময় কুবেরাচার্য্যের গৃহে মাধবেন্দ্র পুরী নামক পরম পণ্ডিত এক যতী অতিথি রূপে আগমন করেন। তৎকালে আর্য্যাবৰ্ত্তে জ্ঞান-চৰ্চ্চার বাহুল্য লক্ষিত হইত, ভক্তির আলোচনা বড় ছিল না, মাধবেন্দ্রই এদেশে ভক্তির বীজ স্থাপন করেন। অদ্বৈত গৃহাগত এই মাধবেন্দ্র পুরীর নিকটে বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষিত হন। তীর্থটান অদ্বৈতের দীক্ষা গ্রহণের কিছুকাল পরে, নবতি বর্ষ বয়সে কুবের দেহত্যাগ করিলেন। অদ্বৈতজননী পতিব্ৰতা নাভাদেবীর প্রাণপাখী দেহ-পিঞ্জর ছাড়িয়া তৎক্ষণাৎ পতির অনুসরণ করিল, পতির সঙ্গে সঙ্গেই তাহার পরলোক গমন ঘটিল। লোকে ধন্য ধন্য করিয়া এক চিতাতেই উভয়ের দেহ অগ্নিসাৎ করিল। অদ্বৈত যথারীতি পিতৃকৃত্য সমাপনান্তর পিণ্ডদানোদেশে গয়াধামে গমন করিলেন। গয়াতে বিষ্ণুপদে পিণ্ডসমর্পনান্তর তিনি তীর্থাটনে বহির্গত হইলেন। প্রথমেই তিনি রেমুণাতে গোপীনাথ দৰ্শন করিয়া নাভিগয়াতে গমন পূৰ্ব্বক পিণ্ডদান করিলেন। তথা হইতে শ্ৰীক্ষেত্রে গিয়া জগন্নাথ দৰ্শন করিলেন। জগন্নাথ দর্শনে তাহার যে অপূৰ্ব্ব ভাবোদয় হয়, বাল্যবধি যোগৈশ্বৰ্য্যশালী ও মুক্ত পুরুষ হইলেও, তাহার পক্ষেও ইহা অসাধারণ বলিয়াই বোধ হইয়াছিল। তিনি কৃষ্ণপ্রেমে অনেকক্ষণ মুর্ভূিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। সে মূৰ্চ্ছা যে ভঙ্গ হইবে, ইহা কেহই মনে করিতে পারে নাই । শ্ৰীক্ষেত্রে হইতে সেতুবন্ধ তীর্থ দর্শনোদেশে দক্ষিণ মুখে তিনি যাত্রা করেন। দক্ষিণে কাঞ্চিপুর এক প্রধান তীর্থ,৫ ইহার উত্তরাংশ শিবকাঞ্চী এবং দক্ষিণাংশ বিষ্ণুকাঞ্চী নামে খ্যাত, এতদর্শনান্তে আরও দক্ষিণদিশ্বত্তী কাবেরী—তীরে তিনি উপস্থিত হন ও কাবেরী নদীতে স্নান করিয়া দক্ষিণ মথুরা (মাদুরা) তীর্থে গমন করেন। তাহার পর অদ্বৈত সেতুবন্ধে উপনীত হন। লঙ্কা হইতে প্রত্যাবৰ্ত্তন কালে লক্ষণ ধনুর অগ্রভাগ দ্বারা সেতুর একটি স্থান ভাঙ্গিয়া দিলে, সেই স্থান ধনুতীর্থ নামে খ্যাত হয়, অদ্বৈত এস্থানেও স্নান করেন। তাহার পর তিনি রামেশ্বর শিব দর্শনে গমন করেন। রামেশ্বরে মধ্বাচারী বৈষ্ণব সন্ন্যাসীগণ সঙ্গে তাহার মিলন হয়। ইহাদের নিকট শাণ্ডিলা সূত্রে ও নারদ সূত্রে ভক্তিতত্ত্বব্যাখ্যা শ্রবণে তিনি পরম আনন্দ লাভ করেন। এই স্থানে তিনি মধ্বাচার্য্যের ভাষ্য এবং শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ করেন। অদ্বৈত "শ্রুতিধর” ছিলেন, শ্রবণ মাত্র যে কোন বিষয় আর ভুলিতেন না। তিনি তথায় কিছুদিন থাকিয়া এই শাস্ত্রগুলি কণ্ঠস্থ করিয়া লইয়াছিলেন।৬ এইস্থানে মাধবেন্দ্র পুরীর সহিত তাহার পুনৰ্ব্বার সম্মিলন হয়। এই স্থান হইতে অদ্বৈত দণ্ডকারণ্যে (মহারাষ্ট্র দেশে) গমন করেন, তিনি নাসিক প্রভৃতি তদেশীয় বহুতীর্থ দর্শনান্তে দ্বারকাধামে উপস্থিত হন। দ্বারকায় লক্ষ্মী-বাসুদেব দর্শন পূৰ্ব্বক তিনি প্রবাস ক্ষেত্রে গমন করেন; তথা হইতে পুষ্কর তীর্থ ও পুষ্কর হইতে কুরুক্ষেত্রে এবং তদনন্তর তদুত্তরদিন্বত্তী হরিদ্ধারে গমন করেন । হরিদ্বার হইতে বদরিকাশ্রমে উপস্থিত হইয়া নরনারায়ণ দর্শন করেন। ৫. ইহা দাক্ষিণাত্যে চেঙ্গলপুত জেলায় অবস্থিত, কাঞ্চিপুরের বর্তমান নাম কাঞ্জিভেরাম। ৬. “শুনি মাত্র সব প্রভু কণ্ঠস্থ করিলা । তাহা দেখি সাধুগণ বিস্ময় মানিলা । -অদ্বৈত প্রকাশ