পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৯ বদরিকাশ্ৰম হইতে অদ্বৈত গণ্ডকীমানে গমন করিয়াছিলেন, এই নদীর অপর নাম চক্ৰনদী; ইহা মুক্তিনাথ পৰ্ব্বত হইতে নির্গত হইয়া হরিহর ছত্রের নিকটে গঙ্গার সহিত মিলিতা হইয়াছে। এই নদীস্থিত শিলাই শালগ্রামচক্র নামে খ্যাত। অদ্বৈত তথা হইতে একটি সুলক্ষণ সম্পন্ন শিলা লইয়া মিথিলায় আগমন করেন। সীতা দেবীর জন্মস্থান দর্শনে তাহার মনে নানা কথা জাগিতে লাগিল । কবি-সম্মিলন i এমন সময়ে হঠাৎ তিনি শুনিতে পাইলেন যে অদূরে কাহারও কিন্নর নিন্দিত কণ্ঠে করুণ কৃষ্ণ-লীলা গীতি ধ্বনি উত্থিত হইতেছে, মনঃপ্রাণ মুগ্ধকর সেই সুমধুর বিরহ-সঙ্গীত শ্রবণে অদ্বৈত অস্থির হইয়া সঙ্গীত-ধ্বনি লক্ষ্য করিয়া চলিলেন। এক নবীন বটবৃক্ষ মূলে ছায়া-তলে উপবিষ্ট একবৃদ্ধ ব্রাহ্মণ ভাবভরে গান গাইতে ছিলেন। সে গানের কি মোহিনী শক্তি অদ্বৈত দৌড়িয়া গিয়া গায়ককে আলিঙ্গন করিলেন। অদ্বৈত বলিলেন—“দ্বিজবর! এ অপূৰ্ব্ব সঙ্গীত কাহার রচিত? আপনিই কি লীলা সাগরে নিমগ্ন হইয়া এ রত্ন উদ্ধার করিয়াছেন? এমন সঙ্গীত আর কোথায়ও শুনি নাই!” এই যুবকের আলিঙ্গনে বৃদ্ধ গায়কের দেহ দিয়া যেন একটা বিদ্যুৎ প্রবাহ বহিয়া গেল, দেহ কম্পিত হইয়া উঠিল; গায়ক বুঝিলেন যে, এ যুবক সামান্য নহেন; নতুবা তাহার স্পর্শে তাহার মনে সাত্ত্বিক ভাবোদয় কেন হইবে? তিনি যুবকের প্রতি আগ্রহ সহকারে চাহিলেন, আগ্রহ সহকারে প্রত্যুত্তরে বলিলেন “মহাশয়! আমার নাম বিদ্যাপতি, মিথিলার রাজান্নপুষ্ট রাজকবি বলিয়াই খ্যাতি বটে। এই সামান্য সঙ্গীত গুলি আমারই বাতুলতার পরিচায়ক ॥৭ এইরূপে অদ্বৈতের বিদ্যাপতির সহিত সাক্ষাৎ ও পরিচয় হইয়াছিল। কবি বিদ্যাপতি অতি দীর্ঘজীবী ব্যক্তি ছিলেন।৮ বিজয় পুরীর প্রসঙ্গ অদ্বৈত মিথিলা হইতে অযোধ্যা ধামে গমন করেন, তার পরে কাশীধামে তাহার সম্মিলন ঘটে; এই সকল সাধু সন্ন্যাসীর মধ্যে একজনের নাম বিজয়পুরী। বিজয় পুরীর পূৰ্ব্বনিবাস শ্রীহট্টান্তর্গত লাউড়ে ছিল । অদ্বৈতের সহিত তাহার কিঞ্চিৎ ব্যবহারিক সম্বন্ধ ছিল, পারমার্থিক সম্পর্কও ছিল। ইনি অদ্বৈত-জননী লাভাদেবীর পিতৃ-বংশের পুরোহিত-পুত্র ছিলেন এবং লাভা ইহাকে ভ্রাতৃ সম্বোধন করিতেন। ইনি লক্ষ্মীপতি সন্ন্যাসী হইতে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন ও বিজয়পুরী নাম প্রাপ্ত হন।৯ বিজয়পুরী সন্ন্যাসী হইলেও পরম ভক্ত ছিলেন, পূৰ্ব্বোক্ত মাধবেন্দ্রপুরী ইহার সতীর্থ ৭. দ্বিজ তব কিবা নাম শুনিতে মনে হয়; কাহার রচিত এই গীত সমুদয়? রচনার মাধুৰ্য ঐছে নাহি শুমো আর; তায়ে স্বরালাপ হয় অতি চমৎকার। এ হেন সঙ্গিত সুধা মোরে পিয়াইয়া। মত্ত করি এ স্থানে আনিলা আকর্ষিকা৷ বিপ্র কহে মোর নাম দ্বিজ বিদ্যাপতি । রাজান্ন ভোজনে মোর বিষয়েতে মতি৷ বাতুলতা করি মুঞি রচিনু এ গীত। সার গ্রাহী সাধু তুহ তেই ইথে প্রীত" —অদ্বৈত প্রকাশ । ৮. বিদ্যাপতির প্রাপ্ত বীসপী গ্রামের দানপত্রে ২৯৩ লক্ষণাব্দ (১৪০১ খ্ৰীষ্টাব্দ) দৃষ্ট হয়। বাজা শিবসিংহের যৌবরাজ্যে থাকা কালেই ইহা প্রদত্ত হইয়াছিল। বিদ্যাপতি কৃত "দুর্গাভক্তি তরঙ্গিনী" শিবসিংহের রাজত্ব কালে (১৪৪৭-১৪৫১ খৃঃ) রচিত হয়। এই সময় মধ্যে অদ্বৈত মিথিলায় গিয়া থাকিবেন এবং তখন উভয়ের দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার খুবই সম্ভাবনা । দেখাও যায় যে অদ্বৈত বিদ্যাপতির পদ গাইতে ভালবাসিতেন। ৯. “নাভাদেবী ভাই যারে বোলে সৰ্ব্বক্ষণ । সে বিপ্র সন্ন্যাসী হৈল লক্ষীপতি স্থানে। বিজয়পুরী নাম তর সৰ্ব্বলোক শুনো"-প্রেম বিলাস ।